DMCA.com Protection Status
title="৭

ঢাকা মহানগরীর বিপর্যস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাঃট্রাফিক আইন ভাঙছেন স্বয়ং এমপিরা!

traffic02-e1405528252431মানুষের কর্মকাণ্ড যখন হয় বেপরোয়া, নিজের সুবিধার জন্য যখন অন্যের হাজারটা সমস্যা ও অসুবিধা করতে মানুষ কুণ্ঠিত হয় না তখনই প্রয়োজন হয় নিয়ন্ত্রণের। ব্যাপারটি তত্ত্বাবধায়ক যখন রাষ্ট্রযন্ত্র তখন তৈরি হয় আইন।

এতো গেল আইন প্রণয়নের বিষয়। কিন্তু বাস্তবায়ন? আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক হলেও নাগরিকরা যদি আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে গা না করেন তাহলে কিন্তু অরাজকতায় সেই আইনের পরিণতি। সাধারণ নাগরিক তো পরের কথা স্বয়ং আইনপ্রণেতারা যখন নির্বিকারে প্রকাশ্যে আইন লঙ্ঘন করেন তখন অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কি-ইবা করার থাকে!

রাজধানীর রূপসী বাংলা মোড় থেকে কাকরাইল (হেয়ার রোড) পর্যন্ত ‘উল্টোপথে প্রবেশ নিষেধ’ সম্বলিত একাধিক সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। এগুলো ঝুলিয়েছে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে দেদারসে উল্টো পথে গাড়ি চলছে। এসব গাড়ির মধ্যে

বেশিরভাগই মন্ত্রী-এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের। সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলে তাদের গাড়িগুলো। আর এ সুযোগে সাধারণ গাড়িগুলোও উল্টোপথে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

এ চিত্র শুধু রূপসী বাংলা-কাকরাইল সড়কেই নয়, পুরো রাজধানীতেই এমন বেপরোয়া গাড়িচালকের দেখা মিলবে।

trffic01 {focus_keyword} ট্রাফিক আইন ভাঙছেন এমপিরা! trffic01

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আধা ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদের স্টিকার যুক্ত ৫টি গাড়ি, মন্ত্রীর একটি, ট্রাফিক পুলিশের মোটরসাইকেল ৪টি, অ্যাম্বুলেন্স দুটি, সাধারণ প্রাইভেটকার ৪টি, পুলিশ সদস্য বহনকারী ৬ নম্বর বাস একটি এবং বেশ কিছু সাধারণ মোটর সাইকেলও উল্টো পথে চলতে দেখা যায়।

ছবি তুলতে দেখে গাড়ি থামিয়ে দেন সাধারণ প্রাইভেটকার চালক মো. জসিম উদ্দিন। কথা হয় তার সঙ্গে। উল্টো পথে গাড়ি চালানোর কারণ জানতে চাইলে জসিম বলেন, ‘একটু তাড়া আছে, আড়াইটার মধ্যে বসের অফিসে পৌঁছাতে হবে, তা না হলে চাকরি থাকবে না।’ আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যান তিনি।

এদিকে উল্টোপথ দিয়ে যত্রতত্রভাবে যানবাহন চললেও দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। উল্টোপথে গাড়ির যাওয়ার বিষয়টি নজরে আনলে তারা তাৎক্ষণিক তৎপর হয়ে ওঠেন এবং কয়েকটি গাড়ি থামিয়ে মামলাও দেন।

উল্টোপথে গাড়ি যাওয়া রোধ করতে গত ২৩ মে হেয়ার রোডে ‘প্রতিরোধক ডিভাইস’ স্থাপন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। যারা উল্টোপথে গাড়ি চালাবেন ডিভাইসের সুঁচালো কাঁটায় তাদের গাড়ির টায়ার ফুটো হবে। তবে সেই ডিভাইস সপ্তাহখানেকের মধ্যে অকেজো হয়ে গেছে। পরে এ ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি ডিএমপি।

জানা যায়, ওই ডিভাইস সচল থাকাকালীন এক মন্ত্রিপরিষদ সদস্যের গাড়ির চাকা ফুটো হয়ে যায়। এ নিয়ে সে সময় মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনার ঝড় ওঠে।

এদিকে উল্টোপথে এমপি-মন্ত্রীদের গাড়ি চললেও নীরব দর্শকের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদের। এমপি-মন্ত্রীরা আইন ভঙ্গ করলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো ছাড়া কিছুই করতে পারেন না তারা।

উল্টোপথে এমপি-মন্ত্রীদের গাড়ি বহর যাওয়ার ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, তারপরও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না হেয়ার রোডে বিশেষ ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট আতিকুর রহমান। কারণ হিসেবে তিনি দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ কে বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপিরা নিয়ম ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। কারণ আমরা ছোট লেভেলের কর্মকর্তা। তবে উল্টোপথে গাড়ি গেলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়। এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও জাতীয় সংসদের স্পিকারকে অবহিত করতে হয়।’

ট্রাফিক পুলিশ উল্টো পথে যেতে নিষেধ করলেও ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা উল্টোপথে গাড়ি চালাচ্ছেন কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্ধারিত সময়ে ডিউটিতে পৌঁছাতে হয়। পৌঁছতে না পারলে রাস্তা ক্লিয়ার করবে কারা? এ কারণে উল্টোপথে বাধ্য হয়ে যেতে হয়।’

উল্টোপথে ট্রাফিক সার্জনের মোটরসাইকেল {focus_keyword} ট্রাফিক আইন ভাঙছেন এমপিরা! traffic03

এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোল্লা তবিবুর রহমান দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘যারা উল্টো পথে গাড়ি নিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনের ১৪০ ধারায় মামলা করা হয়। মামলার পর দোষীরা ৫শ টাকা জরিমানা দিয়ে থাকেন।’

যেসব এমপি-মন্ত্রী উল্টো পথে গাড়ি চালান বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে গাড়ির নম্বর নোট করে রাখি। পরে ডিসি স্যারের কাছে জমা দেয়া হয়। ডিসি স্যার ওই সব গাড়ির নম্বরগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন।’

মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর কী হয়? তিনি বলেন, ‘ব্যবস্থা নেয়া হয় কি না সেটা বলতে পারব না। তবে যেহেতু এমপি-মন্ত্রীরা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই বিষয়টি মন্ত্রণালয় অন্যভাবে বিবেচনা করতে পারে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!