দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ সফল না হলেও হারানোর কিছু নাই, এমন একটি মানসিকতা থেকে ঈদের পর আন্দোলনে নামতে পারে বিএনপি। অপরদিকে, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী অনেকটা আগ বাড়িয়েই বিএনপির আন্দোলনের প্রতি তাদের আগ্রহ স্পষ্ট করছে।
এদিকে, যুদ্ধাপরাধের বিচার, নড়বড়ে অর্থনীতি, ভারতের সাথে বিতর্কিত সমুদ্রসীমার রায় ইত্যাদি ইস্যুতেও বেকায়দায় আছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে নামলে কোন কৌশলে বিএনপিকে আয়ত্ত্বে রাখবে আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগ কি আন্দোলন ঠেকানোর সেই পুরোন রাস্তায় হাঁটবে না কী দেখাবে নতুন কোন কারিশমা?
নতুন করে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর ফলে আন্দোলনের লক্ষ্যে বিএনপি চাঙা মনোভাবে আছে বলেই অনেকে মনে করছেন। কিন্তু নতুন কমিটিতেও উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে ঢাকা মহানগর কমিটির সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল আউয়াল মিন্টুকেও।
বলা হয়ে থাকে, এই নেতারা প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন দলের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে চলেন। তাদের এই দ্বিমুখী অবস্থানের সুযোগ নিয়ে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলন দমিয়ে দিতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, কমিটি নতুন হলেও ক্ষমতাসীন দল দশম সংসদ নির্বাচনকালের মতো করেই এবারও ঈদের পর বিএনপির আন্দোলন ধ্বসিয়ে দিতে পারে।
পর্যবেক্ষণ ও ওয়াকিবহাল সূত্রগুলোর মতামত, ২৯শে ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল করার লক্ষ্যে বিরোধী পক্ষ যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল, সেটি সরকারের হাতে পৌঁছে যায় ২৭ তারিখেই। নগর বিএনপির নেতাদের মধ্যে কে কোন এলাকায় নেতৃত্ব দেবেন, কোন দিক থেকে মিছিল আসবে, পল্টনে যেতে না দেয়া হলে বিকল্প জমায়েত কোথায় হবে – সবকিছুই জেনে যায় সরকার। সেভাবেই নেয়া হয় মোকাবেলার সব রকম ব্যবস্থা। এমনকি কর্মসূচি সফল করার দায়িত্বে থাকা নেতাদের অনেকেই নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে আন্দোলনবিমুখ করে রেখেছিলেন।
তাই বিএনপির ভেতরে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রমের পরিমাণ এতই বেশি যে, মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে অংশ নিতে ২৯ তারিখে বেগম খালেদা জিয়াকে যে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হবে না- তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। এ কারণে আগের দিনের ভিডিও বার্তায় তিনি সেটার ইঙ্গিতও দেন। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে ময়দানে কর্মসূচি সফল করার মূল নেতৃত্ব কে দেবেন তা ঠিক করা ছিল না। এছাড়া গোটা কর্মসূচির কার্যকর কোন সমন্বয়ও ছিল না। এ কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষ মিছিল নিয়ে বের হওয়ার জন্য নির্দ্দিষ্ট স্থানে জড়ো হলেও তাদের দিক-নির্দেশনা দেবার কেউ ছিল না।
একইভাবে, মফস্বলের যে হাজার হাজার মানুষ ২-৩ দিন আগেই রাজধানীতে চলে আসেন, তারা রাস্তায় ঘুরেছেন এতিমের মতো। এলোমেলো ঘুরতে থাকায় সন্দেহবশত তাদের অনেককে পুলিশ গ্রেফতার করে হাজতে নিয়ে যায়। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানগুলোতে জড়ো হন। কিন্তু তাদের অপেক্ষা করাই সার। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত তারা রাস্তায় নামেননি।
তাছাড়া দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করে হাজতে পুড়ে দিয়েও আন্দোলন দমন করেছিল সরকার। এবারও সেসব গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো পুনরজ্জীবিত করার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে সরকারের হাতে। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলা আটকে আছে। তাই আন্দোলন শুরু হলে, পুনরুজ্জীবিত হতে পারে মামলাগুলোর কার্যক্রম।
একারণেই পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একদিকে বিএনপির ভেতর অন্তর্ঘাত অন্যদিকে মামলা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আন্দোলন দমাতে অনেকটাই সফল হবে ক্ষমতাসীন দল। এর পাশাপাশি, এবার ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের মতো কোন সময়সীমা নাই সরকারের সামনে। তাই, আলোচনা ও সমঝোতার মতো সুযোগগুলো ব্যবহার করে কালক্ষেপণের সমস্ত সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতির কূটকৌশলের খুবই সরল রেখার ওপর দিয়ে সফলভাবে হেঁটে আসতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। একদিকে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান বজায় রেখেছিল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, পর্যবেক্ষকদের দাবি অনুসারে, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সমস্ত কৌশল নিয়ে তার প্রয়োগ করেছিল আওয়ামী লীগ। এইভাবে, একদিকে আন্দোলন যতদূর সম্ভব দমিয়ে রেখে একতরফা নির্বাচনের পথও পরিষ্কার করে তারা।