দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃএশিয়ান সেন্টার অফ হিউম্যান রাইটস (এসিএইচআর) নামে এশিয়ান হলেও কাজে-কর্মে ইন্ডিয়ার স্বার্থরক্ষাকারী একটি এনজিও। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দিল্লীভিত্তিক এনজিও এসিএইচআর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লবিং করছে। ইন্ডিয়ার এই এনজিওটির জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ইন্ডিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই রয়েছে ভয়ঙ্কর সকল অভিযোগ।
শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে গিয়ে ভারতের কয়েকজন সেনাসদস্য ২০০৮ সালে কঙ্গোতে একজন কঙ্গোলিজ নারীকে যৌন নিপীড়ন করেন। বিপরীতে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ইন্ডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে বেশি প্রশংসিত ও সফল।
এসিএইচআর গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ: সেন্ডিং ডেথ স্কোয়াড টু কিপ দ্য ইউএন’স পিস’ শিরোনামে একটি কথিত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানান হয়েছে।
নতুনদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এশিয়ান সেন্টার অফ হিউম্যান রাইটস নামের প্রতিষ্ঠানটির নীতি-নির্ধারকরা ভারতের নাগরিক। এছাড়া, এনজিওটির ডিরেক্টর ড. সুষমা চাকমাও একজন ভারতের নাগরিক। একতরফাভাবে ভারতের এনজিও হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নানান জাতীয় ইস্যু নিয়েও কাজ করে এই সংস্থাটি। এই সংস্থাটি মূলতঃ ইন্ডিয়ার স্বার্থরক্ষায় নানান ইস্যুতে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে চাপে রাখার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালায়।
বাংলাদেশের জাতীয়-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্ডিয়ার এনজিওগুলোর নানান অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটলেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ার প্রকাশ্য প্রচারণা এই প্রথম। ওই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষায় পাঠান সেনা সদস্যদের অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কোন রকমের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই, ইন্ডিয়ার ওই এনজিওটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ১৫টি বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ৪৬৪ জনকে আটক, ৩৭৪টি নির্যাতন, জোর করে উচ্ছেদের ২৮৫টি ঘটনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ১ হাজার ৭০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িত। একইসঙ্গে ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সন্দেহভাজন অন্তত ৭০ জনকে হেফাজতে নিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
এছাড়া ওই প্রতিবেদনে বিদ্বেষপূর্ণভাবেই র্যাবের বিরুদ্ধে উত্থিত অভিযোগগুলোও চাপান হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়,র্যাবের সদস্যরা ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ‘ক্রসফায়ারের নামে’ ৭৭৬ জনকে হত্যা করেছে। র্যাবের ২০৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৮৩ জনই সেনাবাহিনীর। ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা’ এই সেনা সদস্যদের একটি বড় অংশকে বাংলাদেশ ‘জাতিসংঘ শান্তি মিশনে’ পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যুক্ত হতে পারা যথেষ্ট লোভনীয় একটি সুযোগ, কেননা সেখানে একজন সেনা কর্মকর্তা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বাইরেও প্রতি মাসে ২ হাজার ২০০ ডলার করে পান। আর একজন সৈনিক সেখানে পান ১ হাজার ১০০ ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশে একজন সেনা কর্মকর্তার বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা (২০০ ডলারের মতো) এবং সাধারণ সৈনিক পান ৭ হাজার ৭১৭ টাকা ( ১০০ ডলার)।