DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্বে নতুন সমীকরনঃইসরাইল ধীরে ধীরে নেতৃত্বের আসনে?

 
index19 দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুবাদঃ মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদীদের ভবিষ্যৎ কি হবে তা বুঝতে চোখ বুলাতে হয় ইউরোপের কয়েক শতাব্দীর ইতিহাসের দিকে। ইহুদীরা শত শত বছর ধরে ইউরোপের নানান রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে। অবশ্য নির্যাতিত ইহুদীদের মধ্যে নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের চেতনার বিকাশ ঘটে ইউরোপেই। এই রাষ্ট্র গঠনের তাড়নাটা সৃষ্টি হয় উনবিংশ শতাব্দীতে। আরব বিশ্বের গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য এই ইতিহাসটা অনেক বেশ জরুরী। বর্তমান সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাধ্যমে আরব বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য বদলে যাচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় মধ্যপ্রাচ্যে যে শক্তির ভারসাম্য ছিল তা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন নতুন আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন এই পরিস্থিতির সূত্র পাওয়া যায় উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ইতিহাসে।

মধ্যপ্রাচ্যে উদীয়মান ও প্রতিযোগী রাষ্ট্র শক্তিগুলো পরস্পরের সাথে গাঁটছড়া বাঁধছে আবার ভাঙ্গছে। এরা আবার প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে একে অপরের সাথে ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও লিপ্ত। এত সবের কারণ একটাই, নিজস্ব প্রভাব বলয়টিকে রক্ষা করা। উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর মতোই, বর্তমান আরব বিশ্বেও যাদের দেশে নাগরিকে-নাগরিকে সংঘাতের পরিমাণ কম, তারাই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এই রাষ্ট্র-শক্তিগুলোর মধ্যে ইরান, ইসরায়েল ও তুরস্ক কখনই অটোমান সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত ছিল না। ফলে এই রাষ্ট্র তিনিটির নাগরিকদের মধ্যে জাতিয়তাবোধ অন্য রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় তীব্র। তুরস্ক এরই মধ্যে স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজস্ব উন্নয়নের পথটি আবিষ্কার করে নিয়েছে। তবে তুরস্কের এখন নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার আনার প্রয়োজন অনেক বেশি। গণতন্ত্রের উন্নয়ন, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে আরও বেশি মনযোগী হওয়ার প্রয়োজন থেকেই গেছে। তবুও আরব বিশ্বের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে দেশটি।

ইরানও কখনও অটোমান সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত ছিল না। দেশটির নাগরিকদের অধিকাংশই শিয়া মতাবলম্বী হওয়ায় তাদের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। এছাড়া এই জাতিটির শাসক হিসেবে ভুমিকা পালনের দীর্ঘ ইতিহাসও রয়েছে। ফলে ইরানের নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য রয়েছে ভিন্ন মাত্রায়। কথিত আরব বসন্তের প্রভাবে ইরানের ক্ষমতাসীনরা বিপদগ্রস্ত হলেও দেশটির নাগরিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির আশঙ্কা কম। যদিও ইরানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা বসবাস করে। এরা আরও বেশি পরিমাণ রাজনৈতিক শক্তি দাবি করে বসতে পারে। তবুও তাদের মধ্যকার জাতীয়তাবোধ অনেক গভীর থেকেই সংহত।তাই ইরানের শাসক গোষ্ঠীর পতন ঘটলেও ওই জাতিটি শক্তিশালীই থেকে যাবে। এর পাশাপাশি দেশটির রয়েছে অর্থনৈতিক শক্তি। একারণে ইরানও মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

ইরান আর তুরস্ক ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব নেওয়ার মতো আরেকটি রাষ্ট্র হলো ইসরায়েল। ইসরায়েলকে ঔপনিবেশিক শাসনামলের সৃষ্টি রাষ্ট্র হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু ইসরায়েল সম্পর্কে মানুষের এই ভাবনা ক্রমেই বদলাচ্ছে। এবং ইহুদীদের দেশপ্রেমের দৃষ্টিতেই ইসরায়েলকে চিনতে বাধ্য হবে আগামী বিশ্ব।

অটোমান সাম্রাজ্যই ছিল ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের আদি বাসস্থান। অটোমান সাম্রাজ্যের পুরোটা সময় জুড়েই ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্র থেকেই বহিষ্কৃত হতে থাকে ইহুদীরা। ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের নানান নিপীড়ন আর নির্যাতন করতে থাকে ইউরোপীয়রা। এর বিপরীতে অটোমান সাম্রাজ্যের মুসলিম শাসকরা ইহুদীদের স্বার্থরক্ষায় তৎপর হয়ে উঠে। সে সময়ই আরব বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইহুদী বসবাস করতে শুরু করে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর। সেসময় আরব দেশগুলোতে জাতীয়তাবোধের বিকাশ লাভ করতে থাকে। এবং মধ্যপ্রাচ্যে একপেশে অবস্থানে চলে যেতে থাকে ইহুদী ধর্মাবলম্বীরা। একইসাথে ইউরোপের ইহুদীদের মধ্যে নিজস্ব একটি রাষ্ট্র গঠনেরও তাড়না সৃষ্টি হতে থাকে। কিন্তু সেই রাষ্ট্রটি গঠিত হবে কোথায়? কোন ভূখণ্ডে?

মধ্যযুগে ইহুদীদের ওপর নিপীড়নকারী ইউরোপের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো এই প্রশ্নটির উত্তর দিল বটে, তবে নিজেদের পুরো স্বার্থরক্ষা করে। ইউরোপের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো ইহুদীদের জন্য বাসস্থান খুঁজে বের করলো মধ্যপ্রাচ্যে। সেই থেকেই সৃষ্টি হলো ইসরায়েল। কিন্তু এখনও আরবদের মধ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির এই ইতিহাসকে স্বাভাবিক চোখে দেখার কারণ তৈরী হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসটা ভিন্ন আঙ্গিকে দেখান গেলে ইহুদীরাই মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব নেবে। এই ভিন্ন আঙ্গিকটাই হচ্ছে একটি রাষ্ট্র পাওয়ার জন্য ইহুদীদের নিজস্ব তাড়নার দিকটি তুলে ধরা। ইসরায়েল এই চ্যালেঞ্জটি নিতে পারবে কি না, তার উত্তর সময়ই দেবে।

ইরান-তুরস্ক ও ইসরায়েল ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য আরও দুটি সম্ভাব্য রাষ্ট্রের নাম মিশর ও সৌদি আরব। ইসলাম প্রচলনের পূর্বে থেকেই মিশরীয়দের মধ্যে সঙ্ঘত জাতীয়তাবোধ ছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত থাকলেও সৌদি আরব সবসময়ই বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছে। কিন্তু কথিত আরব বসন্তের প্রভাব পড়েছে এই দুই রাষ্ট্রের উপরই। তাই, মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব পাওয়ার আগে রাষ্ট্র দুটোর শাসকদেরকে নিজ দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় অনেক বেশি মনযোগী হতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো হলো ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়া। কিন্তু এই রাষ্ট্রগুলোর জাতিয় পরিচয় অনেকটাই ভঙ্গুর, আশঙ্কা আছে, এই রাষ্ট্রগুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই, শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্বের দৌঁড়ে এগিয়ে আছে ইসরায়েল, ইরান ও তুরস্ক।

# প্রবন্ধটি তুর্কি পলিসি রিভিউ নামের একটি গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!