সৌদী সফর শেষে বিদায়বেলা জিয়া পরিবারের সদস্যরা কাঁদলেন ও অন্যদের কাঁদালেন। জেদ্দা ও দুবাই বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে গিয়ে সবাই কাঁদেন। নেতাকর্মী ও মায়ের কান্নার জবাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেকর রহমান বলেন, ‘আর কান্না নয়, বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে লড়াই করতে হবে। কাঁদতে হবে না, শিগগিরই দেশে ফিরবো।’ এই বলে তিনি তাদের সান্ত্বনা দেন।
শনিবার সকালে জেদ্দা বিমান বন্দরে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে এসে নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দুবাই বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে গিয়েও তিনি একই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। ২০১১ সালে বেগম জিয়ার যুক্তরাজ্য সফরের পর গত ১৯ জুলাই দুবাই বিমানবন্দরে মা-ছেলের সাক্ষাৎ হয়। মদীনা ও মক্কায় গত সাত দিন তারা একত্রে ইবাদত-বন্দেগি করেন।
সাত দিনের সৌদি সফর শেষে শনিবার রাতে দেশের পথে রওনা হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পৌনে ৮টায় তিনি ঢাকা হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে যান। জেদ্দা থেকে একত্রে এমিরেটসের ইকে-৮১০ ফ্লাইটে তারা দুবাই পৌঁছেন।
জিয়া পরিবারের সদস্যদের সাত দিনের পুনর্মিলনী শেষে ফের বিচ্ছিন্ন হওয়ার দৃশ্যটি ছিল খুবই হৃদয়বিদারক।
সফরসঙ্গীরা জানান, দুবাই বিমানবন্দরে তারা যখন বিচ্ছিন্ন হন তখন সবার চোখে ছিল পানি। খালেদা জিয়া নাতনি জাইমা রহমানকে জড়িয়ে ধরে কয়েক মিনিট ফুঁপিয়ে কাঁদেন। এরপর ছেলে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান বিদায় নেন।
ঢাকায় পৌঁছলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান।
জেদ্দা বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে বিএনপির কয়েকশ’ নেতাকর্মী জড়ো হন। বিদায়বেলা অনেকে কেঁদে ফেলেন। তারেক রহমানও অশ্রুসিক্ত হন এবং স্বাভাবিক হয়ে নেতাকর্মীদের ধৈর্যধারণের জন্য বলেন।
সাবেক ছাত্রদল নেতা রকীবুল ইসলাম বকুলকে জড়িয়ে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘কেঁদো না। শিগগিরই দেশে ফিরে আসবো। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে যে কোনো মূল্যেই আমাকে ফিরতে হবে।’
গত ২০ জুলাই সৌদি সফরে যান বেগম খালেদা জিয়া। আর লন্ডন থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সৌদি যান তারেক রহমান। সাতদিন একত্রে থেকেই ইবাদত-বন্দেগি আর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরিতে সময় কাটান মা ও ছেলে।
শুক্রবার মক্কার পবিত্র বায়তুল্লাহ শরিফে জুমাতুল বিদার নামাজ আদায় এবং বিদায়ী তাওয়াফ শেষে ফিরে যান তারা। সফরসঙ্গীদের নিয়ে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে তারা মক্কা ত্যাগ করেন। শনিবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা পৌঁছেন। প্রায় একই সময়ে তারেক রহমানের লন্ডনে পৌঁছার কথা রয়েছে।
জেদ্দা বিমানবন্দরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে বিদায়শুভেচ্ছা জানান সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিব ও সৌদি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবদুর রহমান।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, সৌদি আরব সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন, পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম নান্নু, জেদ্দা মহানগর বিএনপি নেতা এমএ আজাদ চয়ন, কেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন আল মারুফ, যুবদলের পশ্চিমাঞ্চল সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, জেদ্দায় দলের নেতা প্রিন্স আল লিনটন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এরশাদ আহমেদ, বিএনপি নেতা ওয়ায়েছ আহমেদ, মোজাম্মেল হোসেন রিপন, আনোয়ার জাহিদ, মোশাররফ হোসেন, আজাদ, শিপন, হানিস সরকার, রঞ্জু আহমেদ, আবদুস শহীদ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহজাহান, আলমগীর হোসেন ও মেহেদী হাসান প্রমুখ।
এদিকে, মক্কায় রয়েল প্যালেসে অবস্থানকালে বুধবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘণ্টব্যাপী বৈঠক করেন আইডিবির প্রেসিডেন্ট আহম্মেদ আলী।
খালেদাজিয়া গত ২০ জুলাই ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে বাদশাহর আমন্ত্রণে সৌদী যান। সর্বপ্রথম মদিনায় গিয়ে তিনি মহানবীর (স.) রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। এরপর সেখানে তিনদিন অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটান। ২২ জুলাই রাতে মক্কায় আসেন। ওই রাতেই পবিত্র ওমরা পালন করেন।
মদীনায় আল ইমান হোটেলে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠকে মিলিত হন তিনি। সাংগঠনিক কিছু সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন তারা। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান।