যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত নেয়া একটি রাজনৈতিক দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিএনপি নির্বাচনে না এসে রাজনৈতিকভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর দায় জনগণ কেন নেবে?
শনিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য সফরের নানা বিষয় তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
‘জামায়াত নির্বাচন করতে পারবে না জেনেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি’- এমন অভিযোগও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বন্ধের নামে বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে।’
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনটি শুরু হয়ে চলে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত।
‘যুক্তরাজ্য সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি’- এমন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকারের যদি বাংলাদেশ সরকার সম্পর্কে কোনো দ্বিধা থাকত, তাহলে তাকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বারবার ফোন করে দাওয়াত দিতেন না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ফরোয়ার্ড লুকিং। তিনি বলেছেন, যা হওয়ার হয়েছে ফিরে তাকাতে চাই না। ’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাকে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজে রিসিভ করেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইলেকশন নিয়ে আলোচনা হবেই। পার্টিসিপেটরি ইলেকশন, আনকনটেসটেড , এসব নিয়ে আলোচনা থাকতেই পারে।’
ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনে নামার যে ঘোষণা দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘মাঠে নামুক না। মাঠে আওয়ামী লীগ আছে, মানুষ আছে। মাঠের খেলা মাঠেই হবে। ফুটবল মাঠে কে কয়টা গোল দেয়, সেটা সেখানেই দেখা যাবে।’
এ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৃটিশ সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
কন্যা সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আমন্ত্রণে গত সোমবার লন্ডনে যান প্রধানমন্ত্রী। তিন দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহনের পর এ সফরই ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম যুক্তরাজ্য সফর। মূলত ওই সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন তো হয়েই গেছে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় সেটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। একটা রাজনৈতিক দল যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত নেবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে কেউ ব্যর্থ হলে সে দায় কার?
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেভাবে হোক নির্বাচন হয়েছে। জনগণ মেনে নিয়েছে। দেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে। মানুষ শান্তিতে রয়েছে।’
‘জামায়াতের সঙ্গে সরকারের গোপনে আঁতাত হয়েছে’ – এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের জন্য কাজ করে। আঁতাতের রাজনীতি করে না। আমরা আঁতাত করতে যাবো কোন দুঃখে? খালেদা জিয়া যাদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন তাদের যে গ্রেপ্তার করে, জেলে দিয়ে কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছি সেই জন্য অন্তত বাহবা দেন। এটা কে পারতো? আমি ছাড়া কেউ পারবে না। কারণ আমি তো সব হারানো। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। ’
‘বিবিসির সঙ্গে সংলাপে আপনি অনেক কিছু বলেছেন কিন্তু আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সেটি স্পষ্ট করেননি’ একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রিী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করেছি তা নয়। আমি বলেছি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংবিধান সম্মতভাবে নির্বাচন হবে। যারা চাই না গণতান্ত্রিক ধারা অভ্যাহত থাকুক তাদের কাছে এটা অস্পষ্ট লাগবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে।’
সবশেষে আর্থিকভাবে নারীদের স্বচ্ছল হয়ে ওঠার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে ও এক্ষেত্রে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে ইতি টানেন প্রধানমন্ত্রী।