বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের উপর ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়েছেন বিএনপির সিনিয়ির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সৌদি আরবে অবস্থানকালে তারেক রহমানকে মির্জা আব্বাসের বিভিন্ন বিষয় জানানো হলে তিনি ভীষণ ক্ষুদ্ধ হন। ওমরা হজ্জ্ব পালন শেষে ঢাকায় ফিরে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র জানায়, পছন্দ না হওয়ায় সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস। বিশেষ করে সদস্য সচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেলকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। এমনকি আব্বাসের নির্দেশে ভাসানী ভবনে সদস্য সচিবের কক্ষ দখল ও নামফলক সরিয়ে ফেলার বিষয়টি তারেক রহমানকে জানানো হয়।
শুধু তারেক রহমানই নন, সৌদি আরবে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছেও বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। তখন তিনিও ক্ষুদ্ধ হন। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিএনপি চেযারপারসনের প্রতি অনুরোধ জানান তারেক রহমান।
এদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ১৯ জুলাই রাতে ঢাকা মহানগর বিএনপির ঘোষিত কমিটিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করা হয়। কিন্তু মির্জা আব্বাস সদস্য সচিব হিসেবে সোহেলকে মেনে নিতে পারছেন না। যার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে সোহেলকে ছাড়াই কমিটির শীর্ষনেতাদের নিয়ে আহ্বায়কের বাসায় বৈঠকের মধ্য দিয়ে। এর দুইদিন পর নগর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন রাতে মহানগর বিএনপির অফিস ভাসানী ভবনের দোতলায় সদস্য সচিবের জন্য নির্ধারিত কক্ষটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় আব্বাস সমর্থকরা। এ সময় সদস্য সচিবের নামফলকটি ফেলে দিয়ে সেখানে পল্টন থানা বিএনপির রঙিন ফলক লাগিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। পরে সোহেল সমর্থকরা সেই তালা ভাঙলেও আবার তালা দেয় আব্বাস সমর্থকরা।
এসব বিষয়ে মির্জা আব্বাসের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি মহানগর সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেন। তখন সোহেল বলেন, ‘আব্বাস ভাই আমার বড় ভাই। ওনার সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
তবে সমস্যা যে আছে তা আরো দৃশ্যমান হয় জিয়ার মাজারে ফুল দিতে গিয়ে। কমিটি ঘোষণার ছয়দিন পর দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ জানাতে যান নতুন কমিটির নেতারা। সেখানেও আগে থাকা নিয়ে সোহেলের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সোহেলকে মির্জা ফখরুলের পাশে দাঁড়াতে না দিয়ে নিজে দাঁড়াতে চান গয়েশ্বের। তবে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু সদস্য সচিবকে মহাসচিবের পাশেই দাঁড়াতে বলেন। এতে সপুর ওপর ক্ষিপ্ত হন মির্জা আব্বাস। তখন মির্জা আলমগীর তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে সমাধিস্থলে আসা নেতাকর্মীরা গয়েশ্বর চন্দ্র ও মির্জা আব্বাসের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাদের যুক্তি, নতুন কমিটির দুই নেতা মহাসচিবের পাশে থাকবেন, এটিই নিয়ম।
এরপর গত শনিবার দুপুরে আবারো ভাসানী ভবনে সদস্য সচিবের অফিস দখল পাল্টা দখল করতে গিয়ে মারামারি ঘটনা ঘটে। এতে সোহেলের দুই সমর্থক আহত হন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন নেতাকর্মী হাঁতুড়ি ও নতুন তালা নিয়ে বেদখল হওয়া কক্ষটি পুনরুদ্ধার করে। এরা সবাই সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের অনুসারী বলে জানা যায়।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-পরিবারকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক তালুকদার অমিত হাসান হাফিজ, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. জনি ও ছাত্রদলের নিয়াজ মাখদুম মাসুম বিল্লাহ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরেকজন কার্যালয়ের সদস্য সচিবের কক্ষে নতুন তালা লাগিয়ে দেন। তবে চলে যাওয়ার সময় তাদের উপর পল্টন থানা বিএনপির ১০ থেকে ১২ কর্মী হামলা চালায়। পল্টন থানা বিএনপির বেল্লাল হোসেন, মো. হেলাল, মুক্তার হোসেনসহ অন্যদের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের হাফিজ গুরুতর আহত হন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে মির্জা আব্বাস কক্ষটি পল্টন থানা বিএনপির অফিস হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে থানা বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
মির্জা আব্বাসের দিকে ইঙ্গিত করে তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, দলের সিনিয়র নেতাদের ইন্ধন না থাকলে সদস্য সচিবের কক্ষ দখল করার সাহস পল্টন থানা নেতাদের হতো না। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নগর নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে।
এ বিষয়ে পল্টন বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ফিরোজ আলম দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘অফিস কক্ষটি মূলত মতিঝিল থানা বিএনপির। সালাম ভাই সদস্য সচিব হওয়ায় তাকে কক্ষটি ব্যবহার করতে দেয়া হয়। এখন সালাম ভাই নেই তাই আমরা আবার অফিসটি ব্যবহার করছি।’
শনিবার কক্ষে তালা দেয়া কর্মীরা পল্টন থানা বিএনপির উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এ কক্ষটিকে পল্টন থানা বিএনপির অফিস হিসেবে ব্যবহার করছি। তবে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর আমরা এটা ছেড়ে দেব।
সূত্র জানায়, হাবিব উন-নবী খান সোহেলকে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বানিয়েছেন। তারেক রহমানেরও এতে সবুজ সংকেত রয়েছে। কিন্তু এখন সোহলেকে না মানা বিএনপি চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানকেই না মানা। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। রোববার বিষয়টি নিয়ে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপও করেছেন দলের চেয়ারপারসন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন তিনি।