ঈদ মানেই মানে অনাবিল আনন্দ। ভালোবাসা বিলিয়ে দেয়ার একটি রঙিন দিন। ঈদের খুশির অনুভূতিটা আগের মতোই আছে, এর স্বরূপটা সবকালেই সমান। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আনন্দ উদযাপনের উপকরণ ও ধরনের পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনটা কখনো একেবারে আনকোরা। এতে করে অবশ্য আবেগ ও অনুভূতিতে কিছুটা কৃত্রিমতা আরোপিত হয়েছে বলেও অনেকে উষ্মা প্রকাশ করে থাকেন।
আজ থেকে তিন-চারশ বছর আগের ঈদ পালনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেকালে বর্তমান বাংলাদেশের একমাত্র ঢাকা নগরীতে জাঁকজমকের সঙ্গে ঈদ পালন করা হতো। এর বাইরের এলাকায় তা ছিল একেবারেই সাদামাটা। ঈদ ছিল তখন ধনাঢ্য, বিত্তবান ও জমিদার শ্রেণীর ব্যক্তিদেরই উৎসব। আর ঢাকা ছিল সেই অভিজাতদের নগরী। ফলে ঈদের আনন্দ উৎসব যথার্থতা পেতো এখানেই। অবশ্য আঠারো শতক থেকেই ঈদুল ফিতর সব মানুষের আনন্দ-ফূর্তি ও নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ পরার একটি দিন হয়ে ওঠে।
আজকাল বিভিন্ন বয়সী মানুষের জন্য দেশি-বিদেশি যেসব চাকচিক্যময় পোশাক পাওয়া যাচ্ছে সেকালে কিন্তু তা ছিল না। এখনকার মতো নকশা করা পোশাক তখন তৈরি হতো না। তখন মানুষ সাদামাটা দেশীয় কাপড়েই সন্তুষ্ট থাকতো। তবে ঈদ উপলক্ষে সবাই ছুটে যেত দর্জির দোকানে। জরি, চুমকি, চিকন সুতার কাজ, কাট-ওয়ার্ক, পুঁতি ও মোতির কাজ কে কত সুন্দর করে করতে পারে তাই নিয়েই প্রতিযোগিতা চলতো। আর একালের ঈদে প্রতিযোগিতা চলে কেনাকাটায়।
সেকালে বাবা-মার সঙ্গে ছোটরা বাজারে গেলেও একালে তা পরিবর্তিত হচ্ছে। একালে নিজের শপিং নিজেই অথবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে কিনে নেয় তরুণরা। পোশাক নির্বাচন ও সাজগোজের ক্ষেত্রে একালের তরুণ-তরুণীরা অনেক বেশি সচেতন। ঈদের সাজ নিতে তারা এখন বিউটি পার্লার অথবা মেনজ পার্লারে ছুটে যায়। শুধু শহরে নয় গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও সাজগোজ, ফ্যাশনে এখন অনেক স্মার্ট।
ঈদের জামাত আয়োজনে সেকালের চেয়ে একালের বর্ণাঢ্যতা লক্ষণীয়। এখন ঈদগাহকে মনোরম প্যান্ডেলে সাজানো হয়। আগে ঈদের দিন ছোট ছোট দল নিয়ে মুসল্লিরা ঈদগাহে যেতেন। এখন যে যার মতো ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করেন।
ঈদ উপলক্ষে সেকালে বড়-ছোট নির্বিশেষে সকলেই এ বাড়ি ওবাড়ি, এপাড়া ওপাড়া বেড়ানোর রেওয়াজ ছিল। একালে বেড়ানোর পরিধি যেন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। বেড়ানোর চাইতে টিভির সামনে বসে ঈদ অনুষ্ঠান অথবা ইন্টারনেট নিয়েই বসে থাকতে বেশি পছন্দ করে। অথবা ছুটে যায় কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে।
সেকালে সেমাই, ফিরনী, পিঠা-পুলি দিয়ে ঈদে আপ্যায়ন করা হতো। আপ্যায়নে ছিল পরম আন্তরিকতার ছোঁয়া। একালে আপ্যায়নের আইটেম অনেক বেশি ও উন্নত। সঙ্গে যোগ হয়েছে ফাস্টফুড আর বিদেশি সব খাবার। তবে খাবারে আইটেম বাড়লেও আন্তরিকতা কমেছে ঠিক সমান হারে।
সেকালে ঈদ কার্ড বিনিময়ে বেশ তোড়জোড় দেখা গেলেও একালে মোবাইল ফোনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। এসএমএস, এমএমএস, ইমেইল, ফেসবুক এসবই এখন শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যম। সুন্দর কাগজের তৈরি ঈদকার্ড এখন ডিজিটাল গ্রাফিক্সে আত্মসমর্পণ করেছে।