বাংলাদেশে মিডিয়ার দাফন প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি শুধু কফিনটি কররে রাখা।
এই অবস্থায় দালাল সাংবাদিক নেতারা মগ্ন হাসিনা তোষণে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত শেখ হাসিনা সরকার ‘প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকশেন্স অ্যাক্ট’ ঢেলে সাজানোর নামে আইন দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে।
এত দিন জোর করে মিডিয়া বন্ধ করেছে শেখ হাসিনা সরকার। এবার আইন দিয়ে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি চলছে। যদিও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন গণমাধ্যম বিষয়ক আইনটি ঢেলে সাজানো হচ্ছে, মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণ করা হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইনটিকে ঢেলে সাজানো এবং যুগোপযোগী করার নামে ইতোমধ্যেই খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এই খসড়ায় কৌশলে হরণ করা হয়েছে মিডিয়ার স্বাধীনতা। সম্প্রতি এই বিষয়টি সরাসরি খোলাসা করেছেন সমাজকল্যা মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী।
তিনি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষের একটি বৈঠকে মিডিয়ার প্রতি নিজের ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, এমন আইন করা হচ্ছে মিডিয়ার স্বাধীনতাই থাকবে না।
আইন পরিবর্তন করে মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণের প্রস্তুতি চূড়ান্তকরণের খবরেও নীরব গণমাধ্যম। সাংবাদিক নেতারা মগ্ন শেখ হাসিনা তোষণে। শেখ হাসিনা তোষণের সর্বশেষ নজির দেখা গেছে গত ২৬ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। শেখ হাসিনার বৃটেন সফর উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিটি প্রশ্ন ছিল তোষামোদে পূর্ণ।
এমনকি সিনিয়র সাংবাদিকরাও তোষামোদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে। অথচ যেই বিষয়টি নিয়ে শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করে সিনিয়র সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন সেই বিষয়টি রীতিমত পরিষ্কার করেছিল বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরনের মূখপাত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে সেই বক্তব্য স্পষ্ট করেই প্রচার করেছিলেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে স্পষ্ট প্রচারিত একটি বক্তব্যকে আড়াল করতে শেখ হাসিনা তোষণে লিপ্ত হন সাংবাদিকরা। আর এই ধারায় গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রচার করেছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই এরকম তোষামোদীর ঘটনা দেখা যায়। সত্য আড়াল করতে সাংবাদিকরা লিপ্ত হন আওয়ামী তোষামোদীতে।
এদিকে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে আইন পরিবর্তন করতে চলছে সরকারি তোড়জোর। তারপরও সাংবাদিকদের দীর্ঘ লড়াইয়ে অর্জিত গণমাধ্যম স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
স্বাধীনতা পরবর্তি শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার হরণ করেছিল মিডিয়ার স্বাধীনতা। এই জন্য তৈরি করা হয়েছিল নতুন আইন। এই আইনের আওতায় জেলা প্রশাসন যে কোন অজুহাতে ডিক্লারেশন বাতিল করে দিতে পারতেন। সেই থেকে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে সাংবাদিকদের লড়াই।
দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের এক পর্যায়ে ১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগ নেয়া হয় আইনটি পরিবর্তনের। এজন্য তিনি একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিমিত্তে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে মিডিয়ার স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গতিহীন ধারাগুলো বাতিল করে দেন।
পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার অধ্যাদেশটি জাতীয় সংসদে অনুমোদন করে। এতে জেলা প্রশাসন হারায় মিডিয়া বন্ধের এখতিয়ার। সরকার হারায় আইনি নিয়ন্ত্রণ। এরপরই মূলত বাংলাদেশে মিডিয়া প্রকাশে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের গণমাধ্যম। যদিও এই গণমাধ্যম এখন আওয়ামী তোষণেই নিজেদের ধন্য মনে করে।
মিডিয়ার স্বাধীনতা হরনে সরকারের আইন প্রণয়নের উদ্যোগের পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলো পরিণত হয়েছে আওয়ামী প্রচারযন্ত্রে। একটি বিশেষ দল, গোষ্ঠী এবং বিশেষ মতবাদের প্রচারণায় অহর্নিশ লিপ্ত গণমাধ্যম গুলো। কেউ কেউ রসিকতা করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে একচোখা বলেও আখ্যায়িত করেন।
দুই ভাগে বিভক্ত সাংবাদিক সমাজের একটি বড় অংশই শেখ হাসিনাকে তোষমোদীতে ব্যস্ত। শেখ হাসিনা তোষামোদেই তারা খুঁজে পান মিডিয়ার স্বাধীনতা। দৈনিক আমার দেশ ছাপাখানা, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন এবং চ্যানেল ওয়ান সরকারি ক্ষমতার জোরে বন্ধ করে রাখার পরও নীরব ওই শ্রেণীভুক্ত সাংবাদিক নেতারা। কোনো আইনের তোয়াক্কা নেই। সরকারি ক্ষমতার জোরেই মূলত এই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে রেখেছে প্রশাসন।
মাস পেরিয়ে বছর চলে গেছে। সরকারের তল্লাশি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয় না। এই প্রতিষ্ঠান গুলোর সাংবাদিকরা বেকারত্বে নিপতিত হলেও সাংবাদিক সমাজের নীরবতা প্রমাণ করে তারাও মিডিয়ার প্রকৃত স্বাধীনতা চায় না। তাদের নীরবতা মিডিয়া বন্ধের জন্য সরকারি আইন তৈরির উদ্যোগকেই বরং উস্কে দিচ্ছে। সাংবাদিক সমাজের নীরবতায় যেই বীজ বপন হচ্ছে সেটা একদিন তাদের দিকেও বুমেরাং হতে পরে, এটা যেন ভুলেই গেছেন সবাই।
সাংবাদিক নেতাদের কেউ রাষ্ট্রীয় পদ-পদবীর লোভে, কেউ সরকারি সুযোগ সুবিধার লোভে, কেউ দলীয় মতাদর্শের অন্ধত্ব থেকেই মূলত মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহযোগিতা করছেন। আওয়ামী তোষণে লিপ্ত সাংবাদিক নেতাদের এই আচরণে গণমাধ্যম হারাতে বসেছে তার স্বাধীনতা।