কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটের মাঝ পদ্মায় পিনাক-৬ নামের একটি যাত্রীবোঝাই লঞ্চডুবির পর এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।তবে আরও দ্রুত উদ্ধারকার্য চালনার উদ্দেশ্যে ১২ সদস্যের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ডুবুরী দল অচিরেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌছাবে বলো জান গেছে।
এ ঘটনায় ৭০ যাত্রীকে উদ্ধার করা করা হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে প্রায় দেড়শতাধিক যাত্রী বলে মাওয়া ঘাট সূত্র জানায়।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লঞ্চটি শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়া উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে ১১টার দিকে মাঝ পদ্মায় প্রচণ্ড ঢেউয়ের ধাক্কায় ডুবে যায়। লঞ্চটিতে প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী ছিল।
এ ঘটনার পরপরই আশপাশে স্প্রিডবোটের যাত্রীরা ও পরে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করে।
এদিকে বিআিইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ তিস্তা এসে পৌঁছেছে। তবে স্রোতের কারণে উদ্ধার তৎপরতা এখনও শুরু করতে পারেনি।
ওই ফেরিতে মাওয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়া সহিদুজ্জামান নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, লঞ্চটি ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রথমে কাত হয়ে ডুবে যেতে থাকে। এরপর লঞ্চটি পুরোপুরো ডুবে যায়।
এই অবস্থা দেখে মাওয়া থেকে প্রায় ১৫টি স্পিডবোট ছুটে এসে যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। স্পিডবোট দ্বারা কমপক্ষে ৭০ জনের মতো যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করা গেছে বলে মাওয়া স্পিডবোট ঘাটসূত্র জানায়।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে সাঁতরাতে থাকা শিবচরের নুরুদ্দিন মোহুরীকে উদ্ধার করা গেলেও তার সঙ্গে থাকা দুই মেয়ে হিরা (১৮) ও স্বর্ণাকে (১৫) উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও শিবচরের চরশ্যামাইল এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা জোরিনা বেগমের মেয়ে রোজি (৮) নিখোঁজ রয়েছে। এই সময় ইকবাল মুন্সী ও তার দুই বছর বয়সী মেয়ে ইরাকে উদ্ধার করা গেছে।
লঞ্চডুবির খবর পেয়ে শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাটে এসে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন পরিবারের লোকজন। শিবচরের শেখপুর এলাকার সোহাগ খান নামের এক ব্যক্তি উঠতে সক্ষম হলেও তার স্ত্রী দিবা ও আড়াই বছর বয়সী শিশু সন্তানের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া শিবচরের চরবাঁচামারা এলাকার লুৎফর মোল্যা (৬৫) ও তার ভাতিজা রুস্তুম (৪৫) নিখোঁজ রয়েছেন বলে লুৎফর মোল্যার স্ত্রী নাছিমা জানান।
সদরপুর উপজেলার চরমাইনার এলাকার দুই ভাই লুৎফর মুন্সী (২৩) ও সরওয়ার মুন্সী (১২) নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার অপর এক ভাই। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে দুর্ঘটনার পর।
দুর্ঘটনাস্থলে থাকা মাদারীপুরের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, বেলা পৌনে দুইটার দিকে উদ্ধারের জন্য ডুবুরির দল এসে পৌঁছায়। প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ডুবুরির দল ডুবে যাওয়া লঞ্চের অবস্থান নির্ণয়ে প্রথমে ব্যর্থ হলেও পরে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
শিবচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন কিছু কিছু লাশ উদ্ধারের কথা বললেও খোঁজ নিয়ে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন জানান, কাওড়াকান্দি থেকে দুইশতাধিক যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামের একটি যাত্রীবোঝাই লঞ্চ মাওয়া আসছিল। মাঝ পদ্মায় লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে প্রবেশের মুখে যাত্রীবোঝাই লঞ্চটি তলিয়ে যায়। পরে তাৎক্ষণিক ১৪-১৫ যাত্রী সাঁতরে পাড়ে ওঠে।
ঘটনার পরপরই প্রথমে আশপাশে স্প্রিডবোটের যাত্রীরা উদ্ধার কাজ শুরু করে । পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এসময় তারা ৫৫ যাত্রীকে উদ্ধার করে। পরে ডুবুরিরা এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে। তবে এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান ওসি।
উল্লেখ, গত দুই দিন ধরে কাওড়াকান্দি ঘাটে রাজধানীমুখো যাত্রীর ঢল নেমেছে। লঞ্চ-স্পিডবোট ও ফেরিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। রোববার সকাল থেকে আবহাওয়া খারাপ হতে থাকায় পদ্মা উত্তাল রয়েছে। এরই মাঝে কোনো নিয়ম-নীতি না মেনে স্পিডবোটগুলো ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধীক যাত্রী বহন করছে।