দশম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচিত হওয়া এবং বিরোধী দলের ভূমিকা পালন নিয়ে জনমনে সংশয় ছিল শুরু থেকেই। বিরোধীদলের একের পর এক কার্যক্রমে ক্রমেই সেই সংশয়ের ষোলকলা পূর্ণ হতে থাকে।
গত ৫ই জানুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় নির্বাচিত হলেও বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরী হয়। এই বিরোধী দল কি আসলেই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে নাকি কাজ করবে সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে সে সন্দেহ থেকে কখনোই উঠে আসতে পারেনি রওশান এরশাদের নেতৃত্বাধীন বিরোধীদল। তাই জাতীয় পার্টির বিরোধীদলের ভূমিকা পালন নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে সবার মনেই। আর এই সন্দেহে বিরোধী দল আরো রসদ জোগায়, নির্বাচিত হওয়ার ৭ মাস পেরোনর পরও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের আওয়াজ না তুলে।
সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী, অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে বিরোধী দল বিরোধিতাতো করেনি বরং সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়ে গেছে প্রতিটাক্ষেত্রে।
বর্তমান আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী কার্যক্রমে যখন সুশীল সমাজ, সচেতন জনগণসহ কমবেশি প্রায় সব রাজনৈতিক দলই সোচ্চার তখনও নির্লিপ্তের ভূমিকায় থেকে গেছে এই বিরোধীদল। এমনকি সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সরকার দলের ভেতর থেকেও বিরোধিতা ও সমালোচনা এসেছে তখনও পর্যন্ত নীরব থেকে গেছে বিরোধী দলটি।
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা রায়ে তালপট্টি দ্বীপ হারানো সহ,বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিরোধীদল কোন মন্তব্য করেনি। যেখানে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কড়া ভাষায় সরকারের বিরোধিতা করেছিল।
এমনকি অতি সম্প্রতি তোবা গার্মেন্টস শ্রমিকদের যৌক্তিক আন্দোলন, আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে লাঠিপেটা নিয়ে বিএনপি থেকে শুরু করে সকল রাজনৈতিক দল এবং সচেতন নাগরিকরা যখন সোচ্চার তখনও সরকার বিরোধী কোনো বক্তব্যই পাওয়া যায়নি এই বিরোধী দল থেকে। এরকম করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি ইস্যুতেই নিশ্চুপ থেকে নখদন্তহীন বাঘের মতই ভূমিকা পালন করে চলেছে বিরোধী দল। এছাড়া, সংসদ অধিবেশনেও তেমন কোনো বিরোধিতা করতে দেখা যায় না এই বিরোধী দলকে।
তাছাড়া, অতি সম্প্রতি অত্যন্ত ভয়ানক এক ট্র্যাজেডি পিনাক- ৬ নামক লঞ্চ ডুবি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যায়নি বিরোধী দলের মধ্যে। অথচ এই লঞ্চ ডুবির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। তিনি এই বিষয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধও করেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সরকারের সমালোচনা সহ নৌমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন খোদ সরকারের আরেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সরকার এই দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারেনা। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তার ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেনা।
আবার এই লঞ্চ ডুবির ঘটনাকে সরজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিএনপি যখন প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে, সরকারের ব্যর্থতার কড়া বিরোধিতা করেছে তখনও কোনো বিরোধী বক্তব্যতো দূরের কথা এই বিষয়ে কোনো বক্তব্যই দেয়নি বিরোধী দল। সচেতন নাগরিক সমাজ যখন এই ঘটনায় ক্ষোভে-রাগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করেছে তখনও বোবা-নিশ্চুপ-অবুঝ বালকের ভূমিকায় দেখা গেছে বর্তমান অনুগত বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে।
তাই, বর্তমান সময়ে বিরোধী দলের এমন ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, এই অভিনব বিরোধী দলও বুঝি পিনাক-৬ এর সাথে ডুবে গেছে। আর আওয়ামীলীগই এখন দেশের সরকারি এবং বিরোধীদল,দুটোই।