DMCA.com Protection Status
title="৭

প্রানঘাতী ইবোলা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক হোনঃ জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত

news_img-300x200দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ   ভয়ংকর ইবোলা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারাবিশ্বে। সম্প্রতি গিনি, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, নাইজেরিয়া—পশ্চিম আফ্রিকার এই চারটি দেশে ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৯ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত ছিল এক হাজার ৭০০ জনের বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপকভাবে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে বিশ্বব্যাপী জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি বলে ঘোষণা করেছে।

লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের প্রায় ৮০০ সদস্য আছেন। এদের কারও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এসব সদস্যের জন্য বিশেষ গাউন ও মুখোশ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিকে বাংলাদেশে ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধে ৯০ দিনের সতর্কতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রোববার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ-সংক্রান্ত এক সভা শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী এ বিভিন্ন সতর্কতামূলক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

এছাড়া ভাইরাসটি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম তদারকির জন্য স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।এদিকে এ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া দেশগুলো থেকে আসা সব যাত্রীকে বিমানবন্দরে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদেশ থেকে আসা কারো দেহে ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ সনাক্ত হলে তাকে আলাদা করা হবে। এ জন্য বিমানবন্দরের কাছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি আলাদা ওয়ার্ড খোলা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জেনে নিন এই ভয়ংকর ভাইরাসটির আদ্যোপান্ত:

ভাইরাস আগে রক্তপ্রদাহজনিত জ্বর [Ebola hemorrhagic fever (EHF)] হিসাবেই সমধিক পরিচিত ছিল। মূলত একটি আরএনএ ভাইরাস। যেটির নামকরণ করা হয়েছে কঙ্গোর নদীর নাম থেকে। ভাইরাস গোত্রের ৫টির মধ্যে ৩টি প্রজাতি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে! বাকি ২টি মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে জাইরে (Zaire) ভাইরাস (জাইরে হলো একটি জায়গার নাম যেখানে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসে কোনো মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো)। প্রথমবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ছিল শতকার ৯০ শতাংশ! ভয়াবহ এই ভাইরাসটি মানবদেহে রক্তপাত ঘটায়। লিভার, কিডনিকে অকেজো করে দেয়, রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমিয়ে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত করে।

ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশের পর কয়েকদিন থেকে প্রায় ৩ সপ্তাহ কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই অবস্থান করতে পারে। অর্থাৎ এর লক্ষণসমূহ পরিলক্ষিত হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ২১দিন লাগতে পারে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি এই রোগ নিয়ে চলে যেতে পারেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে। আর সেখানে ছড়িয়ে দিতে পারেন নিজের অজান্তেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ইবোলায় আক্রান্ত রোগীদের তীব্র জ্বর হয়। জ্বরে আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৯০ শতাংশ। বন্য প্রাণী থেকে এই ভাইরাস প্রথমে মানুষে এবং পরে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। কোনো ব্যক্তির দেহে এ ভাইরাস প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের লক্ষণগুলো শুরু হয় না, দুই দিন থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে আফ্রিকা থেকে যেকোনো ইবোলাবাহী ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেন। তাঁদের আসা ঠেকানোর উপায় নেই। সে কারণে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেওয়ামাত্র তা শনাক্ত করাই প্রথম জরুরি কাজ। সংক্রমণ ছড়ায় সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত, লালা, ঘাম ইত্যাদির মাধ্যমে, বাতাসের মাধ্যমে নয়। তাই রোগীকে অনতিবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে অন্যদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখাই সংক্রমণ ছড়ানোর পথ বন্ধ করার উপায়।

এর লক্ষণ

আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে নিরীহ ফ্লু’র মতো হালকা জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা অনুভব করে। কিছুদিন পর তীব্র মাথা ব্যথা, জ্বর, শরীর ব্যথা, ত্বকে দানা দানা উঠা, মুখে ঘা, ডায়রিয়া এবং মারাত্মক বমি শুরু হতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে শরীরের ভিতরে বাইরে রক্তপাত শুরু হতে পারে। এই ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, কিডনি, হার্ট অকেজো করে দেয় যার ফলে রোগীর মৃত্যু ঘটে।

এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লু’র মতোই। সর্দি কাশি, মাথা ব্যাথা, বমি, ডায়েরিয়া এবং জ্বর এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ। তাই কারো উপরোক্ত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে! রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে এটা ম্যালেরিয়া, হ্যাপাটাইটিস, কলেরা বা অন্য কোনো রোগের জীবাণুর কারণে হচ্ছে কিনা!

কিভাবে ছড়ায়?

বলা হয়ে থাকে বাদুরের খাওয়া ফল থেকেই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রথম প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করে। আক্রান্ত মানুষের দেহরস অপর কোনো মানুষের দেহের স্পর্শে আসলে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পরও ভাইরাসটি বেশ কয়েকদিন টিকে থাকে।

আশার কথা হলো, রোগটি ফ্লু ও অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগের মতো ছড়ায় না, আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসলে এই রোগে সংক্রমিত হবার ভয় নেই।

চিকিৎসা

রিহাইড্রেশন এবং হালকা বেদনানাশক দিয়ে করা হচ্ছে আক্রান্তের চিকিৎসা। খুব একটা কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। নেই কোনো প্রতিষেধক টিকাও। তথ্য মতে এই রোগে মৃত্যুর হার ৫০%-৯০%।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই রোগের লক্ষণগুলো অন্য আরো অনেকগুলো রোগের লক্ষণের সাথে মিলে যায়! ফলে রোগ শনাক্ত করতে সময় লেগে যায়!

তাই সঠিক রোগ শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়াটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ! তবে যদি রোগ দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক মেডিক্যাল সাপোর্ট দেয়া যায় তাহলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়!

আমাদের করণীয়

যেহেতু এর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি তাই এই ভাইরাসটি যাতে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিমানবন্দরে কর্তব্যরতদের এই ভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্তকরণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় তবে তাকে কিভাবে পৃথক করে চিকিৎসা দিতে হবে সেই ব্যাপারেও প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।

তারপরও সতর্কতা হিসাবে সবসময় সাবান ও গরম পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখে হাত লাগনো না হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কোনো প্রকার তরল যাতে আপনার সংস্পর্শে না আসে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোনো কারণে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তবে সাথে সাথে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে যাতে অন্য কেউ এ রোগে আক্রান্ত না হয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!