১১ই আগস্ট, সোমবার হলিউড হারালো রবিন উইলিয়ামসের মতো দক্ষ একজন অভিনেতাকে। মাত্র ৬৩ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। জানা যায় এই বিশ্বখ্যাত অভিনেতা আত্মহত্যা করেছেন। চলুন জেনে নেই এই মেধাবী কৌতুক অভিনেতার মৃত্যুর পর উঠে আসা ৭ অজানা তথ্য।
*তিনি ছিলেন একজন গেমার। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এএমএ রেডিট চলার সময় একজন রেডিটর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, দ্য লিজেন্ড অব জেলডা দেখার পরই কি তিনি তার মেয়ের নাম জেলডা রেখেছেন কিনা। উইলয়ামস উত্তর দেন, ‘এটা আসলে আমি রাখি নি, আমার ছেলে জাচারির মাথায় এই আইডিয়াটা আসে। কিন্তু যখনই মার্শা (তার প্রথম স্ত্রী) ও আমি শুনলাম, আমরা বললাম-অতি উত্তম’!
*উইলিয়ামসের পছন্দের তারকা ছিলেন জ্যাক নিকলসন।
*উইলিয়ামসের প্রিয় বই- সি এস লুইস এর ‘দ্য লায়ন, দ্য উইচ এন্ড দ্য ওয়ার্ডরোব।
* উইলিয়াম ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও কক্ষসাথী ছিলেন ক্রিস্টোফার রিভ। সুপারম্যান অভিনেতা রিভ একটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর এই কৌতুকাভিনেতাই রিভের মুখে প্রথম হাসি ফোটাতে পেরেছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের রিভিউ অনুযায়ী, রিভ তার স্টিল মি স্মৃতিকথায় লিখেন, ‘সে ঘোষণা করল যে সে একজন প্রক্টোলজিস্ট এবং শীঘ্রই আমাকে তার পরীক্ষা করতে হত। এবং দুর্ঘটনার পর প্রথমবারের মত সেদিন আমি হেসেছিলাম’।
*শুরুর দিকে, টাকা উপার্জনের জন্য নিউইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের বাইরে তিনি একজন মাইম হিসেবে পারফর্ম করতেন।
*’আলাদীন’ ছবির প্রচারের সময় ‘দৈত্য’ হিসেবে তার কন্ঠস্বর ব্যবহার করায় ডিজনির উপর রেগে গিয়েছিলেন তিনি। পরে পিকাসোর একটি পেইন্টিং পাঠিয়ে ডিজনি এর ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিল। সম্ভবত এটি ১০ লাখ ডলারের সমমূল্যের পেইন্টিং ছিল, যেখানে শিল্পী নিজেকে ভিনসেন্ট ভ্যান গগ হিসেবে কল্পনা করেছিলেন।
*উইলিয়াম একটি আঙ্গুর ফলের বাগান করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। একবার টাইম ম্যাগাজিনের একটির সাক্ষাৎকারে তিনি মজা করে বলেছিলেন, “অদ্ভুত, গান্ধীজী যেন নিজের হাতেই বাগানটি তৈরি করেছেন”।
বিশ্বখ্যাত উইলিয়ামসের ইতিবৃত্ত:
১৯৫১ সালে শিকাগোয় জন্ম রবিনের। অভিনয়ে হাতেখড়ি স্কুলজীবনে। পরে নিউ ইয়র্কের জুলিয়ার্ড স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখানেই কৌতুক অভিনেতা হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার শুরু। সমসাময়িক সময়ের বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস বিখ্যাত মার্কিনি কমেডি টেলিসিরিজ ‘মর্ক অ্যান্ড মাইন্ডি’-তে অভিনয় করে সারা বিশ্বের মন জয় করেছিলেন।
৭০-এর দশকে বিখ্যাত টেলিভিশন শো ‘মর্ক অ্যান্ড মিন্ডি’তে এলিয়েন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ‘অ্যাওয়াকেনিংস’, ‘দ্য ফিশার কিং’, ‘পপেই’, ‘হুক’, ‘আলাদিন’, ‘জুমানজি’, ‘দ্য বার্ডকেইজ’, ‘নাইট অ্যাট মিউজিয়াম’-এর মতো বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রবিন। ‘গুড মর্নিং ভিয়েতনাম’ এবং ‘ডেড পোয়েটস সোসাইটি’-এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। ‘দ্য ফিশার কিং’, ‘ডেড পোয়েটস সোসাইটি’ ও ‘গুড মর্নিং, ভিয়েতনাম’- এই তিনটি সিনেমাতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন রবিন।
শুধু মাত্র কৌতূক চরিত্রেই নয়, বিভিন্ন সিরিয়াস চরিত্রেও দাপটের সঙ্গে নিজের প্রতিভার প্রমান দিয়েছিলেন রবিন। ১৯৯৭ সালে ‘গুড উইল হান্টিং’-এ এক মনোবিদের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অস্কার পান রবিন। এ ছাড়াও দু’বার এমি, চার বার গোল্ডেন গ্লোব এবং পাঁচ বার গ্র্যামি পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৭ সালে এন্টারটেনমেন্ট উইকলি এই প্রখ্যাত হলিউডি স্টারকে ‘পৃথিবীর সবথেকে মজার মানুষ জীবিত’ উপাধি দেয়। বহু সিনেমা ও টেলিসিরিজে এই কৌতূকাভিনেতার অবিস্মরণীয় অভিনয় তাঁকে চিরকাল দর্শকদের কাছে অমর করে রাখবে।উল্লেখ্য তার ৪টি ছবি এখন রয়েছে মুক্তির তালিকায় এবং আগামী মাস গুলোতে দর্শকদের আবার মোহিত করবেন তিনি তার অসাধারন অভিনয় শৈলী দিয়ে।