যারা টাকা নিয়ে সাংবাদিকতা করেন তাদের ঘৃণা করেন বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী।
রোববার দুপুর ২টায় শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মৌলভীবাজার শহরের শ্রী শ্রী নূতন কালীবাড়ি প্রাঙ্গনে বর্নাঢ্য সংকীর্ত্তন শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
যারা সৎ সাংবাদিকতা করেন তাদের প্রতি আমার কোন সমালোচনা নাই বলেও এসময় মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
সৈয়দ মহসীন আলী বলেন, কিছু সংখ্যক সাংবাদিক যারা, সবাই এক নয়। আব্দুস সালামসহ সব সাংবাদিকের প্রতি আমার সমালোচনা নেই। সমালোচনা হলো যারা পয়সা দিয়ে সাংবাদিক। তাদেরকে বলি দেশের জন্য সাংবাদিকতা করেন, দেশের মানুষের জন্য সাংবাদিকতা করেন। আমি বলবো আসুন, আমার সঙ্গে বসুন।
এসময় তিনি বেশ শাসিয়ে বলেন, আপনারা অন্যায় করবেন, আর সহ্য করবো আমি মহসীন আলী?
মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা লেখার জন্য সাংবাদিকতার লাইসেন্স পাইছেন। কিন্তু লেখার জন্য যে শক্তি প্রয়োজন ছিল তা আপনাদের নাই।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করছেন। সরকারও তাদের সহযোগিতা করছে।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ সভাপতি এডভোকেট ভূষনজিৎ চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি আবার শ্রী শ্রী নূতন কালীবাড়ি প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়।
এর আগে গত ৯ আগস্ট সাংবাদিকদের চরিত্রহীন বলে পেছনে লোক লেলিয়ে দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। সেদিন সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনায় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে মন্ত্রী বলেন, ‘এরা সবকটা খবিশ, চরিত্রহীন! স্বাধীন কমিশন হলে পরে দেখে নেবো তোমরা (সাংবাদিকেরা) কতটুকু যেতে পারো!’
তার এ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। এ সময় তারা মন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে আসেন। সৈয়দ মহসিন আলী তখন সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। সাংবাদিকদের পেছনে সিলেটের মানুষ লেলিয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না।’
এরপরই দেশের আপামর সাংবাদিকসমাজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণসহ গ্রেপ্তারের দাবিও জানায় সাংবাদিক নেতারা। পরবর্তীতে নিজের পক্ষে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
এরপর গত ১১ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে তার মন্তব্যের জন্য সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেসময় প্রধানমন্ত্রী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে নিয়ে এত লেখালেখি কেন? কী হলো আপনার? মঞ্চে সিগারেট খেলেন, পত্রিকায় আসলো। এরপর সিগারেট ছেড়েও দিলেন। এগুলো তো আপনার জন্য ভালো।
উত্তরে মহসিন আলী বলেন, স্থানীয় দু’একজন সাংবাদিক আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ও অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে অশালীন কথা বলে, আমি উত্তেজিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, খবিশ, রাবিশ কাছাকাছি শব্দ। এভাবে খবিশ বলা কোথায় পেলেন?
মহসিন আলী তাৎক্ষণাৎ জবাব দেন- খবিশ, রাবিশ এক জায়গা থেকেই এসেছে কি না- তাই।
এর আগে গত ২২ জুলাই নিজ মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানেও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেছিলেন, এমন আইন করা হচ্ছে যে তাদের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।