উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিসংশন তথা অপসারণের ক্ষমতা আবারো ফিরে পাচ্ছে জাতীয় সংসদ। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইনের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
১৮ আগস্ট সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ওই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের পরে মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের একথা জানান।
নতুন এই সংশোধনীতে বলা হয়:
১। এই আইন সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪ নামে অভিহিত হবে।
২। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে নিম্নরূপ ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হবে, যথা:
‘৯৬। বিচারকদের পদের মেয়াদ।- (১) এই অনুচ্ছেদের বিধানাবলী- সাপেক্ষে কোনো বিচারক ৬৭ (সাতষট্টি) বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
(২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারণ করা যাবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
(৪) কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে পদত্যাগ করতে পারবেন।’
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের আলোকে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ছিল। এই আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারকদের দক্ষতা ও আচরণ তদন্ত করে যদি কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবেই রাষ্ট্রপতি বিচারককে অভিশংসন করতে পারেন। তবে ১৯৭৮ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের এই বিধান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে তুলে দেন। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের অনেক রদবদল করা হলেও ৯৬ অনুচ্ছেদের ওই ধারাটি ফিরিয়ে আনা হয়নি।
বিশিষ্টজনদের কারো কারো মতে, পঞ্চদশ সংশোধনী বিচার বিভাগকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিল। ইচ্ছা করলেই সরকার যখন তখন কোনো বিচারককে অপসারণ করতে পারত না।
এদিকে, সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই বিতর্ক চলছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ এভাবে তাড়াহুড়া করে করা ঠিক হচ্ছে না।বিশেষ করে ৫ই জানুয়ারীর ভোটারবিহীন এবং প্রহসনের নির্বাচনে নির্বাচিত এই সংসদের এতো বড় সিদ্ধান্ত নেবার নৈতিক কোন ভিত্তি আছে কিনা তা গভীর ভাবে ভেবে দেখা দরকার।এটি যেহেতু বিচার বিভাগ-সম্পর্কিত বিষয়, তাই এ নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা হওয়া উচিত। আবার কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কাও করছেন। এসব বিতর্কের মধ্যেই মন্ত্রিসভায় খসড়াটির অনুমোদন দেওয়া হলো।