দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ রিপোর্টঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্যে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক সংগৃহীত ৭৫ কোটি টাকার কোন হদিস পাওয়া গেল না।
মুক্তিযুদ্ধের নামে আদায় করা সেই অর্থের কোন হিসাব কেউ-ই দিতে পারলো না। এই অর্থ কিভাবে ব্যয় হলো, কে ব্যয় করলো, আর যদি ব্যয় না-ই হয়ে থাকে তবে কোথায় গেল- এই প্রশ্নগুলো উঠতে শুরু করে। দেশের মানুষ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না জানলেও একজন জানতেন।
তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভারত থেকে স্বাধীনতার পর ঢাকায় এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী প্রশাসনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি. এন. হাকসার। হাকসার ঢাকায় এসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। আলোচনাকালে সামনে আসে মুজিবনগর সরকারের সেই টাকার প্রসঙ্গ যা তখন ভারতীয় ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল।
মঈদুল হাসানের স্মৃতিচারণ অনুসারে- তিনি তাঁকে বলেন, "ভারত সরকার এই টাকাটা ফেরত দিতে চায় কিন্তু কীভাবে আমরা ফেরত পাঠাব। ব্যাংক ড্রাফট করে পাঠাব, নাকি তোমরা জিনিসপত্র কিনবে- জিনিসপত্র কিনলে তার বিপরীতে আমরা ব্লক হিসাবে সেই টাকা দেব? তবে আমরা বিদেশী মুদ্রায় দিতে পারবো না, ভারতীয় মুদ্রায় দেব।
তখন শেখ মুজিব বললেন টাকাগুলো ট্রাকে করে পাঠিয়ে দিতে। বিস্মিত পি. এন. হাকসার শেখ মুজিবকে বললেন, "ট্রাকে করে টাকা কীভাবে দেবো? আমাদের তো সরকারি হিসাব-পদ্ধতি আছে, ব্যাংকিং পদ্ধতি আছে।" তারপর শেখ মুজিব বলেছিলেন, "সামনে আমার নির্বাচন, এই টাকা সে জন্যে আমার দরকার হবে।"
পি. এন. হাকসার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই নীতিবহির্ভূত আচরণ ও অর্থলিপ্সায় ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি মিসেস গান্ধী ও তাঁর সহকর্মীদের এ কথা জানান। ১৯৭২ সালের জুন মাসে ভারতের তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী ডি. পি. ধর মঈদুল হাসানকে এই ঘটনার কথা জানান। পরে ১৯৮১ সালে খোদ পি. এন. হাকসারও এর সত্যতা স্বীকার করেন।
উৎসঃ মঈদুল হাসান, 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' |
পৃষ্ঠা-১৪৩ [ছবিঃ গণকণ্ঠ, ৪ জানুয়ারী ১৯৭৪]