DMCA.com Protection Status
title=""

‘দুর্নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কারাগারে সাংবাদিক!

Untitled1দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ  দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তার করা চাঁদাবাজির মামলায় দুই সাংবাদিককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকরা হলেন- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঞ্জয় কুমার দাস এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের পটুয়াখালী প্রতিনিধি মো. জলিল।

স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান, মঙ্গলবার এই দুই সাংবাদিক আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ করে তাদের কারাগারের পাঠানোর আদেশ দেন পটুয়াখালীর বিচারিক হাকিম তপন কুমার দে।

সঞ্জয় কুমার দাস পটুয়াখালীতে অপসারণ করা বিভিন্ন বেইলি ব্রিজসহ ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রাংশের নিলামে দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে মালামাল বিক্রির টেন্ডারের কাজ পাওয়া নাজমা এন্টারপ্রাইজ, গাজী ট্রেডিং কর্পোরেশন ও কর্ণফুলী ইঞ্জিনিয়ারিং নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা খুলনা শহরের ৩৪ শেখ পাড়ায় দেখানো হলেও সেখানে এদের কোনো কার্যালয় নেই এবং তাদের কোনো তথ্য নেই বলেও জানিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন।

এ অনুসন্ধান চলাকালে গত ২৫ এপ্রিল পটুয়াখালী সদর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে সঞ্জয় ও জলিলসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরো ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন পটুয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হাসান আল মামুন।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, সঞ্জয় দাসসহ আরো একজন স্থানীয় সাংবাদিক ও অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন গত ২৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় তার সরকারি কোয়ার্টারে গিয়ে তার ভাইকে নানারকম ভয়ভীতি দেখান, গালাগালি করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সে সময় তিনি বাসায় ছিলেন না বলেও জানিয়েছেন ওই প্রকৌশলী।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ঘটনার আধ ঘণ্টা পর পটুয়াখালী টোল প্লাজায় গিয়ে সেখানে কর্মরত কার্য পরিদর্শক আবদুর রহমান ও আবুল বাশারকে আসামিরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন, গালাগালি করে আবদুর রহমানের পকেট থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে যান।

এ বিষয়ে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম মামলার বাদী প্রকৌশলী হাসান আল মামুনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তারা (আসামিরা) আমার কাছে চাঁদা দাবি করছিল। তারা আমাকে বলে, ‘আপনি (হাসান) তো এখানে অনেক টাকা পেয়েছেন। এখান থেকে আমাদের (আসামিদের) এত টাকা দেন’।” তিনি দাবি করেন, “আমি বলেছি, আমি এখানে ঢুকলামই নতুন, আমি কোথা থেকে টাকা দেব।”

নিলামে কাজ পাওয়া খুলনার অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এসব কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব। কার্যাদেশ অনুযায়ী মালামাল বুঝিয়ে দেয়ার কাজটি তার। এর জন্য আলাদা কমিটি রয়েছে তারা ভাল বলতে পারবেন।” নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যদের কাছে না চেয়ে তার কাছে কেন আসামিরা চাঁদা চাইলেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে তারাই (আসামিরা) ভাল বলতে পারবেন।” মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, “মামলাটা ইয়ে করছেন আর কি উনারা রাতের বেলা নাকি তার (হাসান) বাসায় গিয়ে বকাঝকা দিয়েছেন।”

ঠিকানাহীন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নিলামের জন্য ট্রেড লাইসেন্স লাগবে কেন?” এ বিষয়ে সওজের আইন কী জানতে চাইলেও স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি তিনি। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা গাছ অথবা ১০ মণ পচা কাঠের উদাহরণ টেনে তিনি জানান, ‘স্মল স্কেলের’ স্পট নিলামের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স দেখার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু নিরাপত্তা অর্থ জমা নেয়া হয়। মধ্যম বা বড় টেন্ডারেও ট্রেড লাইসেন্স দরকার নেই বলে তার সাধারণ ধারণা ব্যক্ত করেন। নিলামটির দরপত্র কবে আহ্বান করা হয়েছিল তিনি তা এড়িয়ে যান। এ পদে যোগ দেবার আগেই এই নিলামের কাজের দরপত্রের মূল্যায়ন শেষ হয় দাবি করেন তিনি।

এ মামলার আসামি সাংবাদিক সঞ্জয় মামলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল এ জেলার সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের কাছেও তথ্যের জন্য যান। সে সময় তাদের মধ্যে কথপোকথনের অডিও রেকর্ডটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে রয়েছে। সেদিন সঞ্জয় এ বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তাকে বলতে শোনা যায়, “এটা দিয়ে আপনি কী করবেন? এটা আপনার দরকার নেই, … বাদ দেন”। “বুঝতে পারছি আপনি একুট ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এত ক্ষুব্ধ হতে হয় না।”

এ সময় কথা প্রসঙ্গে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে বলেন, “উনি তো কর্মকর্তাদের অপমান করে খুশি হন।” এই কথপোকথনের প্রসঙ্গ টেনে বুধবার তার সাথে কথা বললে তিনি দাবি করেন এসব তথ্য তো তার কাছে নেই এবং যেখানে আছে সেখানে সঞ্জয়কে যেতে বলেছেন।

কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, তিনি ওই অফিসে যোগ দেবার আগেই এ সংক্রান্ত সব কাজ হয়েছে। এছাড়া এসব দেখার দায়িত্ব নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্যদের, তার নয় বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারের আইন সব জায়গায় এক। বৈধ প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোন কাজ দেয়ার বিধান নেই। অবৈধ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া নিয়ে কোনো তদন্ত করবেন কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কেউ চাইলে আমরা তা করবো।”

গত ৩১ জুলাই সদর থানার এসআই আজহার তদন্ত শেষে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। আগামী ২৮ অগাস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য ছিল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!