২১শে অাগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য জিয়াউর রহমানের পরিবারকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এই খুনি পরিবার থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করতে হবে। খুনিদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না”।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, “এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যে বিএনপি সরকার, বিএনপি-জামাত জোট, বিএনপির নেত্রী, তার ছেলে তার মন্ত্রীরা ওতপ্রেতভাবে জড়িত, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
আরেকটা খবর নিয়ে দেখবেন, এই ঘটনার আগে তারেক জিয়া তার শ্বশুরবাড়িতে দীর্ঘদিন ছিল। ধানমন্ডির পাঁচ নম্বর রোডে বাসা। ঠিক পহেলা অগাস্ট সে এই জায়গা ছেড়ে ক্যান্টনমেন্টে মায়ের বাসায় কেন চলে গেল? কাজেই এরকম বহু তথ্য রয়েছে।”
২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার দশম বার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দেয়ার পর এক সমাবেশে একথা বলেন শেখ হাসিনা।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট এই স্থানে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন, অঙ্গহানি হয় অনেকের।
হামলার বার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচিতে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহত অনেকেই যোগ দেন। আহত অনেককে জড়িয়ে ধরে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
সেদিন হামলার সময় দলের নেতা-কর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করেছিলেন দলীয় প্রধানকে। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
সমাবেশে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা যদি একটু লক্ষ্য করে দেখেন ’৭৫ এর ঘটনার সঙ্গে (বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড) ঠিক যেভাবে জিয়া জড়িত, ২১ অগাস্টের ঘটনার সঙ্গে তখনকার যিনি প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির নেত্রী এবং তার ছেলে, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য- তারা পর্যন্ত এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।”
গ্রেনেড হামলার মামলার অধিকতর তদন্তে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়। তবে বিএনপির দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে আসামি করা হয়েছে।
তারেকের সঙ্গে আসামির তালিকায় যোগ হন খালেদার সরকারের মন্ত্রী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও।
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা খুনি পরিবার, একটা দেশের ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চায়। একটা খুনি পরিবার এদেশের মানুষকে হত্যা করে, লুটপাট করে, অগ্নিসংযোগ করে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করতে চায়।
“এই খুনি পরিবার; তাদের কাজই ছিল দুর্নীতি করা, মানুষ খুন করা। এর বেশি কিছু তারা করতে পারেনি। এটাই তারা করে গেছে। এবারো নির্বাচন ঠেকানোর নামে যেসব ঘটনা তারা ঘটিয়েছে, সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী অপরাধ তারা করেছে।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে সারাদেশে একযোগে জেএমবির বোমাহামলা, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“এদের কাজই হত্যাকাণ্ড চালানো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, আমরা কথা দিয়েছিলাম। সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ আমরা শুরু করেছি এবং রায় কার্যকরও শুরু হয়েছে। আমরা জানি বিএনপির নেত্রীর তাদের প্রতি যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে বলেই তিনি আন্দোলনের নামে মানুষকে হত্যা করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন।”
একাত্তরের পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারা ব্যাহত করে পেছনের দিকে নিতে চায় মন্তব্য করে তা প্রতিরোধে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কারো শক্তি নেই এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা।
নিজের ওপর একাধিকবার হামলার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তিনি মৃত্যুর পরোয়া করেন না, অভীষ্ঠ লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেনই।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে আসেন বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর ২১ অগাস্ট শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
সেদিনের হামলার বিবরণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “এতগুলো গ্রেনেড মারা হল, কিন্তু প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হল না। প্রত্যেকটা আলামত নষ্ট করা হয়।
“আহত মানুষদের হাসপাতালে নেয়া হয়নি। দলীয় নেতাকর্মীরা যারা আহতদের হাসপাতালে নিচ্ছিলেন তাদের ওপর কাঁদুনে গ্যাস মারা হয়। ওই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বিএনপি মনোভাবাপন্ন চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন না।”
“২৩ কি ২৪ তারিখে সিএমএইচে আইভি রহমানকে দেখতে যাবেন খালেদা জিয়া। এই দেখতে যেয়ে উনার (আইভি রহমান) ছেলে-মেয়ে সবাইকে একটা ঘরে তালাবন্দি করে রাখা হল। কাউকে থাকতে দেয়া হল না। তারপরে খালেদা জিয়া গেল তাকে দেখতে, একটা ছবি তুলতে। এরপরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হল।”
সংসদে এ বিষয়ে যখন আলোচনা করতে চাওয়া হলেও কথা বলতে দেয়া হয়নি বলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা দাবি করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যারা জড়িত কর্নেল রশিদ, কর্নেল ফারুক ইন্টারভিউ দিয়েছিল; সেখানে তারা বলেছিল, বিষয়টি নিয়ে তারা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং জিয়াউর রহমান তাদেরকে কাজটি করবার জন্য উৎসাহ দিয়েছিল।
সরাসরি সে থাকবে না, সফল হলে সে আছে এবং তার সবরকম সহযোগিতা থাকবে- এ আশ্বাস দিয়েছিল। এটা আমার কথা না, এটা কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশিদ অ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে বলেছিল। এ ধরনের আরো বহু তথ্য আছে।”