দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের খলনায়ক। মহান মুক্তিযুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আত্মসমর্পণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের লজ্জা ঢাকতে ও তাদের খুশি করতে মুক্তিযুদ্ধের আত্মসমর্পণের স্থানটিতে পরিকল্পিতভাবে শিশুপার্ক নির্মাণ করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা ইতিহাসকে মুছে ফেলতে ও বিকৃত করতে চায়, তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে আবৃত্তি সংগঠন সংবৃতার নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ষষ্ঠ আবৃত্তি উত্সব ২০১৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সংবৃতার আয়োজনে দু’দিনব্যাপী এ উত্সবে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব শহীদউল্লাহ খন্দকার, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকসুর-এ-সাত্তার কল্লোল।
সভাপতিত্ব করেন সংবৃতার সভাপতি একেএম সামছুদ্দোহা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান বাবু। দু’দিনব্যাপী উত্সবটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উত্সর্গ করা হয়। শোকের মাস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের মতো ব্যক্তিরা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হন। তাদের মতো যারা রাজনীতিকে নিয়ে বাণিজ্য করে, দেশবাসীকে তাদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মাঠে-ঘাটে আন্দোলন করে, দেয়ালে চিকা মেরে, পোস্টার লাগিয়ে তারা রাজনৈতিক কর্মী হয়েছেন। আর জিয়ার মতো যারা উপর থেকে নাজিল হয়, তারা রাজনৈতিক কর্মী নয়, রাজনৈতিক কর্মচারী। এই কর্মচারীরাই রাজনীতিকে সুস্থধারায় রাখতে দেয়নি।
ইনু বলেন, তবে দেশ ওই নষ্ট সময় পার করে সুসময়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কাছে ফিরে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। রাজাকারদের ফাঁসি হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। তাই এখনকার সময় নষ্ট সময় নয়, ঘুরে দাঁড়ানোর সময়।
তিনি বলেন, এ জন্য দেশবাসীকে সাম্প্রদায়িকতা, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এখানে যারা তাদের পক্ষাবলম্বন করবে, তারাই পাকিস্তানের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাদের বাংলাদেশকে রক্তাক্ত পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বানাতে দেয়া হবে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের শান্তির জন্যই তার মতো ব্যক্তিরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত শান্তি এনে দিতে পারেননি বলে ক্ষমা চেয়ে মন্ত্রী বলেন, তবে আশার কথা রাজাকার ও জঙ্গিবাদকে শেষ করতে তারা এখনও যুদ্ধেই আছেন।
ভাষা, সাহিত্য, আন্দোলন, সংগ্রাম সবই তাদের পক্ষে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি, ২১ শে আগস্টের খুনি ও রাজাকারদের শেষ না করা পর্যন্ত তাদের এ যুদ্ধ চলবে। যেদিন বাংলার প্রতিটি শিশু এ ভূখণ্ডে শান্তিতে ঘুমাতে, কবিতা আবৃত্তি করতে ও গান গাইতে পারবে, সেদিনই এ যুদ্ধ শেষ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়ার বানানো জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদাররা মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করে যেমন বাংলাদেশের হৃদপিণ্ডকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে, তেমনি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিন বেগম জিয়া মিথ্যা জন্মদিন পালন করে বাংলাদেশের হৃদয়কে খণ্ড-বিখণ্ড করছে।
তিনি বলেন, বেগম জিয়া আসলে পাকিস্তানি খুনি ও ১৫ আগস্টের খুনিদের খুশি করতেই এই বানানো জন্মদিন পালন করে বাংলাদেশের হৃদপিণ্ডে ছুরি চালাচ্ছেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আবৃত্তিকারদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিবন্ধিত শিল্পী হওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি শীঘ্রই পূরণ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন।
এ চার পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২শ’ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছে। উত্সবের সমাপনী হবে শনিবার সন্ধ্যায় টিএসসি মিলনায়তনে।