( ধারাবাহিক লেখার ১ম পর্ব)
ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের দুর্দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাহসিকতার সাথে বারবার এগিয়ে এসেছেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা কিংবা ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের ঘটনা বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে জড়িত বলেই জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। আর তাঁর হাতে গড়া দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে যে অবদান রেখেছে বিশ্বে এর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার হিসেবে তিনি এ রাজনৈতিক দলটি গঠন করেছিলেন। বাকশাল বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বৈরাচার পতন, আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে বাংলাদেশ রক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামে দলটি ৩৫ বছর পেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের প্রেক্ষাপট বর্ণনায় স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্রও চলে আসে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী স্বাধীন দেশে গণমানুষ যে তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলেছিল, নিমিষেই তা বিষাক্ত হয়ে ওঠে। রক্ষী বাহনীসহ লাল বাহিনী, নীল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষের ওপর নতুন করে চেপে বসে ‘বাকশাল’ নামের স্বৈরাচার ও দুঃশাসনের খড়গ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক আলোচিত অধ্যায়। এই দিন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসারের বল প্রয়োগমূলক ঘটনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। ১৬ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ নিজেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। সে সময়ে সেনাবাহিনীর প্রধান কেএম শফিউল্লাহ, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর ও আনসারসহ সব বাহিনীর প্রধান নতুন এ সরকারের প্রতি আনুগত্য ও সমর্থন ব্যক্ত করেন।
১৬ আগস্ট বাসস ও রয়টার্সের এক খবরে লন্ডন প্রবাসী অনেক বাঙালি নতুন এ সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বলে প্রচার করে। এছাড়াও বলা হয় মওলানা ভাসানীসহ অনেক রাজনীতিবিদ নতুন সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। আগস্ট বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. ডেভিস ই বোস্টার এবং সোভিয়েত চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. জিকে গ্রুসেস্কি নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সমর্থন জানান। (দৈনিক বাংলা, ২১ আগস্ট ১৯৭৫)
২৪ আগস্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম পিএসসি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। অন্যদিকে জেনারেল এমএজি ওসমানীকে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর জোয়ানদের উদ্দেশে এক ভাষণ দেন। তিনি অফিসার ও জোয়ানদের শৃংখলা ও দেশের জন্য আত্মোৎসর্গের নজির স্থাপনের আহ্বান জানান। জেনারেল জিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ‘জাতীয় সেনাবাহিনী’ উল্লেখ করে প্রশিক্ষণ, কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার দ্বারা অফিসারদের নিজ নিজ পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির আহবান জানান। চিফ অব স্টাফ নিষ্ঠা, ত্যাগ ও মমত্ববোধের মনোভাব দিয়ে অফিসারদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন।
ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’ শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ‘ফল অব এন আইডল’ নামে একটি বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ প্রকাশ করে। তাতে উল্লেখ করা হয় ‘দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি গুরুতর সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে। ‘সিঙ্গাপুরের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য স্ট্রেইট টাইমস’ ১০ সেপ্টেম্বর ’৭৫ এক সম্পাদকীয় নিবন্ধ ছাপে। নিবন্ধে উল্লেখ করা হয় ‘অসহায়তা, অপুষ্টি, নানা রকম রোগব্যাধি, বেকারত্ব দুর্নীতি ও স্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতিতে তিনি শেখ মুজিবুর) কেবল বক্তৃতা ও জনসভাই করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত একথাও বলেছেন, আমার হাতে আলাদিনের প্রদীপ নেই। যার ফলশ্রুতিতে পরিবর্তন হয়ে ওঠে অনিবার্য।’ এশিয়ার বিখ্যাত সাপ্তাহিক ‘দ্য ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ’ শেখ মুজিবের পতনকে তার আত্মঅহঙ্কার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বিরোধী মনোভাব, অতিমাত্রায় ব্যক্তি কেন্দ্রিক ক্ষমতায় বিশ্বাসের পরিণতি বলে মন্তব্য করে।
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে অধিকতর দেশপ্রেম জাগাতে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে স্বাধীনতা ও সার্বাভৌমত্ব রক্ষায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সেনা সদস্যদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ অক্টোবর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ইঞ্জিনিয়ার্স মসজিদ উদ্বোধনকালে বলেন, ‘ধর্মীয় বিশ্বাস ছাড়া বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করা যায় না। আমাদের মতো ক্ষুদ্র দেশের সৈনিকরা যদি ধর্মীয় উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হন, তাহলে যে কোন ধরনের প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।’
সিপাহী-জনতার বিপ্লবঃ
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে আর একটি ঐতিহাসিক দিন। এ দিন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীকের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে সিপাহী জনতা ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে এ দেশের রাজনীতির গতিপথ নতুন করে নির্মাণ করে। তৎকালীন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য রাতের আঁধারে বিদ্রোহ করে। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নিজেকে সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ৩ নভেম্বর সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দি করেন। ওইদিন জাতীয় চারনেতাকেও জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাককে পদচ্যুত করে ৬ নভেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।
জিয়াউর রহমান ৩ নভেম্বর বন্দি হবার পর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই চার দিন দেশ ও দেশের জনগণ দুঃসহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে। ৬ নভেম্বর রাত প্রায় ১টার সময় সশস্ত্র বাহিনীর পুনরুত্থানবাদী চক্রের বিরুদ্ধে বীর জনগণ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহীরা বিপ্লব ঘটিয়ে ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে বন্দি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন। সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে গত চার দিনের দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটে। আওয়াজ ওঠে ‘সিপাহী জনতা ভাই ভাই’, ‘জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ’। ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিরাপদ হয়।
৭ নভেম্বর শুক্রবার সকালে জিয়াউর রহমান রেডিও বাংলাদেশ-এ এক ঘোষণায় বলেন, প্রিয় দেশবাসী আসসালামু আলাইকুম, আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং অন্যদের অনুরোধে আমাকে সাময়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চীফ মার্শাল ‘ল’ এ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে। এই দায়িত্ব ইনশাআল্লাহ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সর্বত্র অফিস, আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, মিল-কারখানাগুলি পূর্ণভাবে চালু থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। বাংলাদেশ- জিন্দাবাদ।
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিপাহী জনতার সফল বিপ্লব ও বেতারে জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে হাজার হাজার মানুষ নেমে এসেছিল রাজপথে। আনন্দে উদ্বেল মানুষের এক অভূতপূর্ব জোয়ার নেমেছিল ঢাকার পিচ ঢালা রাস্তায়। পরের দিন জাতীয় দৈনিকগুলোতেও লাল-কালো হেডলাইনে সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও রাজধানীতে সাধারণ মানুষের উল্লাসের খবর প্রকাশিত হয়।
দৈনিক ইত্তেফাকে ‘প্রাণবন্যার উচ্ছল নগরী’ শিরোনামে সিপাহী-জনতার বিপ্লব সম্পর্কে প্রকাশিত ৮ নভেম্বরের রিপোর্ট : ‘তখনো আকাশে অন্ধকাল ছিল। গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত শেষ রজনীর ঢাকা। শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তগুলি ছিল যুগের মতো। বিনিদ্র রাত্রিতে আতঙ্কিত নগরবাসী হয়তো ভেবেছিল একাত্তরের সেই পাষাণ ঢাকা দিনগুলির কথা। এমনি সময়ে রেডিও বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রের ঘোষকের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো শ্লোগান ‘সিপাহী বিপ্লব জিন্দাবাদ’। উৎকণ্ঠ নগরবাসীর শ্রবণেন্দ্রিয়। এই অসময়ে রেডিও কি বার্তা শোনাবে? ঘোষকের কণ্ঠে ঘোষিত হলো : ‘সিপাহী বিপ্লব সফল হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাত থেকে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করা হয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিবেন।’ ঘোষকের এ ঘোষণার মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটল চার দিনের অস্বস্তিকর দুঃস্বপ্নের। ভোরের আলো উঠিবার আগেই জনতা নামিল রাস্তায়। প্রচন্ড গুলির মুখেও নিঃশঙ্ক দুঃসাহসী পদক্ষেপে। রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি আর ট্যাংকের ঘর ঘর শব্দ। ইহার পর মিছিল, মিছিল আর মিছিল। সিপাহীদের প্রতি উৎফুল্ল অভিনন্দন বা হৃদয় নিংড়ানো আলিঙ্গন। সেনাবাহিনী পরিণত হইল জনগণের সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকাল মুখরিত হইল জনতার জয়নিনাদে। সামরিক বাহিনীর গাড়িতেই নহে-বাস ট্রাকে সেই একই দৃশ্য। দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য আকুল আবেদন রাখিয়াছেন-কামনা করিয়াছেন জনগণের ঐকান্তিক সহযোগিতা। সিপাহীদের সঙ্গে জনতার আনন্দোচ্ছল প্রাণের স্পন্দন একই লয়ে স্পন্দিত হইয়াছে গতকাল।
মানুষের আনন্দের জোয়ার ও অস্থিরতা কমে আসলে ১০ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম দপ্তর বন্টন করেন। দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রেসিডেন্টের সচিবালয়, কেবিনেট সচিবালয়, পকিল্পনা, আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন প্রেসিডেন্ট নিজে। তিনজন উপপ্রধান সামরিক আইন শাসনর্তা নিযুক্ত হন। তারা হলেন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম পিএসসি, নৌবাহিনী প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন খান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়াভাইস মার্শাল এম জি তাওয়াব।
জিয়াউর রহমান শিল্প, বাণিজ্য, পাট, শিক্ষা, বিজ্ঞান, কারিগরি গবেষনা, আনবিক শক্তি, অর্থ, স্বরাষ্ট্র ও তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি তাওয়াব বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক টেলিফোন ও টেলিগ্রাম, পেট্টোলিয়াম, গণপূর্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
কমোডর মোশাররফ হোসেন খান পান বন্দর, জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, যোগাযোগ, বন্যা নিয়ন্ত্রন, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ, শ্রম সমাজকল্যাণ, সংস্কৃতিবিষয়ক ও ক্রীড়া, ভূমি প্রশাসন ও ভুমি সংস্কার, বন, মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। (১১ নভেম্বর ১৯৭৫, দৈনিক বাংলা)
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে সেনাপ্রধান জিয়ার ভাষণঃ
১৯৭৫ সালের ২৩ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ভাষণ দেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক। সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই সরকারের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য সাধনে সরকার ও দেশের প্রশাসনকে দৃঢ় ও কার্যকর রাখতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের দেশের জনগণ ভাল করে জানে-কারা দেশের শত্রু। আমাদের দেশের জনগণ জানে-কারা দেশের স্বার্থে এবং কারা স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে। জিয়া হিংসাত্মক ও নাশকতামুলক কাজে লিপ্ত ব্যক্তি এবং যে সব বহি:শক্তি আমাদের ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য জনসাধারনের প্রতি আহ্বান জানান।
১৯৭৬ সালের ৭ জনুয়ারি জিয়াউর রহমান রামপুরা টেলিভিশন কেন্দ্রে তথ্য ও বেতার দপ্তরের পদস্থ কর্মচারীদের এক সমাবেশে বলেন, জাতীয় ভাবাদর্শে অবিশ্বাসীদের দ্বারা দেশের মঙ্গল হতে পারে না। তিনি দেশের মানুষকে জাতীয় অগ্রগতি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও গণশিক্ষা বিস্তার সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার কাজে বেতার সংবাদপত্র ও অন্য গণমাধ্যগুলোর ভূমিকার উপর গুরত্বারোপ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সব জনগণকে এক দৃষ্টিতে দেখার জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন। শ্রেনী-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমস্যা সমাধানের প্রতি ছিল তাঁর নজর। ১৯৭৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গারো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উপজাতিদের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করবে। গারো এলাকার জনসাধারণের যোগাযোগ ও অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে সরকার সজাগ রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা চান তিনি।
৭ ফেব্রুয়ারি জিয়াউর রহমান ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন এর উদ্যোগে আয়োজিত কন্টিনিউইং মেডিকেল এডুকেশন- এর উদ্বোধনীতে বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্য শিক্ষায়াতনগুলোতে উপযুক্ত শিক্ষা লাভের অনুকুল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার সংকল্পবদ্ধ। শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষায়াতন সমূহের যা কিছু প্রয়োজন, তা সবই দেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘নানা কারণে গত দশ বছরে আমাদের শিক্ষায়াতনগুলোতে যেমন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে ভালভাবে লেখাপাড়া হয়নি। যার ফলে জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে প্রায় একটি জেনারেশন গ্যাপের সৃষ্টি হয়েছে।
১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ রামপুরা টেলিভিশন ভবনে বেতার ও তথ্য বিভাগের পদস্থ অফিসারদের এক সমাবেশে জেনারেল জিয়া বলেন, ‘আমরা সকলে বাংলাদেশি, আমরা প্রথমে বাংলাদেশি এবং শেষেও বাংলাদেশি। এই মাটি আমাদের, এই মাটি থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা আহরণ করতে হবে। জাতিকে শক্তিশালী করাই আমাদের লক্ষ্য। ঐক্য, শৃংখলা, দেশপ্রেম, নিষ্টা ও কঠোর মেহনতের মাধ্যমেই তা সম্ভব। শিল্পী, চিত্রকর, লেখক, কবি ও সাংবাদিকরা সৃজনশীল কর্মী এবং জনসাধারণ তাদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। তারা জনগণেকে অনুপেরণা দিতে পারে। টেলিভিশন আমাদের জীবনে ও সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনে সমর্থ।’ এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই জাতীয়তাবাদের দর্শন স্পষ্ট বোঝা যায়। ১৮ মার্চ ‘৭৬ অর্থনীতি সমিতির সমাপনী অধিবেশনে জেনারেল জিয়া বলেন, ‘সভ্যতার বাণী পল্লীর দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগণের নিকট পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশ মানে একটি গ্রাম, বাংলাদেশকে উন্নত করতে হলে গ্রাম উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে উন্নত করতে হবে।’
২৫ মার্চ ’৭৬ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে জিয়া বলেন, ‘জনগণের অপূর্ণ প্রত্যাশা পূরণে নতুন শপথ নিতে হবে। যে আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলনের জন্য আমরা স্বাধীনতার পথে পা বাড়িয়েছিলাম জনসাধারনের সেই প্রত্যাশা আজও পূর্ণ হয়নি। তা পূরণ করার জন্য আামদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। আমরা কারও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক, তাও আমাদের অভিপ্রেত নয়। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কিছুতেই ক্ষুন্ন হতে দেব না।’
১ এপ্রিল ’৭৬ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান খুলনায় এক জনসভায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের সমস্যাগুলির সমাধানের উদ্দেশ্যে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চিরদিন থাকবে এবং এ দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে অটুট থাকবে।'
জাতিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও জাতীয়তাবাদের প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ৬ এপ্রিল ’৭৬ কমিল্লা স্টেডিয়ামে এক জনসভায় জিয়াউর রহমান বলেন, ‘পার্টিতে পার্টিতে, গ্রুপে গ্রুপে অতীতের সকল পার্থক্য ভুলে গিয়ে দেশের প্রগতির জন্য ‘বাংলাদেশি’ রূপে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশ একটি সুবৃহৎ গ্রাম ছাড়া আর কিছুই নয়। গ্রামভিত্তিক স্বনির্ভর কর্মসূচি জনপ্রিয় করার জন্যে আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
শুধু দেশে নয়, উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে সচেষ্ট ছিলেন জিয়াউর রহমান। ২৪ এপ্রিল ’৭৬ সিলেট স্টেডিয়ামে জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন, উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। উপমহাদেশে শান্তিপূর্ণ অবদান রাখতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ টিকে থাকার জন্য এসেছে এবং যেকোন মুল্যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হবে।
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে জিয়াউর রহমানের ভাষণঃ
রাজনীতিতে ঢোকার আগে ১৯৭৬ সালের ১ মে জেনারেল জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। জেনারেল জিয়া বলেন, বাংলাদেশ আজ সার্বভৌম ও স্বাধীন। এর প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ ও আনসার, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ প্রস্তুত। মে দিবস উপলক্ষে জিয়াউর রহমান শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে একই ভাষণ দেন। জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা সবাই শ্রমিক। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মে দিবসের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য সরকার এ আশ্বাস দিচ্ছে যে, শ্রমিকদের স্বার্থ সর্বদাই অক্ষুন্ন রাখা হবে। জেনারেল জিয়া বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য সরকার অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসবের মধ্যে তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা ট্রেড ইউনিয়ন ট্রেনিং, পেশাগত ও কারিগরি, মেধা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি, চাকরির নিশ্চয়তা বিধান, পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা প্রভৃতি রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জেনারেল জিয়া আত্মনির্ভশীলতা অর্জনের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘অলসতা দূর করে আমাদের অধিক পরিশ্রম করতে হবে। শতকরা ২০-২৫% উৎপাদন বৃদ্ধির শপথ নিতে হবে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি আমলে আমরা ৭ ঘন্টা কাজ করতে পারলে নিজেদের দেশ গড়ার জন্যে প্রয়োজনে আমারা ২০ ঘন্টা করে কাজ করতে প্রস্তুত।’
১৯৭৬ সালের ৬ মে চীনের রাষ্ট্রদূত চুয়াং ইয়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় চুয়াং বলেন, বাংলাদেশের প্রতি চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তখন জিয়া বলেন, সমতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হবে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জিয়াউর রহমানঃ
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের ১১ মে ৪০ জাতি ইসলামী সম্মেলনে যোগ দিতে তুরস্ক যাত্রা করেন। এটাই ছিল জিয়াউর রহমানের প্রথম বিদেশ সফর। ১৩ মে মেজর জেনারেল জিয়া ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে ভাষণ দেন। তিনি গঙ্গার পানি বন্টনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ইসলামী সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বলেন, মাসওয়ারি ভিত্তিতে গোটা বছরের জন্য আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায়সঙ্গত বন্টনের মধ্যেই গঙ্গার পানি সমস্যার একমাত্র সমাধান নিহিত। দুটি দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার অধিকারী বাংলাদেশ এবং সেই কারণে যুক্তিসঙ্গতভাবেই পানির ন্যায্য অংশ চাই। দৈনিক বাংলা, ২২ মে ’৭৬)
ইস্তাম্বুলে ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলনে যোগদান শেষে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমাদের সহাযোগিতা ও ভ্রাতৃসম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। সৌদি আরবের বাদশা খালেদ, তুর্কী প্রধানমন্ত্রী সোলায়মান ডেমেরেল, ইরানের প্রধানমন্ত্রী আমির আব্বাস হোবায়দা ও মুসলিম নেতাদের সাথে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
জিয়াউর রহমান দেশকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুসম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি গ্রাম উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছিলেন। এজন্য তিনি সব জনগণকে পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। ১৯৭৬ সালের ১ জুন বঙ্গভবনে পল্লী উন্নয়ন পরিষদের এক বৈঠকে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সঠিক পথে প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে। বিশেষ করে যারা হতভাগ্য তাদের যেন কাছে পৌঁছে। পল্লী অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নতি হলে গ্রাম থেকে শহরে যাত্রার মোড় সম্পূর্ণ ঘুরে যাবে এবং উল্টো হাওয়া বইবে।’ জিয়া বলেন, ‘পল্লী এলাকায় বিদ্যুতায়ন দ্রুততর করা সরকারের নীতি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন তৎপরতা বিশেষ করে কৃষি, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যরক্ষা সম্পর্কে পল্লী এলাকার মানুষদের শিক্ষা দিতে সরকার টেলিভিশন এবং বেতার প্রচার ব্যবস্থা সম্প্রসারণের নীতি গ্রহণ করেছে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনঃ
মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় ভিত্তিতে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমান একটি স্কিম প্রণয়ন করেন। ১২ জুন ’৭৬ ঢাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় দপ্তর উদ্বোধন উপলক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান এক বাণীতে বলেন, যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দৃঢ়তা ও সজাগ দৃষ্টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর মোকাবেলা করেছিলেন, তার সদ্ব্যবহার করা হয়নি। পরের দিন বেইলি রোডে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন এবং তাদের দেশগঠনের কাজে নিযুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা শৌর্য-বীর্য ও আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা ইতিহাসে অতুলনীয়। তিনি বলেন, অতীতে নজিরবিহীন স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের খ্যাতিই বিনষ্ট করা হয়নি বরং জাতির মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে যে দেশপ্রেম দিয়ে আপনারা অংশ নিয়েছিলেন, সেই দেশপ্রেম নিয়ে এবার অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে শামিল হবেন।
সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোর আগ্রহ প্রকাশঃ
১৯৭৬ সালের আগষ্টের প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরাসরি বক্তব্য দেন। ৩ আগস্ট ’৭৬ বঙ্গভবনে পদস্থ কর্মচারীদের সমাবেশে জিয়া বলেন, সরকার দেশে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ, যে ব্যবস্থা জনগণকে তাদের অধিকার ও ক্ষমতা প্রয়োগের পূর্ণ সুযোগ প্রদান করবে। আমাদের জনগণ দীর্ঘকাল ধরে শোষণ ও দুর্দশার স্বীকার। সৌভাগ্যবশত এখন তারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুফল লাভে সমর্থ হয়েছে। কোন অবস্থাতেই তারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করে না। গোষ্ঠী ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য রাজনীতি ব্যবহার করা অনুচিত। জনগণের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবে রূপান্তরিত করা প্রত্যেকের কর্তব্য।
ফারাক্কা সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন জিয়াঃ
১২ আগস্ট ’৭৬ জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় জিয়াউর রহমান বলেন, ফারাক্কা ও সীমান্ত সংঘর্ষ বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। কোন দেশেরই অন্য কোন দেশের উপর আধিপত্য বিস্তারে কিংবা অথনৈতিকভাবে দেশকে পঙ্গু করার চেষ্টা করা উচিত নয়। সব দেশেরই নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নিজেদের ভাগ্যের রূপ দেয়ার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। এই অধিকার প্রয়োগের সুযোগ সবাইকে দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দু’টি প্রধান সমস্যার মোকাবিলা করছে। তা হল ফারাক্কা ও সীমান্ত ইস্যু।
(চলবে………………)