DMCA.com Protection Status
title="৭

বিশ্বসভায় সফল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশঃ ফোর্বস ম্যাগাজিনে ‘এপেক্স ফুটওয়্যার’

images2বিশ্বসভায় এক ভিন্ন বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছে এপেক্স ফুটওয়্যার। তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে বারবার দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের ভাবনার ধরণ বদলে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এপেক্সের কর্মযজ্ঞ ঢাকা শহর থেকে ২৫ মাইল উত্তরে, গাজীপুর জেলায় ২৪ একর জায়গা জুড়ে। গাজীপুরে পোশাক কারখানাগুলোর আধিপত্যই বেশি। সেই গাজীপুরেই ৫ হাজার ৫০০ শ্রমিক, বিশেষ করে নারীরা এপেক্স ফুটওয়্যারের কারখানায় বিভিন্ন স্টাইলের চামড়ার জুতা তৈরিতে ব্যস্ত।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত এপেক্স ফুটওয়্যার, বাংলাদেশের শীর্ষ জুতা রপ্তানিকারক কোম্পানি। দুই দশকেরও আগে চামড়ার জুতা প্রস্তুত করা শুরু করে কোম্পানিটি। বর্তমানে এপেক্সই উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। এটি ৪০টি দেশের ১৩০টি খুচরা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে বছরে ৪৫ লাখ জুতা(জোড়া) সরবরাহ করে। ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসি অ্যান্ড#০৩৯ ও জেসি পেনি, জাপানের এবিসি মার্ট ও জার্মানির ডেইচম্যান। তাছাড়া দেশীয় বাজারের জন্য এটি ৩০ লাখ জুতা তৈরি করে যা সারাদেশে ৫০টি চেইনে আউটলেটের মাধ্যমে বিক্রি হয়।

গাজীপুরের এপেক্স পাদুকা কারখানায় যেদিনই যান না কেন, কারখানার আন্তর্জাতিক মান দেখে বিস্মিত হবেন যেকেউ। ভেতরে রয়েছে সমৃদ্ধ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট, একটি মেডিকেল ক্লিনিক এবং একটি ডে-নার্সারি। শ্রমিকরা মাসে বেতন পায় গড়ে ১০০ মার্কিন ডলার,  এছাড়া তাদের চিকিৎসা ও জীবন-বীমা সুবিধা রয়েছে। লভ্যাংশের ভাগ ছাড়াও শ্রমিকরা বছরে দু’বার বোনাস পায়।

শপ ফ্লোরে কাজ করা ৩০ বছর বয়স্ক রওশনারা খাতুন বলেন, এসব সুবিধা ও দৈনিক আট ঘন্টা ডিউটির দিকে আকৃষ্ট হয়েই তিনি পোশাক কারখানার আগের চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে আসেন। তার আগের চাকরিতে ডিউটি ছিল দৈনিক ১২ ঘন্টা।

বর্তমানে এপেক্সের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০০মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মানজুর এলাহী জানান, যেহেতু জুতা তৈরি সম্পূর্ণ শ্রম নির্ভর ব্যবসা এবং তৈরি পোশাক শিল্পের প্রাণকেন্দ্রে আমাদের এই কার্যক্রম চালাতে হয়, তাই আমাদের সবসময় এক কদম এগিয়ে থাকতে হয়। আমরা আমাদের প্রতিযোগীদের কাজের মান ও শ্রমিকদের সুবিধা দেখি। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের সুবিধার জন্যই কাজটি করতে হয়। এপেক্সের তালিকাভুক্ত চামড়া উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে এপেক্স ট্যানারি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স।

এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মন্জুর  এলাহী ও তার ছেলে একত্রে বৈশ্বিক পাদুকা ব্যবসায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরছেন অনেক উঁচুতে। ফোর্বসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জনাব এলাহী বলেন, ১৯৭৫ সালে সরকার যখন চামড়াশিল্পকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তিনি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঢাকার হাজারিবাগে নিলামে ওঠা ওরিয়েন্ট ট্যানারি ১.২২ মিলিয়ন টাকা দিয়ে কিনে নেন তিনি।জনাব এলাহী জানান, তার ‘লাকি নাম্বার’ হলো এক ও দুই। এরপর তিনি এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘এপেক্স’।

বর্তমানে বৈশ্বিক জুতা উৎপাদনের ৬০ শতাংশই চীনের দখলে। তবে, চীন পয়লা নম্বরে থাকলেও, এর শ্রমমূল্য ক্রমাগত বাড়ায় খুচরা বিক্রেতারা বিকল্প হিসেবে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের জন্য এখন সুসময় বলেই মনে করছেন  জনাব মন্জুর এলাহী । এশিয়াতে শ্রমমূল্য সবচেয়ে কম। আর বাংলাদেশে শ্রমমূল্য চীনের এক-চতুর্থাংশ। ২০১০ সালে থেকে বাংলাদেশে থেকে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে। এর অর্থমূল্য দাড়িয়েছে ১.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও বৈশ্বিক হিসেবে এর পরিমাণ এখনও ১ শতাংশেরও কম। এবং এর ১৫ শতাংশই এপেক্স গ্রুপের। জার্মানি থেকে মেশিন ও নকশা আমদানি করে এপেক্স। সম্প্রতি ইউরোপের জন্যও জুতা তৈরি করছে এপেক্স।

বাংলাদেশের এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক কূটনীতিক ফারুক সোবহান বলেন,এপেক্স এখন পাদুকা শিল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং বাকিদের প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!