DMCA.com Protection Status
title="৭

এতক্ষনে অরিন্দম কহিলো বিষাদেঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়নি : দুদক

2_94322পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলা থেকে সন্দেহভাজন দুই আসামি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আদালতে গ্রহণযোগ্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারায় বুধবার কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে সাবেক দুই মন্ত্রীর পাশাপাশি এজাহারভুক্ত আসামি সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসেইন ভূইঞা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মোঃ ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন।

 

২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নম্বর ১৯) সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পড়ে দুদকের উপপরিচালক মীর্জা জাহিদুল আলমের ওপর। রোববার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর জমা দেন তিনি।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার দুপুরে কমিশন সভায় পদ্মা সেতুর দুর্নীতি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করা হয়। সভা থেকে মামলাটি আর না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তদন্তে আসামিরা সবাই নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি ও নির্দোষ সার্টিফিকেট দেবে দুদক।

 

এ বিষয়ে বুধবার বিকালে এক আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে_ বিশ্বব্যাংকের এ অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে আমরা দুই দফা অনুসন্ধান করি। প্রথম দফায় ঠিকাদার নিয়োগে এবং দ্বিতীয় দফায় পরামর্শক নিয়োগে অনুসন্ধান করা হয়। ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অনুসন্ধানটি নথিভুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় বিশ্বব্যাংক দাবি তোলে, পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে।

 

গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়। পরে আমরা অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মামলা দায়ের করি। মামলাপরবর্তী তদন্তে আমরা দুর্নীতি বা দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগের কোনো সত্যতা পাইনি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক টিমের সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের এমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি, যার ভিত্তিতে আমরা তদন্ত চালিয়ে যেতে পারি।

 

দুদকের কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করেছিল, কানাডার এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার ডায়েরিতে ঘুষের তালিকা ছিল। কিন্তু ডায়েরির কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। কানাডার আদালতে বলা হয়েছে, নোটপ্যাডের কথা। নোটপ্যাড আর ডায়েরির মধ্যে পার্থক্য অনেক। কাজেই রমেশের ডায়েরি বলে কিছু নেই।

সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে_ এটা প্রমাণ করতে দেশে-বিদেশে নানাভাবে চেষ্টা করে বিশ্বব্যাংক। তবে প্রমাণ জোগাড় করতে ব্যর্থ বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জানান, বাংলাদেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। বিশ্বব্যাংকের এমন বোধদয় নিয়ে পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও মুখ খোলেন।

 

সরকারের নীতিনির্ধারকদের দাবি, বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করার জন্য এখন বিশ্বব্যাংকের উচিত বাংলাদেশ সরকার এবং অভিযুক্তদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমা চেয়ে তাদের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বলে আসছেন, পদ্মা সেতু যাতে না হয়, সেজন্যই দেশি-বিদেশি একটি স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করেছিল। বিশ্বব্যাংকের কিছু কর্মকর্তাও এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তা সত্ত্বেও বিশ্ব্যাংকের চাপে আবুল হোসেনের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত মেনে নেন প্রধানমন্ত্রী।

 

সূত্র জানায়, আবুল হোসেনের দুর্নীতি প্রমাণ করার জন্য বিশ্বব্যাংক সুইস ব্যাংক থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব দেশের ব্যাংকসহ অর্থ মার্কেটে আবুল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি রয়েছে কিনা, তা অনুসন্ধান করে। তবে কোথাও তারা কোনো তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি। এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, আমি সব সময় বলেছি, আমি নির্দোষ। যথাযথ তদন্ত হলে এটা প্রমাণ হবে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে আমি তদন্ত শেষের অপেক্ষা করেছি। দুর্নীতি না করার পরও আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে; আমার ইমেজ নষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে আমার যত না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের। অভিযোগ না তোলা হলে এত দিনে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়ে যেত।

 

তিনি আরও বলেন, যারা আমার ও দেশের ইমেজ নষ্ট করেছে, দুদকের উচিত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া। এটা হলে আগামীতে কেউ আর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে দেশের সম্মান নষ্ট করার সাহস দেখাবে না। এ কাজে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা করা উচিত। না হলে তাদের ইন্টিগ্রিটি সমালোচিত হবে। বিশ্বব্যাংকের উচিত অভিযোগকারীদের পরিচয় ফাঁস করে দেয়া।

 

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!