DMCA.com Protection Status
title="৭

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ছলনা কি ভারতের অব্যাহতভাবে গ্রহণ করা উচিত?: টাইমস অব ইন্ডিয়া

resizeদৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ  বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছেন। এর মাধ্যমে চীন ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুযোগ পাবে। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 





২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের শাসনকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। দৃঢ়তার সঙ্গে এমনটি মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ ২০১১ সালে যখন স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকে তখন ঢাকায় তেমন উদ্দীপনা ছিল না বললেই চলে। তাতে ব্যাপক মানুষের সমাবেশ হয় নি। 





 এর কারণ- আওয়ামী লীগ জাতির ইতিহাসকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবহারের চেষ্টা করেছে বলে জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে তারা আরও নিরাসক্ত করেছে। বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, ভারত অধিক সম্পদশালী দেশ। 





 তারা বাংলাদেশের জন্য আরও বেশি কিছু করতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ৩রা সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ টাইস: ঢাকা মাস্ট শো ইনটেন্ট টু ইমপ্রুভ রিলেশনস, বিল্ড কনফিডেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, দু’দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। 





 কিন্তু ভবিষ্যতের সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্দশা লাঘবে অব্যাহতভাবে অক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে। এটা কর্তৃত্ব স্থাপনে সরকারের ব্যর্থতার স্পষ্ট লক্ষণ। 





 এতে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ছলনা কি ভারতের অব্যাহতভাবে গ্রহণ করা উচিত? এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ফোর্সের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে ৫ দিনের আলোচনা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে। এ আলোচনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উঠে আসে। 




 এতে ভারত অবৈধ অভিবাসীর প্রসঙ্গ তুলে ধরে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানায় বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে পালিয়ে থাকলে যেন তাদের বের করে দিতে বলা হয়। পাচার ও অনুপ্রবেশের বিষয়টিও উঠে আসে। দু’দেশই এ সময় বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট অনিষ্পন্ন কিছু ইস্যুতে। 





 একই রকম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালে। কিন্তু আশানুরূপ ফল হয় নি। বাংলাদেশ সরকার যদি সক্রিয় পদক্ষেপ না নেয় ও অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে তাগিদ অনুভব না করে তাহলে এমন আলোচনা, বৈঠক থেকে কোন স্থায়ী সমাধান বেরিয়ে আসবে না। 




 ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাস্তব ও প্রতিপাদনযোগ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বারবার ব্যাপক হারে অবৈধ অভিবাসীর বিষয়টি অস্বীকার করছে। এমন প্রকাশ্য অস্বীকার করার বিষয়ে ভারতের নরম অবস্থান উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। 




 এমনটা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার পরিত্যাগে খুব উৎসাহী হবেন। সম্প্রতি এ অঞ্চলে যে ঝঞ্ঝাট দেখা দিয়েছে তা ভারতেও প্রভাব ফেলবে। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। এরপরই তিনি তার ক্ষমতার বৈধতার জন্য পেইচিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছেন। 





এ ঘটনা ভারত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। ভারত কি তার নিজস্ব সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা দিয়ে এ অঞ্চলে সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে? কেউ কেউ এ প্রশ্নে নেতিবাচক জবাব দিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে। 





 চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ অঞ্চল গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ও চীন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। বঙ্গোপসাগরের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সোনাদিয়ায় দ্বিতীয় বন্দর নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সোনাদিয়া হতে পারে আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। এর ফলে চীনের ইউননান প্রদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো, নেপাল ও ভুটানের সমুদ্র ব্যবহারের সুবিধা সৃষ্টি হবে। 





চীন যদি সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের অনুমতি পায় তাহলে তারা ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুবিধা পাবে এবং তাদের জ্বালানি আমদানির একটি বিকল্প রুট বের হবে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে ভারতীয় মহাসাগর অঞ্চলে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশের সেনা ও নৌবাহিনীর অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তার মাধ্যমে একটি ‘ছায়া যুদ্ধ’ শুরু করেছে চীন। 





 এ বছর স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলেছে, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের সরবরাহ দিয়েছে চীন। এতে আরও বলা হয়েছে, চীনের কাছ থেকে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ। 





 এর ফলে ওই সময়ে বাংলাদেশ যত অস্ত্র আমদানি করেছে তার মধ্যে শতকরা ৮২ ভাগই চীনের। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনা সম্প্রতি পেইচিং সফরে গিয়ে তিনি চীনের নেতৃত্বে হবে এই শতাব্দী এমন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশীদার হওয়ার কথা বলেছেন। এতে অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রভাবিত হবে। 





 নয়া দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সরকার এমন কূটনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করছেন না তা হতে পারে না। এরই মধ্যে তারা চীনের বিস্তৃত হওয়ার ধরন নিয়ে পরোক্ষভাবে প্রশ্ন তুলেছেন। দৃশ্যত বাংলাদেশ তার পক্ষ বেছে নিয়েছে। এখন ভারতকে তার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান। 





 শেখ হাসিনাকে পরিষ্কার করতে হবে যে, ভারতের সঙ্গে পানি, ট্রানজিট, বাণিজ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের মতো ইস্যুগুলোতে তিনি ভারতের সঙ্গে কিভাবে কাজ করতে চান। 





এক্ষেত্রে যদি কঠোর রোড ম্যাপ প্রণীত না হয় তাহলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ভারতকে। তাদেরকে দেখাতে হবে যে, তারা এ বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!