দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সমাধিক্ষেত্র ভেঙে তার দেহাবশেষ অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেয়ার একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সৌদি আরবে।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট ও ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের এক শিক্ষাবিদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে মদিনার ‘মসজিদে নববী’ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গুরুত্বের দিক থেকে মুসলমানদের কেবলা কাবা শরিফের পরই মসজিদে নববীর স্থান। এখানেই রয়েছে মহানবীর (সা.) রওজা বা সমাধি।
প্রতিবছর হজের সময় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম স্থানটি জিয়ারত করেন। মসজিদে নববী মুসলিমদের কাছে দ্বিতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। নিয়ামানুযায়ী সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা আবদুল্লাহ এর অভিভাবক।
এরকম একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভেঙে ফেলার পরিকল্পনায় মুসলিম বিশ্বে নতুন ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
মহানবীর সমাধিক্ষেত্র সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনাটি প্রথম প্রকাশ করেছেন দেশটির আরেকজন বিশেষজ্ঞ, যিনি এর আগে মুসলিমদের আরেকটি পবিত্র স্থান মক্কায় অবস্থিত বিভিন্ন পবিত্র এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসের সমালোচনা করেছিলেন।
৬১ পৃষ্ঠার ওই নথিতে মহানবীর (সা.) দেহাবশেষ মসজিদে নববীর কাছেই অবস্থিত আল-বাকি সমাধিক্ষেত্রে সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর কাজটি করা হবে গোপনীয়তার সঙ্গে।
তবে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। কিন্তু শিয়া-সুন্নি, মুসলিমদের দুই সম্প্রদায়ের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে পরিচিত মসজিদে নববী সংস্কারের যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে পুরো মুসলিম বিশ্বে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ ড. ইরফান আল-আলাওয়ী।
এমনিতেই ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া-সুন্নি সংঘাত বেড়ে যাওয়ায়, সৌদি সরকারের নতুন এই পরিকল্পনা দুই গোষ্ঠির মধ্যেকার হিংসাত্মক ঘটনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন তিনি।
সৌদি আরবের কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতারা ওহাবি মতাদর্শে দীক্ষিত। সুন্নি মুসলমানদের কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ওহাবিরা মনে করে, কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব কিংবা স্থাপনার প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করা হারাম। এটি শিরক বা আল্লাহর সমতুল্য জ্ঞান করা।
ইসলামিক হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার পরিচালক আলাওয়ী বলেন, “মসজিদে নববীর চারপাশে যেসব ঘরে মহানবীর (সা.) পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন, মানুষ সেসব ঘর পরিদর্শন করে এবং পরে মূল সমাধিতে গিয়ে প্রার্থণা করে।
“এখন তারা দর্শনার্থীদের এ সমাধিক্ষেত্রে আসা বন্ধ করতে চায়, কারণ তারা মনে করে এটা শিরক। কিন্তু মানুষের মহানবীর সমাধি দেখার প্রবণতা বন্ধ করার একটাই পথ আছে, সেটি হচ্ছে তাকে (মহানবী) সেখান থেকে বের করে এনে অন্যকোনো সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া।”
প্রতিবছরই কয়েক লাখ মুসলিম পবিত্র হজ পালন করতে মক্কায় যান। হজের সময় অবশ্য পালনীয় কাজের পাশাপাশি তারা মদিনায় অবস্থিত হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজাও জিয়ারত করেন।
মহানবীর সমাধির চারপাশ ঘিরে অবস্থিত মসজিদে নববীর বহুবার সংস্কার ও পরিবর্ধন করেছে আরব শাসকরা, বিশেষ করে ওসমান বংশীয়রা। এখানে ক্যালিগ্র্যাফিতে ইসলামের শেষ নবী এবং তার পরিবারের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।
ড. আলাওয়ী জানিয়েছেন, ঐতিহাসিকভাবে মহামূল্যবান এসব ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে নবীর সমাধি ঢেকে রাখা সবুজ রংয়ের গম্বুজটিও ভেঙে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনায়।
সৌদি সরকারের এ ধরনের পরিকল্পনায় সুন্নিরাই বেশি অবাক হবে বলে মনে করেন তিনি। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এর আগে মসজিদুল হারামের সংস্কারের বিশালযজ্ঞের কথা তুলে ধরেছিল।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গালফ ইন্সটিটিউটের বরাত দিয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছিল, সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে মক্কার কাবা শরীফকে ঘিরে থাকা এ মসজিদের ৯৫ ভাগই ধ্বংস করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট আর শপিং মল।
প্রতিবছর অতিরিক্ত হজযাত্রীর চাপ সামলাতে নেয়া এই সংস্কার পরিকল্পনা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ওহাবি মতাদর্শের অনুসারী মসজিদুল হারামের ইমাম আবদুল রহমান আল-সুদাইস।
মসজিদে নববী সংস্কারের জন্য রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ ড. আলি বি আবদুলাজিজ আল-শাবালের তৈরি করা প্রস্তাবটি দুই মসজিদের (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী) অভিভাবক কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আলাওয়ী।
রাষ্ট্রীয় জার্নালে এই প্রস্তাবের নথির কয়েকটি পৃষ্ঠা ছাপা হয়েছে। মসজিদে নববীকে ঘিরে থাকা যেসব কক্ষগুলোতে মহানবীর স্ত্রী, কন্যারা বাস করতেন সেসব অপসারণের কথা বলা হয়েছে এতে।
মহানবীর (সা.) কন্যা হজরত ফাতিমার কারণে শিয়াদের কাছে এই স্থাপনাগুলো পবিত্র। নথিতে সবুজ গম্বুজ, এসব কক্ষ অপসারণের পাশাপাশি মহানবীর দেহাবশেষও কাছাকাছি কোনো সমাধিক্ষেত্রে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ড. আলাওয়ী বলেন, “মহানবী (সা.) অজ্ঞাত থাকবেন। মহানবীর মসজিদের চারপাশের সবকিছুই এরই মধ্যে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এর চারপাশে এখন অনেক বুলডোজার। আশপাশের সবকিছু সরিয়ে ফেলার পর তারা মসজিদের দিকে এগোবে।”
পুরো বিশ্বের নজর এখন ইরাক আর সিরিয়ার দিকে থাকার সুযোগেই কাজটি করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ইমাম হয়ত বলবেন, মসজিদটির পরিবর্ধন প্রয়োজন। মুহাম্মদ (সা.) এর সমাধিকে যারা পবিত্র মনে করে সেই মুলধারার সুন্নিরা এটা কখনোই করবে না। মহানবীর কন্যা ফাতিমাকে সম্মান দেখানো শিয়াদের কাছেও তো এই জায়গাটি গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত এই ধরনের পদক্ষেপ পুরো মুসলিম বিশ্বকে ভয়ঙ্করভাবে নাড়া দেবে। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো।”
এ বিষয়ে জানতে ঢাকায় সৌদি আরব দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর ইংলিশ ভার্সন দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল;
Saudis risk new Muslim division with proposal to move Mohamed’s tomb :
One of Islam’s most revered holy sites – the tomb of the Prophet Mohamed – could be destroyed and his body removed to an anonymous grave under plans which threaten to spark discord across the Muslim world.
The controversial proposals are part of a consultation document by a leading Saudi academic which has been circulated among the supervisors of al-Masjid al-Nabawi mosque in Medina, where the remains of the Prophet are housed under the Green Dome, visited by millions of pilgrims and venerated as Islam’s second-holiest site. The formal custodian of the mosque is Saudi Arabia’s ageing monarch King Abdullah.
The plans, brought to light by another Saudi academic who has exposed and criticised the destruction of holy places and artefacts in Mecca – the holiest site in the Muslim world – call for the destruction of chambers around the Prophet’s grave which are particularly venerated by Shia Muslims.
The 61-page document also calls for the removal of Mohamed’s remains to the nearby al-Baqi cemetery, where they would be interred anonymously.
There is no suggestion that any decision has been taken to act upon the plans. The Saudi government has in the past insisted that it treats any changes to Islam’s holiest sites with “the utmost seriousness”. READ MORE: Attack on Mohamed's tomb could stir up sectarian hatred
But such is the importance of the mosque to both Sunni and Shia Muslims that Dr Irfan al-Alawi warned that any attempt to carry out the work could spark unrest. It also runs the risk of inflaming sectarian tensions between the two branches of Islam, already running perilously high due to the conflicts in Syria and Iraq.
Hardline Saudi clerics have long preached that the country’s strict Wahhabi interpretation of Islam – an offshoot of the Sunni tradition – prohibits the worship of any object or “saint”, a practice considered “shirq” or idolatrous.
Dr Alawi, director of the Islamic Heritage Research Foundation, told The Independent: “People visit the chambers, which are the rooms where the Prophet’s family lived, and turn towards the burial chamber to pray.
“Now they want to prevent pilgrims from attending and venerating the tomb because they believe this is shirq, or idolatry. But the only way they can stop people visiting the Prophet is to get him out and into the cemetery.”
For centuries Muslim pilgrims have made their way to Mecca in order to visit the Kaaba – a black granite cubed building said to be built by Abraham, around which al-Masjid al-Haram, or the Grand Mosque, is built, and towards which every Muslim faces when they pray.
This pilgrimage, or hajj, is a religious duty that has to be carried out at least once in a lifetime.
Many go on to make their way to the nearby city of Medina to pay their respects at the Prophet’s tomb.
Al-Nabawi mosque around the tomb has been expanded by generations of Arabian rulers, particularly the Ottomans. It includes hand-painted calligraphy documenting details of the Prophet’s life and his family. Dr Alawi said the plans also call for these to be destroyed as well as the Green Dome which covers the Prophet’s tomb.
The Prophet is venerated by both branches of Islam, Sunni and Shia. The strict Wahhabi sect is a branch of the Sunni faith, however, and removing the Prophet could further inflame tensions between the two groups .
The current crisis in Iraq has been blamed on the Shia former Prime Minister Nouri al-Maliki’s sectarianism, which alienated the Sunni, leading to the uprising. Isis, also known as Islamic State, which holds swathes of Iraq and Syria, and which murdered the American journalist James Foley, is a Sunni organisation.
Mainstream Sunni Muslims would be just as aghast at any desecration of the tomb as the Shia, Dr Alawi said.
The Independent has previously revealed how the multibillion-pound expansion of the Grand Mosque has, according to the Washington-based Gulf Institute, led to the destruction of up to 95 per cent of Mecca’s millennium-old buildings. They have been replaced with luxury hotels, apartments and shopping malls.
King Abdullah has appointed the prominent Wahhabi cleric and imam of the Grand Mosque, Abdul Rahman al-Sudais, to oversee the expansion project – necessary to cope with the huge number of pilgrims who now visit each year.
Dr Alawi says the consultation document for the al-Nabawi mosque in Medina, by the leading Saudi academic Dr Ali bin Abdulaziz al-Shabal of Imam Muhammad ibn Saud Islamic University in Riyadh, has been circulated to the Committee of the Presidency of the Two Mosques.
Several pages of the consultation document have just been published in the presidency’s journal. They call for the destruction of the rooms surrounding the tomb – used by the Prophet’s wives and daughters, and venerated by the Shia because of their association with his youngest daughter, Fatima.
The document also calls for the Green Dome, which covers the tomb and these living quarters, to be removed, and the ultimate removal of the Prophet’s body to a nearby cemetery.
The al-Baqi cemetery already contains the bodies of many of the Prophet’s family, including his father who was removed there in the 1970s, Dr Alawi said. In 1924 all the grave markers were removed, so pilgrims would not know who was buried there, and so be unable to pray to them.
“The Prophet would be anonymous,” Dr Alawi added. “Everything around the Prophet’s mosque has already been destroyed. It is surrounded by bulldozers. Once they’ve removed everything they can move towards the mosque. The imam is likely to say there is a need to expand the mosque and do it that way, while the world’s eyes are on Iraq and Syria. The Prophet Mohamed’s grave is venerated by the mainstream Sunni, who would never do it. It is just as important for the Shia too, who venerate the Prophet’s daughter, Fatima.
“I’m sure there will be shock across the Muslim world at these revelations. It will cause outrage.”
The Independent was unable to contact the Saudi Arabian embassy, but it said in a statement last year: “The development of the Holy Mosque of Makkah al-Mukarramah [Mecca] is an extremely important subject and one which the Kingdom of Saudi Arabia, in its capacity as custodian of the two holy mosques, takes with the utmost seriousness. This role is at the heart of the principles upon which Saudi Arabia is founded.”
সূত্র : http://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/saudis-risk-new-muslim-division-with-proposal-to-move-mohameds-tomb-9705120.html