DMCA.com Protection Status
title=""

বিনা প্রতিদ্বন্বিতায় নির্বাচিত বনাম বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত

jaরাজনীতিতে নেমে নিজের আইনজীবী পরিচয়ের সাথে স্ববিরোধিতা এড়াতে পারলেন না ড. কামাল হোসেন। তিনি যখন আইনজীবী, তখন দশম জাতীয় সংসদের ১৫৩টি আসনের সদস্যদেরকে বলছেন, তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রতিনিধি। অথচ যখন রাজনীতির মাঠে নামছেন, তখন তিনি ওই ১৫৩ আসনের প্রার্থীদেরকে বলছেন ‘বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত’ প্রতিনিধি। আবার কখনও বলছেন ‘স্বঘোষিত’ প্রতিনিধি।

দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ এই আইনজীবী বর্তমান সংসদের ১৫৩ জন সদস্যকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদ না বলে ‘বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত’ প্রতিনিধি উল্লেখ করে তৈরী করেছেন ভাষার গভীর ফাঁদ। ‘বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত’ প্রতিনিধি আর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যের ধারণার মধ্যে আছে ব্যাপক পার্থক্য।পার্থক্যটা ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজেই।

সম্প্রতি একটি সভায় ড. কামাল বলেন, বর্তমান যে সংসদ আছে তার ১৫৩ জনের বেশি সদস্য বিনা নির্বাচনে এসেছেন। তারা সবাই ‘স্বঘোষিত প্রতিনিধি’। কিন্তু সংসদে থাকার কথা জনগণের প্রতিনিধি। এ সরকার জনগণের সেই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। বিনা নির্বাচনে যারা নির্বাচিত, তাদের আমরা প্রতিনিধি মানি না।

অথচ তিনি যখন আইনজীবী তখন কথা বলেন একেবারে ভিন্ন ভাষায়। বর্তমান সংসদের বৈধতা নিয়ে আদালতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।সংবিধানের মূলনীতি হলো গণতন্ত্র। সংবিধানে বলা আছে, জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। সংবিধানের দেয়া এই ক্ষমতার প্রয়োগ করবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।’ ‘তাই যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তাদের কি জনপ্রতিনিধি বলা যাবে?’



আদালতে তিনি সবসময়ই বিতর্কিত এই প্রতিনিধিদের ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত’ বলেছেন। কখনই ‘বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত’ কিংবা ‘স্বঘোষিত’ বলেননি। কিন্তু কেন? ভাষার এই মারপ্যাঁচের তাৎপর্যটা কোথায়?

আদালতের সামনে ড. কামাল ১৫৩জন প্রতিনিধিকে স্বঘোষিত বললে, এর প্রতিক্রিয়া হতো ভিন্ন। দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে তদন্তের প্রশ্ন আসত। বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত বললে, তার বক্তব্যের স্বপক্ষের যুক্তিগুলোও তুলে ধরতে হতো। আসলেই প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টিতে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখার প্রশ্ন উঠত।

দশম সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। এইভাবে নির্বাচনের আগেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোন আইনগত বৈধতা আছে কি না তা নিয়েও বিতর্ক হতো আদালতে। এছাড়া, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি। এই অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরীর দায়ও আওয়ামী লীগ, বিএনপি এমনকি জাতীয় পার্টির ছিল। সবগুলো দলের পক্ষ থেকেই ছিল ‘দুরভিসন্ধি’।

অভিযোগ আছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে ক্ষমতায় যাওয়া সহজ। তাই, ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নির্বাচনে এনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টির দায়িত্ব নেয়নি। বরং অভিযোগ আছে, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল দলটি। এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ১৫৪টি আসনে কথিত ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ নির্বাচন হয়েছে। বিএনপিও নিজ দলের রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রেখেছে কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়ে।

কিন্তু ড. কামাল আদালতে অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্যে এই বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছেন সর্বোতভাবে। অথচ রাজনীতিবিদ হিসেবে, এই বিষয়গুলো তুলে ধরছেন বারবার। আইনবিদ ড. কামালের কাছে যা ছিল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন, রাজনীতিবিদ ড. কামালের কাছে তা হয়ে গেলো ‘বিনা নির্বাচনে নির্বাচন’। এইভাবে নিজের সাথে স্ববিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!