DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বেকায়দায় এরশাদঃ জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সুর

রাঙ্গা ও তাজুলকে প্রেসিডিয়াম থেকে 
অব্যাহতি : তালিকায় আরও কয়েক নেতাঃ
 

 

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা চরমে। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। বেজে উঠেছে ভাঙনের সুর। শীর্ষ নেতাদের এই মতবিরোধের কারণে যে কোনো সময় দলটি ভেঙে যেতে পারে বলে মনে করছেন দলের একাধিক নেতা। আর জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৌশলে দলটিতে বিভাজন জিইয়ে রাখছে সরকার। এরশাদ রয়েছেন বড়ই বেকায়দায়। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করলে এসব তথ্য উঠে আসে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্ত্রিপরিষদ থেকে জাতীয় পার্টি নেতাদের পদত্যাগ, বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচন ও এরশাদের নির্দেশ অমান্য করা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই চলছে সঙ্কট। বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে বিরোধের সূত্রপাত হয়। কাজী ফিরোজ রশীদকে উপনেতা করতে চান রওশন। তার অনুসারী এমপিরা ফিরোজ রশীদকে 'নির্বাচিত' করে মঙ্গলবার স্পিকারকে চিঠি দেন। তবে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে পাল্টা চিঠি দিয়ে এরশাদ জানান, তার দলের উপনেতা নির্বাচন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন।

 

এ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিরোধী দলের নেতা এরশাদেরই স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে চলছে তীব্র মতবিরোধ। আর এই মতবিরোধ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে বুধবার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের পদ থেকে চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির মাধ্যমে।

 

দুই নেতাকে অব্যাহতি দেয়ায় দলটিতে চলমান সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়। রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে এ দুই জেলার কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। এদিকে অব্যাহতির ঘটনাকে বিএনপির ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন এক সময়কার বিএনপি নেতা তাজুল ইসলাম। আরও কয়েকজন নেতা আগামী কয়েক দিনে শাস্তি পেতে পারেন। এরশাদের পক্ষ থেকে রওশন শিবিরে ভিড়ে যাওয়া এবং এরশাদের প্রকাশ্য সমালোচনকারী অন্তত দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য এ তালিকায় আছেন। দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর বিরুদ্ধে প্রেসিডিয়ামে আস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা করছেন কয়েকজন সদস্য। তাদের ওপরও আসতে পারে শাস্তির খড়গ। এতে পঞ্চমবারের মতো ভাঙতে পারে জাতীয় পার্টি।

 

জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সুর

 

 

 

বুধবার দুপুরে রাঙ্গা ও তাজুলের অব্যাহতির চিঠিতে স্ব্বাক্ষর করেন এরশাদ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনানীর নিজ কার্যালয়ে আসেন এরশাদ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাঙ্গা ও তাজুলের বক্তব্য শোনেন তিনি। এর পরপরই দলীয় গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাদের অব্যাহতির চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। এরশাদের প্রেস সচিব সুনীল শুভরায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

এদিকে, মাগরিবের নামাজের বিরতিতে বিরোধী দলের নেতা রওশনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাঙ্গা ও তাজুলসহ বেশ কয়েকজন এমপি। তারা এরশাদের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে পাগলের প্রলাপ বলে অভিহিত করেন। তারা বলেন, কিছু হলেই বহিষ্কার, অব্যাহতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চেয়ারম্যান হলেই যে এমন করবেন, তা সহ্য করা হবে না বলেও রওশনকে অবহিত করেন। তাদের এ অভিযোগের উত্তরে রওশন এরশাদ বলেন, একটু মাথা ঠা-া রাখ।

 

বৈঠক শেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুজনকে প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া প্রসঙ্গে ম্যাডাম তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তিনি তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, দু-একদিন পার হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এরশাদ রাগের মাথায় এসব করেছেন বলেই ফিরোজ রশীদ দাবি করেন।

 

মসিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, 'আই এম নট আনহ্যাপি। তবে দলের চেয়ারম্যান (এরশাদ) হিসেবে আকস্মিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত সব সময় নেয়া সাজে না।' কেন এমনটি হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, রাজনৈতিক দলে বড় কোনো কর্মসূচি না থাকলে দলের অভ্যন্তরে এমনটি হয়। তিনি বলেন, দল থেকে আমাকে বাদ দিলে আমি অন্য যে কোনো দলের মন্ত্রী হয়ে যেতে পারি।

 

এদিকে, জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার অভিযোগ, সরকার জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেই কৌশলে দলে বিভাজন জিইয়ে রাখছে। সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনেই জাতীয় পার্টিতে চলছে নেতৃত্বের নানা মেরুকরণ। এ কাজে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর বিরুদ্ধে।

 

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে নতুন জাতীয় পার্টি গঠনে হাত দেবেন দলটির এরশাদবিরোধী সংসদ সদস্যরা। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির নতুন কোনো কাউন্সিল হবে না। এরশাদকেও তারা বহিষ্কার করবেন না। যেমনি বিজেপি (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) নাজিউর রহমান মঞ্জু অংশ থেকে বেরিয়ে ডা. এমএ মতিন নতুন বিজেপি গঠন করেছিলেন। তিনি বলেন, এভাবে জাতীয় পার্টি গঠন করা হলে সংসদ সদস্যপদও হারাতে হবে না কোনো পক্ষকে।

 

জাতীয় পার্টির সদ্য বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এরশাদ তো বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেছেন। এরশাদ আমাকে কয়েকবার বলেছেন, বিরোধী দলের দুই নম্বর চেয়ারে বসতে আমার ভালো লাগে না। তোমরা কিছু একটা কর। কিন্তু আমি এরশাদের এই অন্যায় আবদার প্রশ্রয় দেইনি।

 

জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো বিরোধ নেই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। এরশাদ সাহেব যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই পার্টির সিদ্ধান্ত।

 

দলের সভাপতিম-লীর পদ হারিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির দুই নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মসিউর রহমান রাঙ্গা। দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত জানার পর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে তার কাছে নালিশ জানান তারা।

 

মাগরিবের নামাজের বিরতির পর শেখ হাসিনা যখন অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান, তখন বিরোধী দলের সারি থেকে তার কাছে ছুটে যান এ দুই এমপি। তাদের পেছন পেছন দলের সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এবং সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদও যান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এ সময় তারা দলীয় চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!