জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আপিলের রায় কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। রাজধানীসহ সারাদেশে আদালত, সরকারি দপ্তর, পেট্রোল পাম্পসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় মঙ্গলবার থেকেই নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তত্পরতা বাড়ানো হয়েছে, জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে জামায়াত ও ছাত্রশিবির কর্মীদের সহিংস তাণ্ডবের বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। গত বছরের ওই সহিংসতায় প্রাণ হারায় পুলিশসহ বহুলোক। এছাড়া দুই শতাধিক আহত, বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এদিকে সহিংসতা ঠেকাতে রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী মহানগরী এবং ফেনী ও বগুড়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান জানান, রায়কে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে র্যাবকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সব ধরনের বিশৃঙ্খলারোধে ও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, রায় ঘিরে ও পরবর্তী অবস্থায় যেন কোনো নাশকতা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে র্যাব সদস্যরা সজাগ থাকবে। এছাড়াও রায় উপলক্ষে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাব সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন থাকবে— এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষ করে রাজধানীতে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজরদারি রাখা হবে।
ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি আরও জানান, এ সময় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারীরাও থাকবে তত্পর। বিশেষ করে কোর্ট এলাকা ও তার আশপাশের এলাকাসহ বিশেষ বিশেষ এলাকাগুলো নজরদারিতে রাখা হবে। তিনি বলেন, সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করলে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। ডিএমপির সব ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন: চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৬ প্লাটুন, রাজশাহীতে ৬ প্লাটুন, ফেনীতে দুই প্লাটুন, বগুড়ায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে, নাশকতা রোধে চট্টগ্রামেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (সদর) মাসুদ উল হাসান জানান, বন্দর নগরীর ১৬ থানার নিয়মিত ফোর্সের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ এবং এবিপিএন মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ছয় প্লাটুন বিজিবি সদস্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। উপ-কমিশনার মাসুদ বলেন, বুধবার ভোর থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসবে।
গতবছর ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে জামায়াতের সহিংসতায় পুলিশসহ সাতজন নিহত হন। আপিলের রায় ঘিরে এসব এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সহাকারী পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) একেএম এমরান ভূঁইয়া জানান, এসব এলাকায় নিয়মিত টহলের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ এবং বিজিবি মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।