বিএনপিকে নিয়ে কোনো রকম চিন্তা করছে না আওয়ামী লীগ। এমনকি সাবেক এ বিরোধী দলটির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। দলটির নেতাদের মতে, বিএনপি অগণতান্ত্রিক, ষড়যন্ত্রকারী ও সন্ত্রাসী দল। এমন একটি দলের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ হতে পারে না।
তা ছাড়া বিএনপির আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই। তাই বিএনপিকে নিয়ে চিন্তিত নয়, বরং দল গোছাতেই ব্যস্ত তারা। তবে বিএনপি-জামায়াতের যে কোনো আন্দোলন মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে জানান ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বিএনপির এই হুমকি আস্ফাালন ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে ষড়যন্ত্র করলে এর ফল যে সুখকর হয় না, সেটি বিগত বছরগুলোতে বিএনপি দেখেছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোরভাবে দেখতে পারবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করতে সরকারের যত ক্ষমতা আছে তার সবটুকু কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না। সরকার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। এর আগে কোনো নির্বাচনী আলোচনা হতে পারে না।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সরকারের কাছে একাধিকবার সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে সাবেক বিরোধী দল বিএনপি।
সর্বশেষ গতকাল শনিবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে একই আহ্বান জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কাঠামোর ব্যাপারে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সংলাপের উদ্যোগ না নিলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে নামার কথাও বলেন তিনি।
তবে খালেদা জিয়ার এই সংলাপের আহ্বান ও হুমকি বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে ন্যূনতম কর্ণপাত করছে না ক্ষমতাসীনরা। বরং নিজেদের দল গোছাতেই ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
সূত্র মতে, বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে তত্পর রয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে না। এখন নির্বাচন নিয়েও সরকার কোনো চিন্তা করছে না। ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়। এ ছাড়া বিএনপির আন্দোলন নিয়েও তারা মোটেও চিন্তিত নয়। তবে বিরোধী শক্তির যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকলে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা আন্দোলন জমাতে পারবে না। এ জন্য দল গোছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
জানা গেছে, দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি মাঠে নামছেন সিনিয়র নেতারাও। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে দলের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। এ ছাড়া চলতি বছরের মধ্যেই জেলা পর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করবে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের কাউন্সিল শেষ করেছে দলটি। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বরগুনা ও পটুয়াখালীর কাউন্সিল শেষ হবে। এ ছাড়া খুব দ্রুত কিশোরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, খুলনা মহানগর এবং রাজশাহী মহানগরসহ বাকি জেলাগুলোর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। সে দিনের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। জেলা কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা ও বিএনপির নেতাদের মিথ্যাচারের জবাব দিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলও মাঠে নামছে। বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ জনসভাসহ নানা কর্মসূচি করার চিন্তা করছে তারা। ১৭ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেদিনের সভা থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। এর আগে নওগাঁ, রাজশাহী, গাজীপুরসহ কয়েকটি জেলায় সমাবেশ করেছিল ১৪ দলীয় জোট।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানান, আমরা দল গোছাতে ব্যস্ত। এ বছরের মধ্যেই দলের জেলা সম্মেলন শেষ করা হবে। তবে বিএনপি যেহেতু ষড়যন্ত্রকারী দল, তাই তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত। তবে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।