DMCA.com Protection Status
title="৭

বিএনপিতে নিষিদ্ধ মওদুদঃ তবে কি বহিষ্কারাদেশ আসন্ন???

1410844298চারদলীয় জোট সরকার নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা সাম্প্রতিক বইয়ের ভাষ্য নিয়ে তার দলের ভিতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে তাকে দলীয় কর্মসূচিতে ‘নিষিদ্ধ’ করেছেন।

 

বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মওদুদ আহমদকে বহিষ্কার করতে দলের ভিতর থেকে ব্যাপক চাপ রয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ, বয়সের কারণ দেখিয়ে ‘সম্মানজনক’ভাবে অব্যাহতি দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।

 

মওদুদের লেখা নিয়ে রবিবার মধ্যরাতে খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের সামনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মওদুদ অকৃতজ্ঞ। তার জন্য কি না করেছি। এ সময় কয়েকজন নেতা তার অতীতের কয়েকটি বইয়ের লেখা নিয়েও কথা তোলেন। তখনই হঠাৎ খালেদা জিয়া বলে ওঠেন, ‘তাকে আর মনোনয়ন দেবো না।’ তার আসনে বিকল্প খুঁজতে বলেছেন নোয়াখালী অঞ্চলের নেতাদের। 

 

জানা গেছে, রবিবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত গুলশানে নিজ কার্যালয়ে ছিলেন খালেদা জিয়া। এ সময় উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনার বেশির ভাগ অংশ জুড়ে ছিল মওদুদ আহমদের লেখা এবং অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহর ওপর হামলার বিষয়।

 

শনিবার লন্ডন থেকে ফিরে রবিবার রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মওদুদ আহমদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী সোমবার সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, চারদলীয় জোট সরকার নিয়ে মওদুদ আহমদের লেখা সাম্প্রতিক বইয়ের ভাষ্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’। জোট সরকারের মন্ত্রী হয়েও মওদুদ ‘কার সন্তুষ্টির জন্য’ এমন ভাষ্য দিয়েছেন— তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ‘নিজের বাড়ি রক্ষার জন্য, নাকি ক্ষমতাসীন দলের মন রক্ষার জন্য এ রকম ভাষ্য তিনি দিয়েছেন তা জানি না।’ 

 

রিজভীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের মনরক্ষার জন্য নয়, ‘সংশোধনের’ জন্য নিজের লেখা সাম্প্রতিক বইয়ে বিএনপির ‘ব্যর্থতা ও ভুলগুলো’ তুলে ধরেছেন। ‘ওই ভুলগুলো’ সংশোধন করে নিলে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় যেতে পারবে বলেই তার বিশ্বাস।

 

‘বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’ শিরোনামে ওই বইয়ে চারদলীয় জোট সরকারের ‘অপশাসন’ ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা, বিএনপি সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতি এবং ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিতর্ক সমাধানে ব্যর্থ হয়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেয়ার মতো বিষয়গুলো এসেছে। মওদুদের মতে, মূলত এসব কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটাররা বিএনপির কাছ থেকে ‘মুখ ফিরিয়ে নেন’।

 

বিএনপি নেতারা বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে মওদুদ আহমদ এ সব কথা বলতে পারেন না। তা ছাড়া ওই সময় খালেদা জিয়া শুধু তার দুই ছেলে নয়, দলীয় নেতাদের মুক্তির বিষয়েও কথা বলেছেন।

 

অবশ্য ঘনিষ্ঠদের মওদুদ বলেছেন, তিনি দলীয় আদর্শ মেনে রাজনীতি করেন। রাজনীতির সঙ্গে তার লেখা মেলানো ঠিক হবে না। কারণ তার রাজনৈতিক কার্যক্রম স্বাধীন না হলেও লেখা স্বাধীন।

 

সমালোচকরা মনে করেন, মওদুদ লিখতে পছন্দ করেন। তিনি মনে করেন, এখন থেকে কয়েক যুগ পরে তার লেখা ইতিহাস হিসেবে কাজ করবে। তারা এও বলেন, মওদুদের মতো মেধাবী লোকের রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে নিয়ে এ সব লেখা উচিত ছিল। 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের কে বলেন, ‘মওদুদ আহমদকে বহিষ্কার করলে এ নিয়ে নানা কাদা ছোড়াছুড়ি হবে। তাই তার সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্ক ছিন্ন করাই শ্রেয়।’

 

দীর্ঘদিন ধরে মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে আসা স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ছোটরা অপরাধ করলে বহিষ্কার হয়। বড় নেতারা অপরাধ করলে শোকজও হয় না।’

এর আগেও বিভিন্ন বইয়ে বিএনপির সমালোচনা করেন মওদুদ আহমদ। খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন নিয়েও তার লেখায় সমালোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ওই সময় মওদুদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। অবশ্য বিভিন্নভাবে তা ম্যানেজ করে দলীয় কার্যক্রমে আবারও ফিরে আসেন তিনি।

 

সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদের দলবদলের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে রিজভী তাকে কখনও উল্লেখ করেন ‘দল ছুট ও আদর্শ ছুট’ নেতা হিসেবে, কখনও আবার তুলনা করেন কাকের সঙ্গে।

বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দি অবস্থায় ইংরেজিতে লেখা মওদুদের ওই বই গত শনিবার ইউপিএল থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রিজভী বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। তবে ব্যক্তিগতভাবে বলববব— তিনি নিজেই তো চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।’

এরশাদ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদে থাকা মওদুদের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘যারা দলছুট, আদর্শছুট এবং নিজের প্রয়োজনে দল পাল্টায়— তাদের এ দেশের জনগণ চেনে।’

তিনি বলেন, সাত-সমুদ্র তেরো নদী পার হলেও কাক কাকই থেকে যায়। এক ধরনের মানুষ আছে তারা রং বদলায়। ভারতের এক প্রখ্যাত সাংবাদিক তাদের ‘ফাস্টফুডের সঙ্গে’ তুলনা করেছেন।

১/১১-এর পর খালেদা জিয়ার কাছে তার দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আলোচনায় যেতে তিনি রাজি ছিলেন না— মওদুদের বইয়ের এমন ভাষ্য ‘ঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, কার সন্তুষ্টির জন্য নিজের লেখা বইয়ে এরকম ভাষ্য দিয়েছেন।’

 

রিজভী বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বেগম খালেদা জিয়া কখনই আপস করেননি। দেশের জনগণের কথা ভেবে তিনি দেশ ত্যাগ করেননি। তার ওপর অনেক চাপ ছিল বলেই তারেক রহমানের ওপর বন্দি অবস্থায় নির্যাতন করা হয়েছে। এই জ্যেষ্ঠ নেতাসহ অনেকে সে সময় মুক্তি পেয়েছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!