দৈনিক প্রথম বংলাদেশ প্রতিবেদনঃ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ৭ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ বছর এবং ৮ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে ১২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
অধিকাংশ বিচারকদের মতামতের ভিত্তিতে ৬, ১১ এবং ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর সংক্ষিপ্ত এ রায় দেন।
বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হলো। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে আজকের কার্যতালিকায় এক নম্বরে ছিল সাঈদীর রায়টি।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনের দু’টি ঘটনায় পাক বাহিনীকে সহায়তার দায়ে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণ ইত্যাদি ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে পিরোজপুরের চিথোলিয়ার মানিক পসারির বাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও তার ভাই ইব্রাহিম কুট্টিকে পাকিস্তানি সেনাদের দিয়ে হত্যা এবং উমেদপুরের হিন্দুপাড়ায় অগ্নিসংযোগ ও বিসাবলীকে সাঈদীর ইন্ধনে হত্যার দায়ে ফাঁসির মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। তবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় প্রমাণিত হওয়া অন্য ছয়টি অপরাধের জন্য আলাদা করে কোনো শাস্তি দেননি ট্রাইব্যুনাল।
একইসঙ্গে সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অন্য ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে সেগুলো থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও আলাদা কোনো দণ্ড না দেয়া সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলে এসব প্রমাণিত অভিযোগে সাঈদীর সাজা দাবি করা হয়। অপরদিকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল করেন সাঈদীও।
২০১০ সালে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাঈদীর রায়ে আইনজীবিদের প্রতিক্রীয়াঃ
‘জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন’ উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়। আমরা রায়ের কপি দেখবো। এবং সেই অনুযায়ী রিভিউ আবেদন করবো।’
বুধবার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগে আমাদের আপিল আবেদন কিছুটা হলেও গ্রহণ করা হয়েছে। যাবজ্জীবনের বিধানে সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজার কথা বলা হয়েছে। তবে আপিলের রায়ের কপি না দেখা পর্যন্ত এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। আমরা কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও রিভিউ করেছি। সাঈদীর ক্ষেত্রেও আমরা রায়ের কপি দেখে রিভিউ আবেদন করবো।’
অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে তার এক দিনেরও সাজা হওয়ার কথা নয়। আমাদের ও সরকারের দুটি আপিলের রায়ে পরিবর্তন এসেছে। প্রসিকিউশনের সাক্ষী বাইন আদালতে বলেছে আমার ভাইকে সাঈদী হত্যা করেনি। এছাড়াও ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী আদালতে তার স্বামী হত্যার বিষয়ে সাঈদীর সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বিকার করেছেন। আপিলে তবুও এ দুটি অভিযোগের ওপরে তাকে সাজা প্রদান করা হয়েছে। আমরা রায়ের কপি পর্যালোচনা করে রিভিউ করবো।’
এ্যটর্নী জেনারেল যা বললেনঃ
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের মামলা চলছে বিশেষ আইনে। এই আইনে রিভিউ চলে না। এর আগে কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে রিভিউ করা হয়েছিল। কিন্তু তা ডিসমিসড হয়ে যায়।’
আজ বুধবার আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর শাস্তি কমিয়ে ফাঁসির পরিবর্তে ‘আমৃত্যু কারাদণ্ড’ দেন।
প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর এই রায় দিচ্ছেন।
বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হল।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা ছিল মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু তা না হওয়ায় আমার খারাপ লাগছে।’
তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই রায় দেয়া হয়েছে।।
রায়ের বৈশিষ্ট্য হল ‘ শারীরিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলে থাকতে হবে।’