বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গভীর মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে দূর করতে ফের সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। সংলাপের তাগিদ দিয়ে দুই নেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ ও বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতার পর মুন আবারও একই তাগিদ দিলেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার প্রকাশিত এক বার্তায় তিনি এ তাগিদ দেন। এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তন, বাল্য বিয়ে, অবকাঠামো দুর্বলতা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে মুন তার বার্তায় বলেন, রাজনীতিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশকেই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশও এ প্রক্রিয়ার বাইরে নয়।
বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য মতবিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি ও সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতা তৈরিতে রাজনৈতিক সংলাপের বিকল্প নেই।দশম সংসদ নির্বাচনের আগে দুই প্রধান নেত্রীকে সংলাপে বসাতে জাতিসংঘ থেকে বিভিন্ন মহলের তত্পরতা ছিল। বান কি মুনের বার্তা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তারানকো দুই দলকে নিয়ে কয়েকদফা বৈঠক করলেও তাতে কোনো ফল আসেনি।
এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্যেই নির্বাচনে জয় নিয়ে নতুন করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিব তার বার্তায় বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের লগ্নে তিনি একজন তরুণ কূটনীতিক হিসেবে দিল্লিতে তার দেশ কোরিয়ার দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতার পর কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হয়েছিল। ওই সময়ে কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চুক্তিতে তিনি একটি ‘ফাউন্টেন পেন’ (কালির কলম) দিয়ে সই করেছিলেন। স্মৃতি হিসেবে তিনি ওই কলমটি সংরক্ষণ করে রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন।
বান কি মুন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এর আগে গত ১৯ জুন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেন।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করতে সংলাপেরও আহ্বান জানান। এছাড়া গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ৬ জানুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র তার পক্ষে এক বিবৃতিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও প্রাণহানির ব্যাপারে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অবিলম্বে প্রধান প্রধান দলগুলোকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অর্থবহ সংলাপ শুরুর তাগিদও জানানো হয়।