DMCA.com Protection Status
title="৭

অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে রই, ‘এটাই কি আমার প্রিয় স্বদেশ ‘বাংলাদেশ’????

beautiful Bangladesh-23ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মাঝে মাঝে মনে হয় চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এক অদ্ভুত ঘূর্ণায়মান নষ্ট পরিবেশের মধ্যে পড়ে দিশা   হারিয়ে ফেলেছে। সোজা পথ খুঁজছে দেশটি, কিন্তু কোন পথ পাচ্ছে না। ভয়ানক ঘূর্ণায়মান বাতাসে বুঝি দেশটি দূলছে। কেউ দোলায়িত কাঁপুনি থামাতে পারছে না, কিংবা থামানোর চেষ্ঠার জন্য যে সাহস, মানসিক শক্তি প্রয়োজন সেটা কারোর মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

 

তবে রাষ্ট্রের ক্ষমতা মসনদে থাকা রাঘব-বোয়ালদের অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে যেভাবে পদে পদে প্রতিবাদীদের নিপীড়িত হতে হচ্ছে সেটা রীতিমত ভয়াবহ। তবুও কিছু মানুষ প্রতিবাদ করছে ,নীরবে-সরবে প্রতিবাদ  করে সরকারের অন্যায় তুলে ধরার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। কিন্তু ফলাফল কিংবা প্রতিবাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছে না প্রতিবাদী মানুষ।

 

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে যখন প্রতিবাদী মানুষজন হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের কিন্তু পরে অস্বীকার করে বলা হয় সেটা করা হয়নি, তখন ভীতি এসে ভর করে প্রতিবাদীদের মনে। শত শত মানুষ গুম, নিখোঁজ হয়ে গেলো, দিন-দুপুরে পুলিশ-র‌্যাব উঠিয়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করার পরও কি বলা যায়, এশিয়ার ছোট্ট ঐ দেশটিতে মানুষের সাধারণ মৃত্যুর কোন গ্যারান্টি আছে ? অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে যেখানে সন্ত্রাসবাদ কিংবা মৌলবাদীর উত্থান বলা হয় সেখানে ন্যায় বিচার কি আশা করা যায় ?

 

অবাক রাষ্ট্র বাংলাদেশ যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় খুনের নির্দেশ দিয়ে বহাল তবিয়তে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে পারে ! মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির শেষ ভরসাস্থল আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল হয়, বিচারকের দরোজায় লাথি মারা হয় এবং একটা সময় দেখা যায়, যে লোক বিচারকের দরোজায় লাথি মারতে পারে সেই আবার উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পায় !

অবাক রাষ্ট্র বাংলাদেশ, যেখানে শিক্ষিত, মধ্য শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত এবং মূর্খ মিলিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় সংসদের ‘মাননীয় সংসদ’ সদস্যদের কাছে এখন উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা দায়বদ্ধ। এজন্য আইন করা হয়েছে।

আরো বিস্ময়ের বিষয়, এতো বড় দ্বাম্বিকতার পরও জনতার প্রতিরোধের স্রোত দেখা যায়নি রাজপথে। অন্যায়-অবিচারের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে সেটা শুধু আতঙ্কেরই নয়, রীতিমত ভয়াবহ।

মানবতা এখানে ক্ষমতার দাপুটে দলীয় বাহাদুরদের কাছে জিম্মী। ক্ষমতাসীনদের অন্যায়-অপকর্মের প্রতিবাদ করলে হয় জেল-জুলুম না হয় সরাসরি ‘ক্রসফায়ার নাটক’ ! কথা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে কি বলা যায় আইনের শাসন রয়েছে দেশে ?

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতরে কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাগুলো পারিবারিক পরিন্ডলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও এর প্রভাব সামাজিক ক্ষেত্রে কতটুকু পড়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইন্ডিয়ান কোন একটি মেঘা সিরিয়ালের নায়িকা ‘পাখী’ নামের একটি ‘ড্রেস’ পরিধান  করেছিলো। গত ঈদুল ফিতরের বাজারে ঐ পাকি ড্রেসটি ছিলো দারুন জনপ্রিয়। ঈদে ঐ পাখী ড্রেস না পেয়ে স্বামীকে তালাক দিয়েছে স্ত্রী, চতুর্থ শ্রেনীতে পড়–য়া স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে এমন দুঃজনক ঘটনা এলো ঈদের বিশেষ সংবাদ শিরোনাম হয়ে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশে।

তাই ‘পাখী’ ড্রেস এখানো বাংলাদেশের ফ্যাশন মার্কেটে ব্যাপক আলোচিত তরুণীদের মধ্যে। সেই পাখী ড্রেস নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ফের বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর  (অব.) মেজর শামসুজ্জোহা, যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের একটি ফটোটে স্ট্যাটার্সে লিখেছিলেন এটাই কি পাখী ড্রেস এবং সেটি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (?) শেখ হাসিনার ছবির নিচে লিখে তার ব্যক্তিগত এক্যাউন্টে পোস্ট দেন। আর সে কারনেই পুলিশ বাদী হয়ে অবসর প্রাপ্ত ঐ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথিত ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করে এবং সেই সাথে মামলা দায়েরের তিন ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে ! প্রধানমন্ত্রীর শাড়ীপড়া ছবি এবং সিনেমার নায়িকার স্টাইলে তার চাদর খুলে খুব সম্ভব ইইউর শীর্ষ কর্মকর্তার সামনে হেসে হেসে শুভেচ্ছা বিনিময় ভঙ্গিতে ‘এটাই কি পাখী ড্রেস’ বলার মত কুখ্যাত (?) অপরাধ করায় মহামান্য (?) আদালত মহাব্যথিত হয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

কথায় কথায় শুনছি বাংলাদেশে নাকি আইনের শাসনের এখন স্বর্ণ যুগ চলছে। যে রাষ্ট্রে কোন নাগরিক ‘এটাই কি পাখী ড্রেস’ লিখে ফেইসবুকে পোস্ট করে রেহাই পায় না সেই রাষ্ট্রে আইন আদালত কার গোলামী করে সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ?

প্রকাশ্য জনসভায় শামীম ওসমান নামের গডফাদার রাজনীতিবীদ, সাংবাদিক, আলেম উলামাদের চরম শায়েস্তা করার হুমকী দিলে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (?) ওসমান পরিবারকে নিজ পরিবার ঘোষনা দিয়ে ,যে কোন অবস্থায় তাদের সুরক্ষার প্রতিশ্রতি দেন। সেই শামীম ওসমান এখন শুধু বেপরোয়াই নয়, সভা, সমাবেশ, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং, টিভি টকশো তার মুখে যে ভাষার ব্যবহার শোনা যাচ্ছে সেগুলো শুধু নোংরামীই নয়, সভ্য সমাজে এমন ভাষা কেউ আশা করে না। মহা ভাগ্যবান শামীম ওসমান ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ধর্ষণের সেঞ্চুরী পালনকারী সেই জসীম উদ্দিন মানিকের মত আওয়ামীলীগ প্রধানের সোনা মানিক রতন হিসেবে পার্টিতে খোদ তার নেত্রীর ছায়ার নীচে সুখের আশ্রয়ে ‘গুন্ডামী’ করার সুযোগ ও সাহস পাচ্ছে।

তবুও বলা হয় আজব দেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসনের সবচেয়ে ভালো সময় যাচ্ছে ? যেখানে ঘরোয়া মিটিং হয় গোপন বৈঠক, প্রকাশ্য সমাবেশ হয় দেশ বিরোধী ও আইন শৃঙ্খলার অবনতির সৃষ্টিকারী  কাজ। তাই মিছিলে গুলি করে মানুষ হত্যা, পঙ্গু করে দেয়া এখন খুব সাধারণ কাজ ! তবুও নাকি বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন প্রস্ফুটিত হয়েছে। পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখন বদ্ধ পরিকর শেখ হাসিনা, দেশে তার সর্বগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সকল অপচেষ্ঠা চালানো শুরু করেছেন।

আজ মানুষের বিচার প্রাপ্তির শেষ আশ্রয়স্থলে বিচার বিভাগের উপর পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দুষ্টামীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানে কথিত ষোড়স সংশোধনীর পাশের   মাধ্যমে উচ্চতর আদালতের বিচারপতিদের অপসাধারণ বা অভিশংসনের ক্ষমতা  জাতীয় সংসদ তথা আওয়ামী লীগের হাতে নিয়ে গেলো। নিজাম হাজারীর মত অস্ত্র মামলার দাগী আসামী, নূর নবী শাসনের মতো খুনী যুবলীগ নেতা, শামীম ওসমানের মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসী গডফাদার, ক্যাপ্টেন তাজুলের মতো অস্ত্রবাজ সহ অসংখ্য সন্ত্রাসী গডফাদারে পরিপূর্ণ সংসদের সদস্যরা মহামান্য হাইকোর্ট, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের কাছে এখন থেকে তাদের প্রয়োজনমতো জবাবদিহীতা চাইবে এবং প্রয়োজনে অপসারণ করবে ? কি দারুণ ব্যবস্থা ? এমন আদালত, এমন বিচার ব্যবস্থা এবং আইনকে বলা যায় “ডান্ডাবেড়ী পড়া,শৃংখলিত আইনের দুষ্টামী নীতি”।

সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল সহ দেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন সর্বত্র ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এমন ত্রাসের শাসন কোন ভাবেই ভালো নয়। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা বলতে আর কিছু থাকছে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। শেখ হাসিনা যা খুশী তাই করবেন। তিনি তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনি বদ্ধ পরিকর।

একের পর এক এমন প্রশ্নবিদ্ধ, পদক্ষেপ কেন নেয়া হচ্ছে এর প্রয়োজনীয়তাই বা কি এবং এতো তাড়াহুড়ো করে কেন এমন আইন করা হলো এমন প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দারুণ (?) যুক্তি দেখিয়ে বলা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি যদি প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদ ভাঙ্গার অনুরোধ করতে পারেন, হবে তার বিচারপতিদের কেন অপসারণ করা যাবে না ? এমন জবাব নিয়ে যখন তারা প্রশ্নকারীদের খুশী করতে পারেন না তখন তারা উদাহরণ দেন বৃটেন ভারত, জার্মানী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও শ্রীলংকায় এমন ব্যবস্থা চালু আছে। এটা একটা দারুণ উদাহরণ। ওরা যদি বিচারপতিদের সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারে, তবে বাংলাদেশে কেন করা হবে না ?

 

তা হলে প্রশ্ন হচ্ছে- বৃটেন, আমেরিকা, জার্মানী, শ্রীলংকা, ভারতের জাতীয় সংসদ নির্বাচগুলো কি বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মতো ভোটারবিহীন কিংবা ভোট ছাড়াই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিজয়ী (!) হয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে ? ঐ সব দেশগুলোর নির্বাচনে কি ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির চেয়ে ‘গরু’ ‘ছাগল’ কুকুর’র উপস্থিতি বেশী দেখা গেছে?? 

ঐ সব দেশগুলোতে কখনো কি ৫ জানুয়ারীর মত কোন নির্বাচনের সম্ভাবনা আগামী একশো বছরের মধ্যে রয়েছে ? বৃটেন আমেরিকা কিংবা উপরোল্লিখত দেশগুলোতে কি কখনো শোনা গেছে এর্টনী জেনারেল কিংবা তাদের কোন সহযোগীকে রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হযেছে ? কখনো কি কেউ শুনেছেন এসব দেশের আদালতে কোন এর্টনী জেনারেল বা পদস্থ আইন কর্মকর্তা সরকারের চাটুকারীতা করছেন ?

 

আর কখনো কি উল্লেখিত বিষয়গুলো বৃটেন-আমেরিকার মতো দেশে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে? বেশী দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, ভারতের সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনই বাস্তব উদাহরণ। একশো কোটিরও বেশী জনসংখ্যার দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  (লোকসভা) যেখানে বিরোধী দল কিংবা কোন ইলেকশন মনিটরিং গ্র“প বলতে পারেনি নির্বাচনে কারচুপী, জালিয়াতি হয়েছে।

 

এসব দেশে কোটি কোটি ভোটারের উপস্থিতিতে হওয়া নির্বাচনের একটি কেন্দ্রেও কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সন্ত্রাসী গ্র“প কেন্দ্র দখল কিংবা ব্যালটবাক্স ছিনতাই করেছে এমন উদাহরণ দেয়ার মতো তথ্যও পাওয়া যায়নি। অথচ শেখ হাসিনা ও আওয়ীলীগ নেতারা বিচারপতিদের অভিশংসন করার আইন জায়েজ করতে ভারত, আমেরিকা, বৃটেনের উদাহরণ দিয়ে নিজেদের বিশাল বড় মাথার জ্ঞানী পরিচয় বোঝাতে চাইছেন !

 

বিস্ময়ের বিষয় যে সাবেক মন্ত্রী মোঃ নাসিম একদিন সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করে হামলা-ভাংচুর করেছেন সেই নাসিম এখন জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এখন বিচারপতিদের অভিশংসন এর দায়িত্ব পালনকারী একজন সদস্য থাকবেন ? নিজাম উদ্দিন হাজারীর মতো অস্ত্র মামলায় সাজা খেটে জালিয়াতি করে জেল থেকে বের হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে যে লোক সেই নিজামের মতো ক্রিমিনাল বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা পাবে !!

 

জসীম উদ্দিন মানিক নামের এক ছাত্রলীগ নেতা (!) বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ধর্ষণের সেঞ্চুরী’ পালন করার পরও যে শেখ হাসিনা নূন্যতম ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, তাকে সরকারী চাকুরী দিয়ে সম্মানীত করেছেন সেই নেত্রী নাকি বিচারপতিদের অভিশংসনের আইন করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান ?

 

সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, আদালতের কোন আদেশ যখন তাদের মনোপুতঃ হয় না তখন তারা প্রকাশ্যই আদালতের বিরুদ্ধে লাজ-লজ্জা ছেড়ে অবস্থান নেন ! যেমন সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার সহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঐ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হিসেবে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা যিনি (প্রেশনে র‌্যাব এর দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার) এর দায়িত্ব পালন করছিলেন সেই কর্মকর্তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে সেভেন মার্ডারের অভিযোগ উঠে। র‌্যাব কর্তৃক প্রকাশ্য উঠিয়ে নিয়ে অন্যান্য ক্রসফায়ার ও গুমের ঘটনা গুলোর মত এ অপহরণের ঘটনাও প্রথমে র‌্যাব অস্বীকার করে। অভিযোগ আরো জোরালো হয় যখন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডাঃ আইভী অভিযোগ করেন সেভেন মার্ডারে শুধু র‌্যাব নয় একজন গডফাদারও পরোক্ষভাবে জড়িত।

 

আলোড়ন সৃষ্টিকারী অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় যখন রাষ্ট্রীয় বিশেষ সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয় যে, ঐ ঘটনাটি আওয়ামীলীগের মন্ত্রী, মোফাজ্জল হোসেন মায়ার জামাতা জামাতা (সেনা কর্মকর্তা) জড়িত তখন সেনাবাহিনী তাকে সহ অন্য অফিসারদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়। তখন দাবী ওঠে এদের গ্রেফতার করতে হবে। এমতাবস্থায় আদালতে একটি রিট আবেদন করলে আদালত জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো, আদালত কেন সেনা অফিসারদের গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করলো সেটার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর (?) দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরাতো বিষয়টি দেখছি, তদন্ত হচ্ছে তবে কেন আদালত এমন নির্দেশ দিচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না।’

 

মানুষ কত বড় বেকুব এবং দ্বাম্ভিক হলে এমন দুঃসাহস দেখাতে পারে এবং আদালতের চেয়ে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য কত বড় বেপরোয়া হলে কেউ এমন উদ্ব্যেত্যপূর্ণ কথা বলতে পারে সেটার বাস্তব স্বাক্ষী জাতি ! শেখ হাসিনা নিজের প্রধানমন্ত্রীগিরি ফলানোর জন্য কত বড় দুঃসাহস দেখাতে পারেন সেটাই তিনি সেদিনকার বক্তব্যে দেখিয়েছেন। অথচ যে দিন নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল সহ সাতজন অপহৃত হন এর বারো মিনিটের মধ্যে তিনি তার ভাই খ্যাত এমপি (গডফাদার নামে সমধিক পরিচিত) শামীম ওসমানের কাছ থেকে ফোনে জেনেছেন।

 

শামীম ওসমান বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক ও লাইভ প্রোগ্রামে এমনটি জানিয়েছেন। কিন্ত কি হলো শেষ পর্যন্ত ? শেখ হাসিনা অস্বীকার করেন নি তিনি নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন একটি সমাবেশে। তিনি বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক ওসমান পরিবারের পাশে তিনি থাকবেন।

 

শামীম ওসমান শুধু বাংলাদেশের জনগণের কাছে নয়, গোটা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে ‘সন্ত্রাসী গডফাদার’ হিসেবেই পরিচিত। অথচ সেই গডফাদারের সাথেই আছে খোদ রাষ্ট্রযন্ত্র,প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ?

 

এমন সেলুকাস দেশে আইনের শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচারপতিদের অভিশংসন এগুলোতো ক্ষমতাসীনদের কাছে ডালভাত। তারা যে কোন কিছুর মূল্যে ক্ষমতা চায়। তাই তাদের প্রয়োজন শামীম ওসমান, নিজাম হাজারী, শাওনদের মতো সন্ত্রাসী, খুনী গডফাদারদের।বাংলাদেশের সাধারন মানুষদের এসব দানবদের ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যতোটা জরুরী,জনগনের সমর্থন পাওয়া ঠিক ততোটাই কঠীন এবং দূর্লভ আওয়ামী লীগের কাছে। তাই জনগনের ম্যান্ডেটের কোন তোয়াক্কা আজ তারা আর করেন না।

আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা সম্ভবত জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কবিতার সেই অমর পংত্তিটি ভূলে গেছেন,'আসিতেছে শূভদিন,দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা,শুধিতে হইবে ঋন'।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!