দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুস্ন্ধানঃ ইয়াবা বেচা-কেনার নিরাপদ জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশের অনলাইন জগত। অনলাইনে ইয়াবা ব্যবসায়ের কার্যক্রম চলছে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে।
অনলাইনে ইয়াবা ব্যবসায় মূলতঃ ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও এরইমধ্যে দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও এই চক্রের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ইয়াবা-ব্যবসায়ীদের আটক করতে পারলেও, এই অনলাইন ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
নতুনদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কমপক্ষে তিন-চার বছর ধরে চলে আসছে অনলাইনে ইয়াবা বিক্রয়ের কার্যক্রম। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চলছে সমাজ বিধ্বংসী মাদক ইয়াবা বিক্রয়। ইয়াবা আসক্ত তরুণদের সাথে কথা বলেও অনলাইনে ইয়াবা বিক্রয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে নতুনদিন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইয়াবাসেবী বলেন, কেবল একটি নয় একাধিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই চলছে অনলাইনে ইয়াবা কেনা-বেচা। এছাড়া, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে বেশ নিরাপদেই চালান সম্ভব হয় এই ধরণের ইয়াবা ব্যবসায়।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনলাইনে বিভিন্ন ফোরামে ইয়াবা বিক্রেতারা নিজেদের ফোন নাম্বার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে। আবার ক্রেতারাও নিজেদের ফোন নাম্বার দিয়ে বিক্রেতার সন্ধান করছে। এছাড়া, ঢাকা শহরের কোন এলাকায় ইয়াবা বিক্রয় করা হবে, বিক্রিত ইয়াবা কোথায় হস্তান্তর করা হবে ইত্যাদি বিষয়াদি ঠিকঠাক করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ওয়েবসাইটগুলো।
এই ওয়েবসাইটগুলোর একটি হচ্ছে-http://www.topix.com/forum/bd/dhaka/TJAQFEEQJLA9UK7BK। এছাড়া, ফেসবুকেও বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গোপন গ্রুপ খুলে চলছে ইয়াবা ব্যবসায়। উল্লেখিত ওয়েবসাইটটিতে ২০১১ সাল থেকে ইয়াবা বিক্রয়ের তথ্য প্রমাণ মিলেছে। ইয়াবার ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন রেট উল্লেখ করে ক্রেতা খোঁজার কাজ করে বিক্রেতারা। মূলতঃ রাজধানীর মহাখালী, মিরপুর, বনানী, ওল্ড ডিওএইচএস, বসুন্ধরা, মতিঝিল, বাড্ডা, গুলশাল, ধানমন্ডি এলাকার ইয়াবাসেবীরাই অনলাইনে ইয়াবাবিক্রেতা চক্রের খপ্পরে পড়েছে। তবে, অনলাইনে ইয়াবা কিনতে গিয়ে আর্থিক প্রতারণার শিকারও হচ্ছে ইয়াবা আসক্তরা। ফলে, আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে নানান অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে রাজধানীর তরুণরা।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুসারে, ২০০১ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে এসে মোট ইয়াবা আসক্ত তরুণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৮০ লাখ। প্রতি বছর কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৮ ভাগ হারে ইয়াবা আসক্ত তরুণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অনলাইন জগতকে কেবল এই মাদক বেঁচা-কেনার জন্যই ব্যবহার করছে না। এই মাদকের প্রতি তরুণদেরকে আগ্রহী করে তোলার জন্যও কাজে লাগাচ্ছে। ফলে, দেশের তরুণদের ইয়াবা আসক্তি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলছে।