DMCA.com Protection Status
title="৭

প্রসঙ্গ: বিয়ের বয়স কমানো, উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ

15066157409_f758b260e9_b-300x200উল্টো পথে হেঁটে পিছিয়ে পড়ার নির্মম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাল্যবিবাহ রোধ করে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। একারণেই বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিল বিশ্বগবেষকরা।

বাল্যবিবাহ রোধের উপকার সম্পর্কে জানতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দুই গবেষক এরিকা ফিল্ড ও এত্তিলা এম্রুস বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০৮ সালে। বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণায় তারা দেখতে পান, বাংলাদেশের নারীদের বিয়ের বয়স এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় কমপক্ষে তিনমাস বেশি পড়াশুনার সুযোগ মেলে তাদের। এবং শিক্ষার হার বেড়ে যায় ৫.৬ ভাগ।

কিন্তু হঠাৎ করেই উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। সরকার চাইছে নারী ও পুরুষের বিয়ের নূন্যতম বয়স ১৬ ও ১৮ করার জন্য। কিন্তু কেন? প্রশ্নটির উত্তর এখনও স্পষ্ট করেনি সরকার। তবে সমালোচকরা বলছেন, সরকার দেশের ইসলামী মনোভাবের মানুষদের সাথে তাল মেলাতেই এমন আইন করতে চাইছে। কিন্তু খোঁজ নিলেই দেখা যায়, খ্রিস্টান অধ্যুষিত অনেক দেশেও ১৬ বছর বয়সেই নারীদেরকে বিয়ে দেওয়ার আইনগত বৈধতা আছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের অনেকগুলো অঙ্গরাষ্ট্রেও ১৬ বছরের কিশোরীদের বিয়ে দেওয়া যায়।

উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে নেওয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের বিবাহ রীতি কিংবা জনসংখ্যা নীতি নির্ধারণে নীতি-নির্ধারকরা প্রায়শঃই উদাহরণ হিসেবে নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে। যেমন, গত জুন মাসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন আমাদের যে স্লোগানটা রয়েছে আমি তার সাথে দ্বিমত পোষণ করি। বলা আছে যে, ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’। আমি শেষের কথাটা বাদ দিতে চাই। ‘শেষের লাইনটি বাদ দিতে চাই এ কারণেই যে, যেসব দেশ এই ধরনের স্লোগান দিয়ে এগিয়েছে, এখন তারা ‘বৃদ্ধের রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাদের তরুণ সমাজের দারুণ অভাব। কর্মক্ষম তরুণ সমাজ নেই। তারা আবার তাদের স্লোগান পরিবর্তন করে এক একটি পরিবার দুই-তিনটি সন্তান যেন নেয়, সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিছুদিন আগে দুটি দেশ (জাপান ও চীন) ঘুরেছি। সেখানেও প্রায় একই অবস্থা”।

এইভাবে উন্নত রাষ্ট্রের পথ ধরে নিজেদের রীতি-নীতি নির্ধারণ আত্মহত্যার সামিল হয়ে দাঁড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে, নিজেদের সম্মতিতে ১৬ বছরের কোন নারীকে বিয়ে দিতে পারবে তার পরিবার। কিন্তু বাংলাদেশে কি পিতামাতা নিজেদের সম্মতিতে ১৬ বছরের কিশোরীকে বিয়ে দেবেন? না কি ভিন্ন কোন কারণে? দৃশ্যতঃ বাংলাদেশে পিতামাতা সম্মতি নয় বরং লালন-পালনে অক্ষম হয়ে বিয়ে দেবেন নিজের কিশোরী সন্তানটিকে। ইচ্ছাকে বৈধতা দেওয়ার আইন থাকতে পারে কিন্তু অক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্যও সরকার আইন তৈরীতে উঠে পড়ে লাগবে?

এবার দেখা যাক বাংলাদেশসহ এলডিসি অন্তর্ভুক্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স-

বাংলাদেশ, বুরুন্ডি ও নেপালে ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর। রুয়ান্ডা, সিয়েরা লিওন ও জাম্বিয়ায় ছেলে ও মেয়ে উভয়ের বিয়ের বয়স ২১ বছর। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ছেলেদের ২২ ও মেয়েদের ১৮ বছর, বারকিনা ফাসো ও টোগোতে ২০ ও ১৭ বছর, কম্বোডিয়াতে ২০ ও ১৮ বছর, সেনেগালে ২০ ও ১৬ বছর।

এছাড়া এঙ্গোলা, ভুটান, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, মায়ানমার, মাদাগাস্কার, মৌরিতানিয়া ও দক্ষিণ সুদানে ছেলে ও মেয়েদের উভয়ের জন্য বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। আফগানিস্তান, লাইবেরিয়া, গাম্বিয়া, ভেনোয়াতো ও সোমালিয়াতে ছেলেদের বিয়ের বয়স ১৮ ও মেয়েদের ১৬ বছর। মালি, বেনিন ও নাইজারে ছেলেদের বিয়ের বয়স ১৮ ও মেয়েদের ১৫ বছর। গিনিতে ১৮ ও ১৭ এবং ইয়েমেনে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৫ বছর।

এক্ষেত্রে যেসব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান, সেসব দেশগুলোতেই বিয়ের ন্যূনতম বয়স কম। অন্যদিকে ঐ দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থাও নাজুক। বিয়ের বয়স কমানোয় দেশগুলোতে কমবয়সেই সন্তান গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু অর্থনীতি সমৃদ্ধ না হওয়ায় দেশগুলোতে জীবনমানের কোন উন্নতি ঘটছে না। এদিকে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জনসংখ্যা নীতিও পড়ছে হুমকির মুখে। সেই সাথে অল্পবয়সে সন্তান গ্রহণের ফলে নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। বাংলাদেশেও কমবেশি এই সমস্যাগুলো বিদ্যমান। তাই বিয়ের বয়স কমানো হলে সমস্যা না কমে বরং বাড়বে, এটা স্পষ্ট।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!