যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই থাকার রায় দিল স্কটল্যান্ডের জনগণ। ঐতিহাসিক গণভোটে প্রত্যাখ্যাত হল ৩০৭ বছরের পুরনো ব্রিটিশ ইউনিয়ন ভেঙে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা।
এই ফলাফল লাখ লাখ ব্রিটেনের মতো প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকেও স্বস্তি এনে দিল। স্কটল্যান্ডের গণভোট নিয়ে ডেভিড ক্যামেরনের প্রধানমন্ত্রিত্ব হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি দেশটির মিত্ররাও যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য ভাঙ্গনের শঙ্কায় পড়েছিলেন। স্কটল্যান্ডের ৩২টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ৩১টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকতে চাওয়ার পক্ষে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর স্বাধীনতাকামীরা পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ ভোট।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্কটল্যান্ড আত্মপ্রকাশ করবে কি না তা নিয়ে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর ঐতিহাসিক গণভোটে ভোট দেয়ার জন্য প্রায় ৯৭ শতাংশ ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। ‘না’ ভোট জয়ী হলে স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই থাকবে, আর ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ হতো স্কটল্যান্ডের।
কিন্তু শুক্রবার ৩১টি নির্বাচনী এলাকার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, ‘না’ ভোটই জয়যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ স্কটিসরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই থাকতে চায়। স্কটল্যান্ডের ৪২,৮৫,৩২৩ জন ভোট দেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন যা মোট ভোটের ৯৭ শতাংশ। দেশটির ৩২টি কাউন্সিলের নাগরিকরা এই ভোটে অংশ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় রাত ১০টায়। দেশটির ২৬০৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে।
স্কটিস ন্যাশনালিস্ট পার্টির উপনেতা নিকোলা স্টারগেওন দাবি করেছেন, “দেশজুড়ে হাজারো মানুষের মতো আমিও সর্বাত্মকভাবে স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু হতাশার সঙ্গে জানাতে হচ্ছে আমরা খুব স্বল্প ব্যবধানে হেরে যাচ্ছি। এদিকে স্বাধীনতার পক্ষগোষ্ঠী যেখানে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন বিপরীতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকতে চাওয়া গোষ্ঠী ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠছে।
আশা করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যের রাণী এলিজাবেথ ও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই ফলাফল উপলক্ষ্যে বিবৃতি দেবেন। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষগোষ্ঠী সবচে বড় শহর গ্লাসগোতে জয় লাভ করলেও অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যাশিত ফল লাভে ব্যর্থ হয়।
১৭০৭ সালের অ্যাক্ট অব ইউনিয়ন থেকে শুরু করে রয়্যাল ইউনিয়ন, এমনকি রাগবি ইউনিয়নেও ইংরেজ ও স্কটিশরা পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। গত তিন শতকে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের যৌথ কর্মসূচীর হাইলাইটস নিয়ে রইল এবারের বিশেষ ফটোফিচার-

ডার্বিশায়ারের ফ্যাশন ডিজাইনার ভিভিয়েনি ওয়েস্টউড আন্তর্জাতিক ক্যাটওয়াকেও স্কটদের পোশাকই সামনে নিয়ে আসেন।

১৮৭৯ সালে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ক্যালকাটা কাপ, রাগবি ইউনিয়ন ট্রফি দেওয়া হচ্ছে।

ইয়র্কের ডিউজ, প্রিন্স এলবার্ট, পরবর্তীতে রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ বিয়ে করেন স্কটিশ পিতামাতার কন্যা এলিজাবেথ বোয়েস-লাইওনকে।

ট্রেইনস্পট নামের সবচেয়ে(বলা হয়ে থাকে) বিখ্যাত স্কটিশ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তরুন ইয়ান এমসিগ্রেগর। পরিচালনা করেন ইংরেজ পরিচালক ড্যানি বয়েল।

ইংরেজ ব্রেডলি উইগিংস ২০১২ সালে ট্যুর ডি ফ্রান্স জিতে নেয়। এই প্রথম যান্ত্রিকভাবে তৈরি দুই চাকার যান ১৮৩৯ সালে বানিয়েছেন স্কটিশ কুমার কির্কপ্যাট্রিক ম্যাকসিমিলান।

বিবিসির প্রথম ডিরেক্টর জেনালেন হলেন স্কটল্যান্ডের লর্ড জন রেইথ যিনি ব্রিটিশ টেলিভিশনকে বিশেষ সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এবং টিভিকে প্রথম স্থানে নিয়ে যান জন লগি বেয়ার্ড, তিনিও একজন স্কটিশ।

স্কটিশ পপ স্টার এনি লেনক্স ২০১২ সালে লন্ডনে বাকিংহাম প্যালেসের সামনে রাণীর ডায়মণ্ড জুবিলি কনসার্টে পারফর্ম করছেন।

১৭০৭ সাল থেকে ব্ল্যাক ওয়াচসহ(আফগানিস্তানে এখন যেটি যুদ্ধ করছে) স্কটিশ রেজিমেন্ট ব্রিটিশ আর্মির অংশ হয়। ২০০৯ সালে কর্পোরাল থমাস মেসনের কফিন জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে কাউডেনবিথ এর ট্রিনিটি পারিশ চার্চ থেকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়।

চার্লস বার্টন বার্বারের একটি তৈলচিত্রে রানী ভিক্টোরিয়া ও স্কট জন ব্রাউন এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ মনিব-ভৃত্য সম্পর্ক দেখা যায়।

১৯৬৫ সালে থান্ডারবল চলচ্চিত্রে ব্রিটিশ স্পাই জেমস বন্ডের ভূমিকায় অভিনয় করছেন স্কটিশ অভিনেতা সিন কোনারি।

১৬৯১ সালে অ্যাক্ট অব ইউনিয়ন স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ কারেন্সি কিপারকে ধোঁকা দেন স্কটল্যান্ডের স্যার উইলিয়াম প্যাটারসন।