দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ বেশি দাম দিয়ে ৬ দশকের পুরনো মডেলের সাবমেরিন কিনছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চীন থেকে ‘মিং ক্লাসের’ এই দুটো সাবমেরিন কিনছে। এছাড়া, এই সাবমেরিনগুলো কেনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কুতুবদিয়া দ্বীপে কয়েকজন চীনা সামরিক সদস্যকেও অবস্থানের অনুমতি দিবে।
প্রাথমিকভাবে সাবমেরিনগুলো ২০৩ মিলিয়ন ডলারে কেনার কথা থাকলেও পরবর্তীতে দরকষাকষির পর এগুলোর মূল্য দাঁড়ায় ১৯৩ মিলিয়ন ডলার। সামরিক অস্ত্র বাণিজ্য পর্যবেক্ষকদের মতে, মিং ক্লাস সাবমেরিনগুলো অনেক পুরনো মডেলের হওয়ায় এই দামের বোঝাটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি হয়ে গেছে।
সামরিক কৌশল ও অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাবমেরিন বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় উপযোগী নয়। তবে পর্যবেক্ষণমূলক কাজে ও প্রশিক্ষণের জন্য এই সাবমেরিনগুলো চাইলে ব্যবহার হতেও পারে।
চীন সরকার যে সাবমেরিনগুলো বাংলাদেশে রপ্তানি করছে সেগুলোর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিল একযুগ আগে। ২০০৩ সালে এই ডিজাইনের একটি সাবমেরিন দুর্ঘটনায় চীনের নৌবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় সাবমেরিনটিতে অবস্থানরত ৭০ জন নৌ-সদস্যের সকলেই মারা যান। ২০০৩ সালের সিএনএন’র রিপোর্ট অনুসারে ওই দুর্ঘটনার কারণ ছিল সাবমেরিনটির যান্ত্রিক গোলযোগ।
দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ‘মিং ক্লাস’ মডেলের সমপর্যায়ের সাবমেরিনগুলো কেবল ট্রেনিং দেওয়ার জন্য কখনও কখনও ব্যবহার করে বর্তমান রাশিয়ার নৌবাহিনী। এছাড়া, এই মডেলের সাবমেরিন ব্যবহার পরিত্যাগ করেছে সিরিয়া ও আলজেরিয়া সরকার।
মিং ক্লাস সাবমেরিনগুলো গত শতকের পঞ্চাশের দশকে প্রথম ডিজাইন করে বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার। সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারের কাছে ওই সাবমেরিনগুলো রোমিও ক্লাস সাবমেরিন হিসেবে পরিচিত ছিল।
সোভিয়েত সরকার এই ধরণের সাবমেরিনগুলো মোট ৫৬টি তৈরী করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারপর এর চাইতেও ভালো ও কার্যকর সাবমেরিনের ডিজাইন উদ্ভাবন হওয়ায় প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় তারা। অবশেষে সোভিয়েত সরকার ৫৬টির বদলে মোট ২০টি সাবমেরিন তৈরী করেছিল।
১৯৬৩ সালে চীন-সোভিয়েত শান্তি চুক্তির অধীনে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে রোমিও ক্লাস সাবমেরিন তৈরীর প্রয়োজনীয় বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা পায় চীন। এই বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তার অংশ হিসেবেই রোমিও ক্লাস সাবমেরিনের চীনা সংস্করণ (মিং ক্লাস সাবমেরিন) তৈরী করেছিল চীন। এরপর চীন এই সাবমেরিনের মডেলটিতে নানান সংস্কার ঘটায়।
ইনিস্টিটিউট অব পিস এন্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ এর হিসাব মতে, বাংলাদেশের মোট সামরিক অস্ত্রের ৮০ ভাগই আসে চীন থেকে। সামরিক অস্ত্র কেনার বাজেট কম হওয়ায় বাংলাদেশের বাজার দখলে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে চীন।
কম দামে কার্যকর অস্ত্র সরবরাহ করা, অস্ত্র বিক্রয়ের বিপরীতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার মতো নানান কৌশলে বাংলাদেশের সাথে নিজেদের অস্ত্র ব্যবসায় বাড়ানর চেষ্টা করছে চীন। তবে, অস্ত্রগুলো কমদামে উৎপাদিত হওয়ার, এগুলোর মান নিয়ে অসন্তোষ থাকতে পারে বলে মনে করেন ইনিস্টিটিউট অব পিস এন্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের গবেষকরা।