ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সময় থাকতে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমাকে বন্দি করার আগে নিজেদের পথ পরিষ্কার করে রাখুন। পাসপোর্ট-ভিসা রেডি রাখবেন, নইলে জনগণ আপনাদের ছাড়বে না।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত স্মরনকালের বৃহত্তম জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জনগণের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ঈদের পরে যে আহ্বান জানাবো আপনারা তাতে সাড়া দেবেন। আমি যেখানেই থাকি আপনাদের সঙ্গে থাকবো।’
সরকার গ্রেপ্তারের ভয় দেখাচ্ছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘হাসিনা, গ্রেপ্তারের ভয় আমরা পাই না। মইন উ আহমেদ, ফখরুদ্দিন আমাকে ভয় দেখিয়েছিলো। আমি কী বিদেশ গিয়েছি? আমি যাইনি। হাসিনা বিদেশ চলে গিয়েছিলেন। অথচ তিনি এখন বড় বড় কথা বলেন।’
তিনি বলেন, ‘তারা ভয় দেখায় আমাকে জেলে নেবে, আমি জেলখানায় ভয় পাই না। আমি জেলে গেলে কিছু হবে না। আপনারা যে খুন গুম করেছেন প্রতিটি তথ্য আমাদের কাছে আছে, আপনাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ভয় দেখাবেন না।’
বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদকে দিয়ে যে আইন পাস করা হয়েছে তার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এসব বাতিল করেন। বিচারকরা এখন অসহায়। তাদের হাত বাঁধবেন না। একদিন হরতাল দিয়েছি। প্রয়োজনে যে কোনো কর্মসূচি দেবো।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। আর সে কারণেই সরকারের কথায় রায় দেয়া হয়। এবার সংবিধানের সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নেয়া হয়েছে। তাই পছন্দমতো রায় না দিলে আইনের মাধ্যমে তাদের অপসারণ করবে।’
মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় স্থানীয় নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবি এবং গুম-খুন-নির্যাতন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়ার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ জনসভা শুরু হয়।
র্যাব প্রসঙ্গে বেগম জিয়া বলেন, ‘এ র্যাবকে এখন সন্ত্রাসী বাহিনীতে রূপান্তর করা হয়েছে। তারা এখন মানুষের জন্য আতঙ্ক। তাই যতোদ্রুত সম্ভব র্যাবকে বিলুপ্তি করতে হবে।’
জোট প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জোট ভেঙে যাচ্ছে এমন কথা ছাড়ানো হচ্ছে। আসলে বিএনপি জোট ভাঙবে না, ইনশাল্লাহ জোট থাকবে। যারা দেশ প্রেমিক তারা বেঈমানদের সাথে মোনাফেকদের সাথে যেতে পারে না। যারা জোটে আছেন তারা আরো বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হবেন। জালিম সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করবেন।’
সম্প্রচার নীতিমালার সরকারের স্বার্থে, উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘অবৈধ সরকার সংসদে বসে একের পর এক আইন পাস করছে। কিছুদিন আগে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা পাস করেছে। আমরা কথা বললে তা প্রচার হবে না। তাদেরতো বিটিভি আছে। প্রাইভেট চ্যানেলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। এসব জনগণ মানবে না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কথায় কথায় দুর্নীতির কথা বলে। অথচ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দুর্নীতি হয়। শেয়ারবাজার, ডেসটিনি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। অবৈধ অর্থমন্ত্রী লুট হওয়া অর্থের বিষয়ে বলেছে, এগুলো সামান্য টাকা।’
কুইক রেন্টাল প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করেছে অভিযোগ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়েনি, এ খাত থেকে টাকা লুটপাট করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবে আশুগঞ্জে সার কারখানা বন্ধ রাখে ফলে সার উৎপাদন হয় না। দ্বিগুন দামে বিদেশ থেকে সার আমদানি করা হয়।’
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী বিএনপি জোটের সঙ্গে রয়েছে বলে তারা কখনও জঙ্গি, কখনও খারাপ। এই জামায়াতে ইসলামী একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলো তারা তখন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ছিলো।’
শিক্ষার যা কিছু উন্নতি হয়েছে বিএনপি সরকারের সময় এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখন সরকার কিছুই পায় না সেজন্য তারা এখন গণহারে পাস করিয়ে দেয়। পাসের হার এভাবে দেখিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শওকত মাহামুদ, যুগ্ম মহাসচিব শাজাহান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বরকত উল্লাহ বুলু, এনপিপির একাংশের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ ইবরাহীম, জেলা বিএনপি নেতা জহিরুল হক খোকন, মাহাবুবুর রহমান শ্যামলসহ প্রমুখ।