প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব ‘হুমকির মুখে’ রয়েছেন সেসব বিষয়ে নিউ ইয়র্কের বৈঠকে তাকে জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর এই বৈঠক হবে। মোদী ভারত সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই তাদের প্রথম বৈঠক।
ভারতীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পশ্চিমা একটি গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর একটি অংশকে ব্যবহার করে হাসিনা সরকারকে উৎখাতের চেষ্টায় আছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।
দিল্লির কয়েকজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেছেন, পশ্চিমা ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে কিছু কর্মকর্তাকে এজন্য ‘তৈরি’ করছে এবং হাসিনাকে উৎখাতের পর একটি ‘জাতীয় ঐকমত্যের’ সরকার গঠনের পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে।
আর এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখছেন সেই পশ্চিমা দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যিনি কূটনীতিক পরিচয়ে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।
আর ‘ঐকমত্যের’ যে সরকারের পরিকল্পনা তারা করেছে, তাতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কয়েকজন নেতার পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির কয়েকজনকে জড়ো করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্য।
এ ধরনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করায় এরইমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তাকে অগুরুত্বপূর্ণ পদে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তথাকথিত সেই ‘ঐকমত্যের সরকার’ গঠনে যাতে কোনো সশস্ত্র বাধা না আসে সেজন্য র্যাব ও বিজিবিকে নিস্ক্রিয় রাখারও পরিকল্পনা তাদের রয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাওয়া এসব তথ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও অবহিত করা হয়েছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর দিল্লি সফরে তার সঙ্গে থাকা জ্যেষ্ঠ কয়েকজন বাংলাদেশি কর্মকর্তাকেও এসব গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, “শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে বলবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সারদা গ্রুপের (জঙ্গি অর্থায়ন) বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দেয়ার পাশাপাশি তিনি এটা স্পষ্ট করবেন যে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে ভারতে যারাই জড়িত থাক না কেন ভারত সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে।
“বাংলাদেশে সন্ত্রাসে অর্থ যোগানোর অভিযোগে সারদা গ্রুপের বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর (সিবিআই) যে তদন্ত চলছে তাতে বাংলাদেশের দিক থেকেও সহযোগিতা চাইবেন মোদী।”
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ২০১২-১৩ সালে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালা হয়, যার যোগান আসে ভারতের সারদা গ্রুপ থেকে। পশ্চিমা সেই গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই এটা করা হয় বলে ভারত সরকার মনে করে।
ভারতের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি প্রথমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাম সরকারকে সরাতে কাজ করে। এখন তারা হাসিনাকে সরাতে চায়। তারা বঙ্গোপসাগরে একটি ঘাঁটি করতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সরকারে থাকলে তা সম্ভব না। আর ভারতে বামরা সরকারকে প্রভাবিত করার মতো পর্যায়ে থাকলেও তা সম্ভব হবে না।”
এ ধরনের ‘ষড়যন্ত্র রুখে দিতে’ ভারত সব সময় প্রতিবেশীদের পাশে থাকবে বলেও হাসিনাকে ‘আশ্বস্ত করবেন’ মোদী।