DMCA.com Protection Status
title=""

নিয়ন্ত্রনহীন ছাত্রলীগের অপকর্মে ইবি অচল : অবশেষে বন্ধ ঘোষণা

193236_472398082794159_1073242861_oচাকরির দাবিতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) অচল করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাস চলাচল করতে পারেনি। ফলে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এদিকে প্রত্যাশিত চাকরি নিশ্চিত করতে সোমবার মধ্যরাতে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের কার্যালয়সহ প্রশাসন ভবনের প্রায় সবকটি দপ্তরের তালায় সুপার গ্লু লাগিয়ে দেয় ছাত্রলীগকর্মীরা।

 

একই দাবিতে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি বাস ভাংচুর করে ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে না পেরে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস। প্রশাসন ভবনে দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্যরা জানান, সোমবার মধ্যরাতে ১৫-২০ জন যুবক নিজেদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে প্রশাসন ভবনের গেট খুলতে বলেন। আনসার সদস্যরা গেটের তালা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগকর্মীরা তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে গেট খুলতে বাধ্য করেন।

 

download (70)এরপর তারা ভিসির কার্যালয়ে লাগানো তালায় সুপার গ্লু লাগিয়ে দেন, একই সঙ্গে নতুন একটি তালা মেরে দেন। পরে তারা প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমানের কার্যালয় ছাড়া প্রশাসন ভবনের সবকটি দপ্তরের তালায় সুপার গ্লু দিয়ে জয় বাংলা সস্নোগান দিতে দিতে প্রশাসন ভবন ত্যাগ করেন। এছাড়া গতকাল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো আটকে দেয়। ফলে শিক্ষার্থীদের বহন করা কোনো বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছাতে পারেনি। বাস আটকে দেয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে না পারায় ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।

 

ফলে কার্যত অচল থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পরে ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ পাহারায় কুষ্টিয়া থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৭টি বাস ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে। এরপর শিক্ষকদের আনার জন্য দুটি বাস পুলিশ পাহারায় ঝিনাইদহে পাঠানো হলে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী গাড়াগঞ্জ নামক স্থানে একটি বাসে ভাংচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সকালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পুলিশ পাহারায় বিভিন্ন দপ্তরের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। এ অবস্থায় পবিত্র ঈদুল আজহা ও শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে ইবি প্রশাসন।

 

বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি শুরু হচ্ছে। চলবে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এছাড়া আগামীকাল থেকে আবাসিক হলসমূহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি দেবাশিষ শর্মা জানান- বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৮ তারিখ থেকে ঈদুল আজহা ও শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হবে। কিন্তু ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে বৃহস্পতিবারেই আবাসিক হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ওইদিন দুপুর দেড়টার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় আবার আবাসিক হলসমূহ খুলে দেয়া হবে। ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম হোসেন খান বলেন- প্রশাসন ভবনের বিভিন্ন দপ্তরের তালায় সুপার গ্লু ও গাড়ি ভাংচুরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই। এটি চাকরি প্রার্থীদের কাজ হতে পারে। তবে চাকরি প্রার্থীরা কারা এই প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন- কারা গাড়ি অবরোধ ও ভাংচুর করে ক্যাম্পাস অচল করার চেষ্টা করছে তা সবাই জানে। ক্যাম্পাস অচল করে যদি কেউ চাকরি আদায় করার চেষ্টা করে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভিসির কার্যালয়ে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, গত বুধবার ইবি শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক আবজার গিফারী গাফ্ফারসহ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ (জাসদ) ও ছাত্রমৈত্রীর নেতারা ভিসির কাছে চাকরি দেয়ার জন্য একটি দীর্ঘ তালিকা দিয়ে এসেছেন। তালিকা অনুযায়ী চাকরি না দেয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস সচল হবে না বলেও তারা ভিসিকে হুশিয়ারি দিয়েছেন। এদিকে একের পর এক হল বন্ধের সিদ্ধান্তে চরম হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!