DMCA.com Protection Status
title=""

আওয়ামী লীগ দলটাই ‘হাটি হাটি খাই খাই পার্টি’ : দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া

খালেদা-জিয়া_35411সম্প্রতি ব্রাম্মনবাড়ীয়ার বিশাল জনসভায় দেয়া  বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ বক্তব্য  এখানে তুলে ধরা হলোঃ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকার লুট-দুর্নীতি, চুরি-চামারীতে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কয়েকদিন আগে টেলিভিশনে দেখলাম মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানা ও মন্দিরের নামে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা এদের দলের লোকজন লুঠপাট করে খেয়ে ফেলেছে। নামে-বেনামে বিভিন্ন ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে এরা টাকা আত্মসাৎ করছে। এরকম একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের এরা নাম দিয়েছে ‘হাটি হাটি খাই খাই’। আসলে এই দলটাই হলো ‘হাটি হাটি খাই খাই পার্টি’। এভাবে পুরো দেশটাকেই এরা খাই খাই করে খেয়ে ফেলছে’।

খুন, গুম, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং বিচারকদের অভিশংসনে ক্ষমতা বাতিলসহ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

বর্তমান সরকারকে দুর্নীতিবাজ সরকার আখ্যা দিয়ে তিন বারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতিবাজ সরকার। এরা দুর্নীতি করে দেশের মানুষের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। গত কয়েক বছরে সরকার দলের একেক জনের সম্পদ বেড়েছে কয়েশ’ গুণ।

শুধু শেয়ার বাজার থেকেই এরা এক লক্ষ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। ডেসটিনি থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকা, হলমার্ক গ্রুপ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ গ্রুপ থেকে ১২শ’ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক থেকে ৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, রুপালী ব্যাংক থেকে ১২শ’ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ৬শ’ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক লিমিটেড থেকে ৬০০ কোটি টাকা তারা লুট করেছে।

 

এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুঠ করা হলেও আগে তাদের অর্থমন্ত্রী বলতেন এগুলো সামান্য টাকা। কিন্তু, কিছুদিন আগে তিনি আবার বললেন যে এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে তিনি ব্যর্থ। অনেক দেরীতে হলেও ব্যর্থতা স্বীকারের জন্য তাকে ধন্যবাদ। তবে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রীই শুধু ব্যর্থ নন এ সরকারের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সকলেই ব্যর্থ।

এছাড়াও বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান অবৈধ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের সমালোচনা করে দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ খাতের উপড় তিনি একটিই সমীক্ষা তুলে ধরে বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে ভর্তুকির নামে ১৭ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে সরকারের লোকজন। সরকার বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নাকি এখন ১০ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট।

 

কিন্তু বর্তমান বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট। এমতাবস্থায় চলছে সীমাহীন লোডশেডিং। জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। এছাড়া দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে আপনাদের আশুগঞ্জ সার কারখানা ৬ মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। দেশজুড়ে বিদ্যুতের সীমাহীন ঘটিতর কারনে অসংখ্য শিল্পকারখানায় আজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। 

বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বর্তমান সংসদ একটি অবৈধ সংসদ। বর্তমান সরকার একটি অবৈধ সরকার। গত ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনে কোন ভোট হয়নি। মানুষ ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের পরিবর্তে কুকুর ছিল। 

বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে খুব খারাপ। অহরহ খুন-খারাবি হচ্ছে। দেশে এখন কারো নিরাপত্তা নাই। র‍্যাব এখন টাকা নিয়ে মানুষ খুন করছে। নারায়ণগঞ্জের এগার জন হত্যার বিষয়ে আপনারা সবাই জানেন। কি নির্মম ভাবে ওই ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও গুম করে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করা হচ্ছে। 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। দেশের মানুষ আজ ন্যায় বিচার পায়না। উচ্চ আদালতের বিচারকদের ভয় দেখাতে তাদের অপসারনের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে আমাকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমাকে গ্রেফতার করার আগে নিজেদের পথ পরিষ্কার করে রাখুন। পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে রাখুন। যাতে চটপট চলে যেতে পারেন। কারণ জনগণ আপনাদের রাস্তা বন্ধ করে দেবে। আমি এবং বিরোধীমতের কেউ ন্যায় বিচার পায়না। আমার এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার পায়তারা করা হচ্ছে।

 

অন্যদিকে তাদের দলের নেতাকর্মীদের নামে দেয়া সব মামলা কারসাজি করে খারিজ করে দেয়া হচ্ছে। তারা বহু অপরাধ করেছে। অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের মত স্পর্শকাতর ঘটনার এখনও সঠিক বিচার হয়নি। হেফাজতের আলেমদের রক্তে তারা তাদের হাত রঞ্জিত করেছে। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা বাঁধিয়ে হিন্দুদের সম্পদ লুঠ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতীয় বৌদ্ধদের মন্দির ধ্বংস করেছে। 

দেশের প্রচার মাধ্যমের উপড় সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার তাদের কুকীর্তি ঢাকতে একের পর এক সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বেআইনীভাবে বন্ধ করেছে। সাগর-রুনিসহ অনেক সাংবাদিক হত্যার কোন বিচার হয়নি। মাহমুদুর রহমানের মত অনেক সাংবাদিক আজ জেলে।

 

দৈনিক ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে আটক করে রেখেছে এ সরকার। দেশের প্রচার মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে সম্প্রচার নীতিমালার নামে টিভি চ্যানেলগুলোকে আরো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। এক সময় তারা বিটিভির স্বায়ত্ত্বশাসন দাবি করতো কিন্তু আজ তারা বিটিভিকে পুরোপুরি বিবি-গোলামের বাক্সে পরিণত করা হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের ইতিহাস টেনে এবং তাদের নোংরা রাজনৈতিক কূটকৌশলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের খেলার শেষ নাই। এক সময় জামায়াত তাদের বন্ধু ছিলো। আমাদের সাথে জোট করায় জামায়াত তাদের শত্রু হল। জামায়াতের বিরুদ্ধে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ বানানো হল। পুলিশের পাহারায় তাদের বিরিয়ানি খাওয়ানো হল। এখন প্রয়োজন শেষ। তাই সেই মঞ্চকে তারাই আবার খন্ড-বিখন্ড করেছে। হাস্যকর ভাবে এখন তারাই বলছে, ওরা ষড়যন্ত্রকারী। এই মঞ্চের আর কোন প্রয়োজন নেই। 

বর্তমান সরকারের দুর্নীতির আরও কিছু চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার বিদেশীদের ক্রেস্ট দিয়ে সেখান থেকেও তারা সোনাও চুরি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিচ্ছে। সচিবরা পর্যন্ত এখন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটধারী। এরকম এক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীকে নিয়ে জাতিসংঘে গেলেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। ২শ’ লোকের বহর নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়ার খরচ কে দিবে? অবৈধ সরকার বিদেশে গিয়ে কোথাও সম্মান পায়না। তারপর দেশে এসে এরা মিথ্যা কথা বলে। বিদেশীরাও সেগুলোর প্রতিবাদ করেছেন। তবুও এ সরকারের লজ্জ্বা হয়না।

তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার জনগণকে ভয় পায়। এরা জনগণের বিরুদ্ধে নানা আইন করছে। এরা মানুষকে অস্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশে উন্নয়ন নাই, বিনিয়োগ নাই, মানুষ শান্তিতে ব্যবসা করতে পারে না। তার উপড় সর্বত্র চাঁদাবাজি আর দখলদারি। সরকারের হস্তক্ষেপে প্রশাসন ভেঙ্গে পড়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ সরকারের লোকেরা নিজেরা নিজেরা খুনা-খুনি করছে। সাধারণ মানুষকেও হত্যা করছে। বিশ্বজিৎকে দিবালোকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। 

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের নিজের পায়ের নিচে মাটি নাই। তারা এখন গোয়েন্দা দিয়ে বিএনপি এবং জোট ভাঙার চেষ্টা করে। এতে কোনো লাভ হবে না। বিএনপি জনগণের দল। এ দল লক্ষ লক্ষ কর্মীর দল। স্বৈরাচারী এরশাদ বিএনপি ভেঙ্গে দিতে পারেনি। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনরাও পারেনি। এরাও পারবে না। 

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের নিজেদের দল ও জোট কয়দিন ঠিক রাখতে পারেন তা নিয়ে ভাবুন। কয়েকদিন আগে শুনলাম আওয়ামী লীগের সকলকেই নাকি কেনা যায় একজনকে ছাড়া। সেই একজনতো অনেক আগেই ১৯৮৬ সালে এরশাদের কাছে বিক্রি হয়েছিলো টাকার বিনিময়ে। এছাড়াও আরও অনেকবার বিক্রি হওয়ার খবর দেশের মানুষ জানে।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের সবকিছু আজ ভেঙ্গে পড়েছে। আইন, বিচার, প্রশাসন বলে কিছু নেই। মাদকে প্রতিনিয়ত তরুণ সমাজকে বিপথগামী করছে। বিভিন্ন পরীক্ষায় পাশের হার বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। দিন দিন শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে।

 

ইতিহাস বিকৃত করে শিশু-কিশোরদের মিথ্যা শেখানো হচ্ছে। কিন্তু, আপনারা দেখেছেন তাদের দলের লোকরাই সত্য ইতিহাস প্রকাশ করছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও সত্য প্রকাশের কারনে তাদেরকে রাজাকার বলা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি আজ মারাক্তকভাবে বিপর্যস্ত। যুবকদের আজ কর্মসংস্থান নাই। চাকরি না পেয়ে এসব যুবকরা আজ হতাশা।

 

এভাবে দেশ চলতে পারে না। এভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। আপনারা সবাই প্রস্তুতি নিন। আমাদের আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশকে সঠিকপথে আনার জন্য। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। এ অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোন অধিকার নাই। অচিরেই তাদেরকে পদত্যাগ করতে হবে। অবাদ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার কায়েম করতে হবে। 

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলীমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান, মো. সালাউদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মেজর জেনারেল (অব) ফজলে ইলাহি আকবর, সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানু সহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!