শাশুড়ির মরদেহ দেখতে গেলেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন ও স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
দাম্পত্য জীবনের নানান চড়াই-উৎড়াই নিয়ে এই দুই ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রবল বিরোধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ছেলেমেয়ে নিয়ে আলাদা বসবাস করছেন।
তবে শনিবার তারা শাশুড়িকে শেষ বারের মতো দেখতে যান দেবর আহসান হাবিবের বাসায়। শাশুড়ির মৃত্যুতে দুইজনই ছিলেন খানিকটা বাকরুদ্ধ। তাদের চোখ জলে ছলছল করছিল।
তবে তারা একে অপরকে দেখলেও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেননি।
শাশুড়ি সম্পর্কে গুলতেকিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনি পরিবারের মাথা ছিলেন। তার সিদ্ধান্তে সব কিছু হতো। ছেলেরা তার কথা শুনতো। তিনি মায়া-মমতা দিয়ে পরিবারটাকে আগলে রেখেছেন। হুমায়ূন মারা যাওয়ার পরে যে শোকটা তিনি পেয়েছিলেন সেটাই তাকে নিস্তেজ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বার্ধক্য তাকে দুর্বল করেছিল।’
গুলতেকিন আরো বলেন, ‘উনাকে হারিয়ে পুরো পরিবারটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।’
অপরদিকে শাওন বলেন, ‘আমার ২ ছেলের শেষ আশ্রয় ছিল তাদের দাদী। আজ শেষ আশ্রয়টুকুও তারা হারিয়ে ফেললো।’
এদিকে স্বামীর মৃত্যুতেও একসঙ্গে কোথায়ও দেখা যায়নি গুলতেকিন ও শাওনকে। স্বামীর পাশ থেকে শাওন দূরে গেলে হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে যান গুলতেকিন।
শনিবার সকালে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন রত্নাগর্ভা আয়েশা ফয়েজ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
গত ১১ সেপ্টেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ল্যাবএইড সূত্র জানায়, আয়েশা ফয়েজের কিডনিতে ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল। তাকে বেশ কিছুদিন আগে ডায়ালাইসিস করা হয়েছিল।
রত্নগর্ভা এই মায়ের তিন সন্তান হলেন- কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. জাফর ইকবাল ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব।
আয়েশা ফয়েজের মৃত্যুর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তার মরদেহ পল্লবীতে তার ছোট ছেলে আহসান হাবিবের বাসায় নেয়া হয়। সেখানেই বাদ জোহর তার নামাজে জানজা হয়।
আহসান হাবিব দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ আমার নানা বাড়িতে যেখানে বড়ভাই হুমায়ূনের জন্ম হয়েছে সেখানে মায়ের দাফন করা হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ২৩ মার্চ বারহাট্টার কৈলাটি গ্রামে জন্ম নেন আয়েশা ফয়েজ। বাবা শেখ আবুল হোসেন এবং মা খায়রুন নেসা।
১৯৪৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফয়জুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান।