বিশ্বদখলের প্রতিযোগিতায় বাজিমাত করা চীনের রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাঁপিয়ে দিচ্ছেন মাত্র ১৭ বছর বয়সী তরুণ জশুয়া ওয়ং। কিশোর বয়সেই হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী হংকংয়ের লাখো মানুষের নেতৃত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। তার নেতৃত্বে ভরসা রেখে যোগ দিয়েছেন তাইওয়ানের গণতন্ত্রকামীরাও।
‘এক চীন, দুই নীতির’ কারণে হংকংয়ের মানুষ নিজেদের প্রশাসক নির্বাচনে কোন রকমের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। সাবেক এই বৃটিশ উপনিবেশের প্রশাসক নিয়োগ করে দেয় চীনের সরকার। বছরের পর বছর ধরে এই নীতি চলে আসলেও ঘরে দাড়িয়েছেন জশুয়া ওয়ং।
ভোটের মাধ্যমে নিজেদের প্রশাসক নিজেরাই নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তিনি। শুরুতে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল হংকংয়ের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হাতেগুনা কয়েকজন। কিন্তু বিদ্রোহের আগুন কি আর নিয়ন্ত্রণে থাকে কখনও? ক্রমে ক্রমে বড় হতে থাকে বিদ্রোহীদের মিছিল। আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হংকংয়ের সীমা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে তাইওয়ানেও। সপ্তাহ ব্যাপী আন্দোলনের পর হংকংয়ের পুলিশ গ্রেফতার করে জশুয়া ওয়ংকে।
জশুয়া ওয়ংকে গ্রেফতারের পরই দ্রুত বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে নানান ফোরামে চীনের সরকারের বিরুদ্ধে জনমত শক্তিশালী হতে থাকে। হংকংয়ের অনেক নাগরিকই এই আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু নিজেদের তরুণ নেতা জশুয়া ওয়ংকে গ্রেফতার হতে দেখার পর তারাও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে। ফলে বাড়তে থাকে চীন সরকারের বিরুদ্ধে হংকংয়ের নাগরিকদের বিক্ষোভ। সর্বেশেষ মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে হংকং।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে পরোক্ষ সমর্থন জানাতে শুরু করেছে হংকংয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি-নির্ধারকরা। এরই মধ্যে তারা ঘোষণা দিয়েছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ নেবে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা জশুয়া ওয়ং বর্তমানে ওপেন ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ে পড়াশুনা করছেন। মাত্র পনের বছর বয়সে তিনি স্কলারিজম নামের একটি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন। ওই আন্দোলনে তিনি হংকংয়ের শিক্ষানীতিতে চীনের প্রভাব বাড়ানর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তার ওই আন্দোলনে কমপক্ষে ৯০,০০০ হাজার হংকংয়ের অধিবাসী যোগ দিয়েছিল।
চীনের এক পার্টি নীতির পক্ষে স্তুতি গেয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল চীন সরকার। ওই পুস্তিকার নাম দেওয়া হয় ‘চীনা মডেল’। চীন সরকার চাইছিল, ওই পুস্তিকাটি হংকংয়ের স্কুলগুলোতে পড়ান হউক। কিন্তু জশুয়া ওয়ং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ওই পুস্তিকাটি স্কুলের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় চীন সরকার।
জশুয়া ওয়ংয়ের জনপ্রিয়তার ফলে ১৭ বছর বয়সী এই তরুণের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছে চীনের মিডিয়া। তার বিরুদ্ধে নানান ‘অপপ্রচার’ও শুরু করেছে চীনের মিডিয়া। চীনের মিডিয়া প্রচাআর করছে জশুয়া ওয়ং আসলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ইন্ধনে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
জশুয়া ইয়ংয়ের সাথে মার্কিন ব্যবসায়ীদের গোপন সম্পর্ক নিয়ে কথিত একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে একটি চীনা পত্রিকা। ওই রিপোর্ট অনুসারে, একটি মার্কিন কোম্পানির সাথে গোপনে দেখা করেছেন জশুয়া ইয়ং। এছাড়া, হংকংয়ের ইউএস কনস্যুলেট অফিসেও জশুয়া ইয়ং ঘন ঘন মিটিং করতেন বলে প্রচার করছে চীনের মিডিয়া।