আবদুল লতিফ সিদ্দিকী- বর্ষিয়ান রাজনীতিক, দাপুটে মন্ত্রী। তিনি যতটা না আলোচিত তার চেয়ে বেশি বিতর্কিত। বিভিন্ন সময়ে তিনি এমন সব মন্তব্য করেছেন, এমন সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন, যা শুধু শিষ্টাচারের মাত্রাই অতিক্রম করেনি, ঔদ্ধত্যের সীমাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
হরতালকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের মাথা ফাটিয়েছেন, মন্ত্রী থাকাকালেই।
উচ্চ আদালতকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, আদালতের নিধেষাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি জমির টেলিকমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা সম্পর্কে বলেছেন- উনি কে?
বিএনপি জামায়াত-সম্পর্কে তিনি প্রায়শই যেসব মন্তব্য করেন তাতে ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বালাই থাকে না।
এভাবে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কাজ ও মন্তব্য করে পার পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এই সদস্য। বরং তার উন্নতি হচ্ছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলেও এবার তিনি ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগের মত লোভনীয় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পান।
অবস্থাটা এমন যে তিনি ভাবতে শুরু করেছিলেন যে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার সবচেয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা তিনি বলেছেন পবিত্র ইসলাম সম্পর্কে। ইসলামের পাচটি স্তম্ভের অন্যতম হজ ও মহানবী সা. সম্পর্কে নিউইয়র্কে তিনি যেসব কথা বলেছেন, তা বাংলাদেশের মত ৯০ শতাংশের বেশি মুসলমান অধ্যুষিত দেশে তো দূরের কথা, ইসরাইল কিংবা আমেরিকার মত দেশেও কেউ বলার দুঃসাহস দেখায় না।
এছাড়া তাবলীগ জামায়াত ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়েও স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি।
তবে এবার আর রক্ষা পেলেন না। এবার তাকে বিদায় নিতে হল মন্ত্রিসভা থেকে। প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞজনোচিত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে মন্ত্রিসভা বাদ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে ‘সেকুলার’ দর্শনে বিশ্বাসী হলেও দলটির নেতাদের ইসলামের প্রতি দুর্বলতা অন্যান্য মুসলমানের মতই। ফলে দলটির ভেতরেও প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যাপক।
তবে লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা হওয়ায় তার জুনিয়র নেতাদের কেউই প্রথমে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছিলেন না। তবে সকলের মধ্যেই তার মন্তব্যের বিষয়ে অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। অস্বস্তিতে ছিলেন সিনিয়র নেতারাও।
মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডির দলের সভাপতির কার্যালয়ে এক সভায় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী ও সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ‘মুখফোঁড়’ টাইপের। এজন্য হজ, তাবলীগ জামাত ও জয়কে নিয়ে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করে ফেলেছেন।আমরা তার কথা গ্রহণ করি না।আশা করছি আপনারাও গ্রহণ করবেন না। কে কি বলল তাতে কান দিবেন না’।
এর আগে একই দিন প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে কথা বলার সময় লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে আগে তার কর্মকাণ্ডে দলের বাইরে যতটা না সমালোচনা হয়েছে এবার নিজ দলেই তার চেয়ে বেশি সমালোচনা কুড়ান তিনি। ফলে মন্ত্রিসভা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে নেতারা সকলেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মহাজোট সরকারের মন্ত্রী থাকাকালে বিভিন্ন সময় তিনি নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটনা। এসব কর্মকান্ডে দেশের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাও হয়। আর এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে এ সকল স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য করে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন।
গত মার্চে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর বিদ্যুতের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (বিউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী পুনয় চন্দ্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছিলেন তিনি। মন্ত্রীর সামনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার অপরাধে এই উপসহকারী প্রকৌশলীকে প্রথমে গালমন্দ ও পরে সামনে থাকা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে আহত করেন তিনি।
কর্তব্যে অবহেলা করে ঠিক মতো কাজের দেখাশুনা করছে না অভিযোগ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল শহরের ফোয়ারার পানিতে শ্যাওলা জমে থাকায় প্রকৌশলীকে পানিতে নামিয়ে তা পরিষ্কার করান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে।
এর আগে এক চিকিৎসককে নাজেহাল করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিন সম্পূর্ন আইনবহির্ভূতভাবে মতিঝিলে সাড়ে সাত কাঠা সরকারী জমি ,যার বাজার মূল্য ছিলো ১০০কোটি টাকারও বেশী,তা মাত্র ১ কোটি টাকায় ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতিকে হস্তান্তর করেন এং সরকারী নথিতে লিখেছিলেন,'তিনি চট্টগ্রামের পানি গ্রহন করায় এটা তিনি করলেন।
এছাড়া ফেনীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দোস্ত টেক্সটাইল মিলসের ১,২০০ কোটি টাকার জমি মাত্র পৌনে ৩ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি। পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অতি উৎসাহে রাতারাতি এ জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে বিটিএমসি। আদালতে জমি নিয়ে মামলা চলাকালে আইনজীবীকে রহস্যজনক ভূমিকা পালনে বাধ্য করিয়ে বিটিএমসির বিপক্ষে রায়ের সুযোগ সৃষ্টি করেন। পরে এ নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল পর্যন্ত করেননি তিনি।