DMCA.com Protection Status
title="৭

ঢাকা সিটি করপোরেশন(দক্ষিন)এর দুর্নীতির বরপুত্র প্রকৌশলী নুরুল আমিন

1412140084অবাক হলেও সত্য। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আমিন সংস্থার নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়েও গত ২৬ বছর ধরে অবৈধভাবে কর্মরত রয়েছেন। শীর্ষ কর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে একের পর এক দখল করছেন গুরুত্বপূর্ণ সব পদ। অনিয়ম-দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। ঢাকা শহরে রয়েছে তার একাধিক ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি। আর অনৈতিক পথে প্রতিনিয়ত ওড়াচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। মদ্যপান, বিভিন্ন হোটেলে রাত্রিযাপন তার নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তার এসব অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে।

 

ধানমণ্ডি ৪ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর সুবাস্তু ভবনের চতুর্থতলার এ-৩ ফ্ল্যাটটি প্রকৌশলী নুরুল আমিনের। ধানমণ্ডি লেক সংলগ্ন এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের দাম অন্তত ৪ কোটি টাকা। সুবাস্তু ভবন ও আশপাশের বাসিন্দারা জানান, প্রায়ই মধ্যরাতে নুরুল আমিন মাতাল হয়ে বাসায় ফেরেন। তার ব্যবহার ও মাতলামিতে ওই ভবন এবং আশপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। 



দুদক সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল আমিনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছে দুদক। কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে চলছে অনুসন্ধান কাজ। প্রথমত, অবৈধভাবে সিটি করপোরেশনের পদ দখল। অবৈধ সম্পদের পরিমাণ এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ-বাণিজ্য।



দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে দুদক তদন্ত কাজ শেষ করবে। তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, তার বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণপত্র তাদের হাতে পৌঁছেছে। সেই হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন। দুদকের এই তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপপরিচালক মো. মোনায়েম।

    

অনুুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালের ৪ এপ্রিল প্রকৌশলী নুরুল আমিন পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ৬ মাসের জন্য নিয়োগ পান। নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী ১৯৮৭ সালের ৪ অক্টোবর তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বিভিন্ন চাপ ও কৌশল প্রয়োগ করে অবৈধভাবে সিটি করপোরেশনে থেকে যান। বর্তমানে তিনি ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। একই সঙ্গে সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও আমব্রেলা প্রকল্পের পরিচালক।

 

সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পের পদাধিকারী কোনো অবস্থাতেই রাজস্ব পদে বদলি বা পদোন্নতি পেতে পারেন না। উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে প্রকল্পের চাকরিরতরা চাকরি হতে অব্যাহতি পেয়ে যান। তাছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের নিয়োগ পদ্ধতি রাজস্ব পদে নিয়োগ পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। উন্নয়ন প্রকল্পের লোকবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন ক্ষমতাপ্রাপ্তও নয়।

 

আইনকানুন ও বিধি লঙ্ঘন করে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে রাখার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন বলে প্রচার করে বেড়ান। অন্যদিকে বিএনপির শাসনামলে তিনি ছিলেন হাওয়া ভবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি সর্বদা অল রাউন্ডারের ভূমিকায় থেকেছেন। সব সরকারের সময়ই তিনি সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী কর্মকর্তা বলে সবার কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। 



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক প্রকৌশলী  বলেন, নুরুল আমিন অবৈধভাবে সিটি করপোরেশনের পদ দখল করে শুরু থেকেই ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঘুষ খেয়েছেন। আর এসব টাকা শীর্ষ কর্মকর্তাদের পেছনে খরচ করেছেন। তার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এলেও প্রভাবশালীদের চাপে তা চাপা পড়ে যায়। 



এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসসিসির সচিব খান মো. রেজাউল করিম  বলেন, প্রকৌশলী নুরুল আমিনের ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শুনছি তিনি অবৈধভাবে চাকরি করছেন। অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো তদন্ত হয়নি। আমি যোগদানের পর প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে কখনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তদন্ত ছাড়া এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব না। 



জানতে চাইলে প্রকৌশলী নুরুল আমিন  বলেন, বিধি মোতাবেক আমি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছি। গত ২৬ বছর ধরে কেউ অবৈধভাবে চাকরি করতে পারে না। আর এক বছর চাকরি আছে। এখন বিষয় নিয়ে লেখালেখি না করতে অনুরোধ জানান নুরুল আমিন। ঘুষ-বাণিজ্য এবং অসত্ জীবনযাপনের ব্যাপারের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। 



জানা গেছে, প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আমিন আর এক বছর পর অবসরকালীন ছুটিতে যাবেন। শেষ সময়ে তিনি পকেট ভর্তিতে মেতে উঠেছেন। টাকা ছাড়া কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করছেন না তিনি। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ডিএসসিসির ঠিকাদাররা। 



বিভক্তির পর ডিএসসিসি আর্থিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে সিটি করপোরেশনে ব্যবসা করে আসা ঠিকাদাররা বাকিতে অনেক কাজ করছেন ডিএসসিসিতে। মাসের পর মাস তারা বিল পাচ্ছে না। পেলেও সামান্য কিছু পাচ্ছেন। মোটা অঙ্ক বাকিই থাকছে। আর এখন নতুন করে আবার নুরুল আমিনের ‘কমিশন’ যন্ত্রণায় অনেক ঠিকাদার সিটি করপোরেশনের কাজ ছেড়ে দিতে শুরু করেছেন। 



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, নুরুল আমিন যতদিন সিটি করপোরেশনে আছেন ততদিন আর এই সিটি করপোরেশনে ব্যবসা করব না। কেননা কাজ করে বিল তুলতে মাসের পর মাস ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হচ্ছে প্রকৌশলীদের। তাহলে কীভাবে ব্যবসা করব সিটি করপোরেশনে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!