চরম অনভিপ্রেত বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এখন পাশ্চাত্যের সুবিধাজনক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন বলে জানা গেছে। মেক্সিকোর হোটেলে দুই রাত কাটিয়ে আমেরিকার ডালাস হয়ে ফের বুধবার নিউইয়র্কে এসে সস্ত্রীক দিনাতিপাত করছেন তিনি।তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রা্থনা করতে পারেন বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে।
২ অক্টোবর নিউইয়র্ক-ঢাকা তার এয়ারটিকিট রি-কনফার্ম থাকলেও আপাতত দেশে না ফেরারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত চার দিন মেক্সিকো এবং নিউইয়র্কে যারা লতিফ সিদ্দিকীকে সঙ্গ দিয়েছেন বা কাছাকাছি ছিলেন তারা এই প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির অনুষ্ঠানে বোমা ফাটিয়ে পরদিনই অর্থাত্ সোমবার উড়াল দেন প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোতে।
প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সিদ্ধান্তের কথা তাকে জানানো হলেও বিন্দুমাত্র ‘নার্ভাসনেস’ পরিলক্ষিত হয়নি সাবেক এই নেতার মাঝে। বুধবার মেক্সিকো সিটি থেকে সস্ত্রীক ডালাস রওনা হয়ে যান লতিফ সিদ্দিকী। সেখান থেকে ফিরে আসেন আবার নিউইয়র্কে।
২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ‘জেএফকে’ থেকে ঢাকার ফ্লাইট ধরার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কেই ক’দিন থাকার সিদ্ধান্ত নেন লতিফ সিদ্দিকী। পরিবারের তরফ থেকে তাকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে কোনো গ্রিন সিগন্যাল তো নেই-ই বরং এমনও বলা হয়েছে, খোদ কারাগারের অভ্যন্তরেও তার নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হবে কারারক্ষীদের।
মেক্সিকো ও নিউইয়র্কের সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে আরো জানান, গত কয়েক দিনে লতিফ সিদ্দিকীর কথাবার্তা চালচলন কথোপকথন সর্বোপরি তার মানসিক স্থিতিশীলতা ও ‘বডিল্যাংগুয়েজ’ বলছে, তিনি সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে জেনেশুনে এবং আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েই রবিবার টাঙ্গাইল সমিতির মিটিংয়ে স্বভাবসুলভ বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সম্প্রতি লতিফ সিদ্দিকীর কয়েকশ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিশাল খতিয়ান। বিগত মহাজোট সরকারের সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন ‘ম্যারাথন করাপশন’ ও ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েন অধুনাপতিত এই মন্ত্রী।
সরকারি সম্পত্তি পানির দামে বিক্রি করে দেবার পাশাপাশি কামিয়ে নেন কয়েকশ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই তদন্ত টিমের প্রতিবেদন ইতিমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে, যাতে সন্নিবেশিত হয় লতিফ সিদ্দিকীর দুর্নীতির প্রায় অর্ধশত প্রমাণ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রস্তুতিও যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, ঠিক তখনই সস্ত্রীক দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন লতিফ সিদ্দিকী।