দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃদেশে বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠ গোছানোর চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদৌ কবে অনুষ্টিত হবে,সে নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকা কী হবে সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচল থাকলেও বিএনপির কিছু কিছু নেতা এখনই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন বাগানোর প্রতিযোগিতায় লন্ডন প্রবাসী দেশ নায়ক তারেক রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রচারনা শুরুতে।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাত করতে দেশ থেকে নিয়মিত বিরতিতেই লন্ডনে আসছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং তারেক রহমানের কিছু ঘনিষ্টজন দাবিদার। অভিযোগ রয়েছে, এসব জৈষ্ঠ্য নেতাদের আসা যাবার পথ খরচ আর ঘনিষ্টতার সুবাদে আর বিনিময়ে অনেকেই দেশ থেকে আসার সময় নিজেদের ঘনিষ্ট দলের অনেক তৃতীয় সারির নেতাকর্মীদের নিয়ে আসছেন লন্ডনে। উদ্দেশ্য,নিজে তারেক রহমানের সাথে দেখা করার পাশাপাশি সাথে আনা অনুসারীকেও তারেক রহমানের দর্শন পাইয়ে দেয়া।
কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির এক আলোচিত নেতা ও সাবেক এমপি তারেক রহমানের সাক্ষাত পাবার আসায় লন্ডনে আসেন। দফায় দফায় তারেক রহমানের সাক্ষাত পাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। অবশেষে হাজির হন কিংষ্টনের যে মসজিদে তারেক রহমান জুম্মার নামাজ আদায় করেন সেখানে। সেখানে তিনি তারেক রহমানের মনোযোগ কাড়তে চেষ্টা করলেও তারেক রহমান কেবল সালাম বিনিময় করেই বিদায় নেন।
যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের সাথে সম্পর্কিত সুত্রগুলো নিশ্চিত করেছে,যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি,সম্পাদক,বিএনপির আর্ন্তজাতিক সম্পাদক মহিদুর রহমান এবং আরো এক দুজন নেতার মাধ্যমে লন্ডনে আসা বিএনপির নেতারা তারেক রহমানের সাক্ষাত পান। তারেক রহমান সাক্ষাতকারের আগেই সংশিস্নষ্ট সাক্ষাতপ্রার্থীর আমলনামা সম্পর্কেও খোঁজ-খবর নেন। পরে নির্ধারিত সময়ে লন্ডনে তারেক রহমানের কিংষ্টনের বাড়ির লাগোয়া হোটেল কিংষ্টন লজের লবিতেই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সাক্ষাত পান নেতারা।
অতি সম্প্রতি তারেক রহমানের দর্শন পেতে দ্বিতীয় দফায় লন্ডনে আসেন জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক,বহুল আলোচিত নাসির উদ্দীন মিঠু। ১৯৮৬ সালে কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন তিনি। এবার প্রথম দফায় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে যোগ দেবার চেষ্টা করেন আওয়ামীলীগে।
এ লক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নিজের ছবি দিয়ে প্রচারণাও চালান। শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে গত উপজেলা নির্বাচনের সময় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জুড়ী থেকে নির্বাচন করেন। জুড়ী থেকে নির্বাচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির প্রবীন নেতা আসাদ উদ্দীন বটলকে পাশ কাটিয়ে দলের একক প্রার্থী মনোনীত হন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদকের চিঠির বদান্যতায়। দলের একক প্রার্থীতা পেয়েও ৬ ইউনিয়নের পাঁচটিতেই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন মিঠু।
বছর দুয়েক আগে লন্ডনে এসে তারেক রহমানের সাক্ষাত পাবার চেষ্টা করলেও সে চেষ্টায় ব্যার্থ হন তিনি। তখন তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, এখন দেশে আন্দোলনের সময়। এখন তারেক রহমান সাক্ষাত দেবেন না।
আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় হবার নির্দেশ দেয়া হয় তখন। এরপর গত মাসে লন্ডনে আসেন তিনি। স্থানীয় বিএনপি এবং লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে সম্পর্কিত সূত্রগুলো জানায়, লন্ডনে এসে নাসির উদ্দীন মিঠু নামে কেউ তারেক রহমানের সাথে দেখা করেছেন, এমন তথ্য তাদের জানা নেই।
অথচ এই মিঠু দেশে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন,তারেক রহমান তাকে বলেছেন, মৌলভীবাজার ১ আসনে আগামী নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত। আগামীতে ঠাই পাচ্ছেন কেন্দ্রে। কেবল একা মিঠুই নন,ছাত্রদলের এবারের কমিটি গঠনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এক নেতাও লন্ডনে এসে দেশে ফিরে ঘোষণা দেন এবার তিনিই হচ্ছেন ছাত্রদল সভাপতি। আশীর্বাদ মিলেছে হাইকমান্ডেরও। কিন্তু এখানকার নেতারা জানান, তিনিও তারেক রহমানের সাক্ষাত পাননি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান,তারেক রহমান কাউকে বলেছেন,যে মনোনয়ন নিশ্চিত,বা পদ দেবার আশ্বাস দিয়েছেন,দেশে ফিরে কোন ব্যক্তি এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।