DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

মেধা পাচার: অভিবাসীদের অবদানেই নোবেল পুরষ্কারে একাধিপত্য যুক্তরাষ্ট্রের

download (75)ঠিক কত পরিবার প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হচ্ছেন তার কোন হিসাব নাই। কিন্তু কে জানে, এই পরিবারগুলোর সন্তানেরাই হয় এক-দুই প্রজন্ম পর যুক্তরাষ্ট্রকে এনে দিবে নোবেল পুরষ্কার। একেবারেই আকাশ-কুসুম কল্পনা নয় এই ভাবনাটি। অন্ততঃ ইতিহাস আর পরিসংখ্যান এমন একটি ভবিষ্যৎয়েরই ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নোবেল জয়ের ক্ষেত্রে একাধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের এই আধিপত্যের অর্জনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন দেশটি অভিবাসী বিজ্ঞানীরা। এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মোট ২৫৫টি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে। নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কাছাকাছি দেশটি হলো যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মোট নোবেল পুরষ্কারের পরিমাণ প্রায় একশতটি। যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে কতজন অভিবাসী তার কোন নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নাই। কিন্তু নতুনদিনের তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নোবেল বিজেতা অভিবাসী নাগরিক। অধিকাংশক্ষেত্রেই এক প্রজন্মের অভিবাসী পরিবার থেকেই সৃষ্টি হয়েছেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী।

nobel_graphic_large.0-265x300উদাহরণস্বরূপ ২০০৩ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার জেতা মার্কিন বিজ্ঞানী পল লউটারবুরের উত্তরসূরীরা প্রকৃত পক্ষে লুক্সেমবুর্গ থেকে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তিনি এমআরআই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯৩৯ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানী আর্নেস্ট লরেন্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও, তার পিতা-মাতা নরওয়ে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন। তিনি সাইক্লোট্রোন প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড মরিস লি। তিনি পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি পরিস্থিতিতে হিলিয়াম গ্যাসের আচরণ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তার পিতামাতাও যুক্তরাজ্য ও লিথুনিয়া থেকে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ১৯৫৭ সালে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া সাং দাও লির পিতামাতাও চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে সুপারকনডাক্টর ও সুপারফ্লুইড নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পেয়েছিলেন পদার্থবিদ এনথনি লেগেট। তার পিতামাতাও যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন।

১৯৭৬ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পান অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রিডম্যান। তার পিতামাতাও হাঙ্গেরী থেকে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তিনি ভোগ সংশ্লিষ্ট আচরণ ব্যাখ্যা, মুদ্রানীতির ইতিহাস বিশ্লেষণের পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য খ্যাতিমান। ১৯৯০ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান জিরোমি আইজ্যাক ফ্রিডম্যান। তার পিতামাতাও রাশিয়া থেকে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে-পরে যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ অভিবাসী হয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়। ফলে, বিশ্বের নানান দেশ থেকে যে পরিবারগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু একই সময় হতে রাশিয়ার নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই বিশ্বঅর্থনীতি ও রাজনীতির নেতৃত্ব নিতে থাকে। এবং এই নেতৃত্ব নেওয়ার সাথে তাল রেখে বাড়তে থাকে দেশটির নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার হার।

পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এই আধিপত্য শুরু হয়েছে ১৯৪০ সালের ঠিক পরপর থেকেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদদের নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে সত্তরের দশক থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে আধিপত্য ছিল যুক্তরাজ্য ও জার্মানির বিজ্ঞানীদের।

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে মেধাবী মানুষদের নিয়ে নিজেদের অর্থনীতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অর্জন বাড়ানর নীতি এখনও অটুট আছে যুক্তরাষ্ট্রের। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিশেষ দক্ষ জনবল সংগ্রহে দেশটির অভিবাস নীতি আরও সহজতর করার জন্য সম্প্রতি ফেসবুক, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বারাক ওবামার ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!