দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ ত্যাগের মহিমায় সোমবার পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী পশু কোরবানির মাধ্যমে এ ঈদ পালন করে থাকেন সারা বিশ্বের মোসলমানরা। বিধান রয়েছে, কোরবানি দেয়া পশুর মাংসের একটা অংশ বিলি করতে হবে সমাজের দরিদ্রদের মাঝে। অর্থের অভাবে সারা বছর যারা মাংস কিনে খেতে পারেন না কোরবানির মাংস তাদের এই অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করবে।
যারা কোরবানি দিয়েছেন তারা মাংসের একটা অংশ দান করেছেন দরিদ্রদের মাঝে। তবে দান করা এই মাংসের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে রাজধানীর হোটেলগুলোতে। ঈদের পর রাজধানী যখন আবার তার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পাবে তখন এই মাংসগুলোই খাবার হিসেবে পরিবেশিত হবে বিভিন্ন হোটেলে। চড়া দামে সেগুলো কিনে খাবেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা।
সোমবার ঈদের দিন বিকেল থেকেই দেখা যায় সংগ্রহ করা মাংস বিক্রির জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসেছেন অনেকে। ওই সময় রাজধানীর হোটেলগুলো বন্ধ থাকলেও অস্থায়ী ওই মাংসের বাজারগুলোতে সক্রিয় ছিলেন হোটেলের কর্মচারীরা। কোরবানির মাংস কম দামে কিনে নেয়ার জন্যই ঈদের ছুটি পাননি বা নেননি ওই কর্মচারীরা। এছাড়া এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মৌসুমি মিসকিনরাও। যারা মূলত ওইসব হোটেলের কর্মচারীদেরই পরিচিতজন।ঘটনাক্রমে এমন হয়ে যাওয়াটাও অসম্ভব নয় যে, রহিম (কাল্পনিক চরিত্র) তার কোরবানি দেয়া পশুর যে মাংসটি কোনো এক দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করেছিলেন সেই মাংসটিই তিনি আবার হোটেল থেকে কিনে খেলেন।
এমন কয়েকজন হোটেল কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের ঈদে জনপ্রতি এক মণ থেকে ৪ মণ মাংস সংগ্রহ করেছেন তারা। সংগ্রহ করা এসব মাংস রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে প্রতিকেজি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এ মাংস হোটেলগুলোতে মজুদ করে রাখা হচ্ছে। ছুটির পর অফিস-আদালত খুলে গেলে এগুলো দিয়েই চলবে রমরমা বাণিজ্য।
হানিফ, সাব্বির, সুমন, হাবু, বাদশা- এরা রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলের কর্মচারী। রাজধানীর মুগদাপাড়ায় থাকেন তারা। এরা জানান, এবারের কুরবানীর ঈদে তারা প্রত্যেকে ৩ থেকে ৪ মণ মাংস সংগ্রহ করেছেন। প্রতিমণ মাংস ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এসব মাংস তারা হোটেলে বিক্রি করেছেন বলেও জানান।
কোন হোটেলে মাংস বিক্রি করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এই যুবকরা।
তবে নাম প্রকাশ করে দেন সোহাগ নামে একজন। তিনিও একটি হোটেলের কর্মচারী। সোহাগ বলেন, ‘আমি সায়েদাবাদের হাজী ক্যাফে হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরায় কাজ করি। ঈদের আগের দিন রাতে মালিক আমাকে বললেন, ঈদের দিন যা মাংস পামু তা হোটেলে দিয়ে দিতে। সে অনুযায়ী আমি প্রায় ৩৫ কেজি মাংস হোটেলে দিয়েছি। মালিক আমাকে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন।’
অভিযোগের সত্যতা জানতে সায়েদাবাদ হাজী ক্যাফে হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরার মালিক হাজী আলমাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হোটেলে বয়রা মেসে থাকে। তারা ঈদের দিন মাংস এনে আমাদের ফ্রিজে রেখেছে। আবার তারা নিয়ে যাবে।’
যাত্রাবাড়ী গ্রামীণ হোটেলে কাজ করেন কুদ্দুস। কুদ্দুস জানান, তার হোটেলের মালিকও ঈদের আগে তাকে মাংস সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে গতবছরের কোরবানির ঈদের মাংস সংগ্রহ করে দেয়ার পর তাকে ন্যায্য মূল্য না দেয়ায় এবার তিনি মালিকের নির্দেশ পালন করছেন না।
মুগদা এলাকার ভাত-ব্যবসায়ী আকবর। আকবার বললেন, ‘আমরা ছোট ব্যবসা করি, ভাত বেচি। মতিঝিলে বিভিন্ন অফিসে প্রতিদিন ৩০০ বাটি খাবার দেই। প্রতিবাটি খাবার ৫০ টাকায় বেচতে হয়। প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে তরকারির বিভিন্ন আইটেম দিতে হয়। কোরবানির ঈদে বড়লোকরা গরীবদের মাংস দেয়। সেটা কম দামে কিনে সংগ্রহ করি। মাংস তো আর খারাপ না। দোকানে যে মাংস ৩০০ টাকা কেজি তা আমি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কিনেছি। এই ঈদে ৫ মণ মাংস সংগ্রহ করে ডিপ ফ্রিজে রেখেছি। আশা করি দীর্ঘদিন মাংস কিনতে হবে না।’