‘তেল রপ্তানীর পর সৌদি সরকারের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত হচ্ছে হজের আয়োজন। আমরা সবাই জানি, এক সময় সৌদি আরবে তেলের বাণিজ্য শেষ হয়ে যাবে। একারণে, আয়ের উৎস হিসেবে সৌদিরা হজকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর সাথে অনেক ব্যবসায় জড়িয়ে আছে’।
সৌদি আরবের হজ আয়োজন নিয়ে এই বিশ্লেষণটি হাজির করেছেন পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ জিয়াউদ্দিন সরদার। জিয়াউদ্দিন সরদারের এই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় সৌদি আরবের আল কোরাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মারজুকের হিসাবে। তার মতে, চলতি বছর হজ থেকে কমপক্ষে ১৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ একশত চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। আর তেল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২১৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর হজে সৌদি সরকারের আয়ের পরিমাণ বাংলাদেশের পুরো পোশাক শিল্পের এক বছরের আয়ের পরিমাণের কাছাকাছি।
একই রকম একটি পরিস্থিতির ঈঙ্গিত দিয়েছেন সৌদি ভিত্তিক একটি হজ ও উমরাহ সেবা কোম্পানির ম্যানাজার। তিনি বলেন, হাজীরা হচ্ছে সোনার খনি। তারা হজ করতে এলে সৌদি আরবে পণ্য বেচা-কেনার পরিমাণ বেড়ে যায়। মূলতঃ সৌদি আরবে হাজীরা নানান রকমের উপহার সমগ্রী কেনেন। এই উপহার বেঁচা-কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় হাজীদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ওপর।
কেবল উপহার সামগ্রী বিক্রয় নয়, হাজীদের কেন্দ্র করে আরও বড় ব্যবসায়ের আশা করছে সৌদি সরকার। দেশটির সরকার প্রত্যাশা করছে, নিম্ন-মাঝারি আয়ের হাজীদের পাশাপাশি ধনী মুসলমানরাও সৌদি আরবে হজ করতে আসবেন। এই ধনী হাজিদের জন্য মক্কা ও মদিনায় বড় বড় অত্যাধুনিক বিপণি বিতান নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, নির্মাণ করা হয়েছে বিলাসবহুল হোটেল-মোটেল। এইভাবে ধনী হাজীদের আকৃষ্ট করে সৌদি সরকার নিজেদের আয় বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
চলতি বছর অক্টোবরের দুই থেকে সাত তারিখের মধ্যে হজ সম্পন্ন হয়ে গেলেও, হাজীরা সাধারণত আরও দীর্ঘ সময় মক্কাসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে অবস্থান করেন। এই সময় হোটেল ভাড়া, যাতায়ত ভাড়াসহ নানান খাতে হাজিরা কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেন। এই খরচ থেকে নিজেদের আয় তুলে নেন সৌদি আরবের ব্যবসায়ী ও হাজিরা।
২০১৩ সালে সৌদি আরবের হজের এই অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে একটি গবেষণা করে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডসের গবেষক সন ম্যাকলগিন। তিনি দেখান, ১৯৫০ সালের দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজিদের সৌদি আরবে যাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। সে সময় সৌদি আরবে বছরে সর্বোচ্চ একলাখ হাজি হজ করতে যেতেন। ষাট বছরের ব্যবধানে হাজির পরিমাণ বেড়েছে ত্রিশগুণ। অধিক সংখ্যক হাজিদের জায়গা দেওয়ার জন্য মক্কা-মদিনার অবকাঠামগত ব্যাপক পরিবর্তন করতে হয়েছে। গত শতকের সত্তরের দশকে তেল রপ্তানি থেকে আয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকলে, সৌদি সরকার হজ আয়োজনে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করে।
গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়, সৌদি রাজপরিবার নিজ দেশের অর্থনীতিকে কেবল তেল রপ্তানি নির্ভর রাখতে চায় না। তারা আয়ের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরী করতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে সৌদি সরকার হজে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।