DMCA.com Protection Status
title="৭

এভাবে ঢালাও ভাবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাকাল ফল’:আসিফ নজরুল

1413298747পাসের হারে কোয়ালিটি বাড়েনি, বেড়েছে কোয়ান্টিটি। কমে গেছে শিক্ষার মান। এতে করে হাজার হাজার জিপিএ-৫ দিয়ে হাজার হাজার ‘মাকাল ফল’ তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাবির শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বোর্ডভিত্তিক পরীক্ষার পরিবর্তে বিদ্যালয়ভিত্তিক পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলু-পটোলের ব্যবসায় পরিণত হবে বলেও মন্তব্য করেছেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রসঙ্গত, মাকাল ফল হচ্ছে ‘নিষ্ফল’। এর কোনো কার্যকারিতা নেই। শুধু শোভাবর্ধনকারী।

 

শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মতামত দেন বক্তারা। জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশের শিক্ষার বর্তমান হালচাল’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাবেক বিচারপতি ও শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আলোচনায় অংশ নেন।



তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আলোচনায় শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।



বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলু-পটোলের ব্যবসায় পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্য অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক। এখন ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর কিছুদিন পর এটা আলু-পটোলের ব্যবসার মতো হয়ে যাবে। আমরা রাজনৈতিক কর্মীরা ফায়দা নীতি তৈরি করছি। তাই রাজনৈতিক কর্মীদের সচেতন হওয়া দরকার। তিনি বলেন, এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয় না।

ভোটার নিয়োগ করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের জন্য গণহারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া ঠিক নয়। সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অংশ নেয়া বন্ধ করা উচিত বলে তিনি জানান। তার মতে দেশে এখন শিক্ষাব্যবস্থা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ফলে দিন দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে না।



বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য আবদুল মতিন পাটওয়ারী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতি করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেডিংয়ের নম্বর বিভাজনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুকরণ করা হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা দরকার। একই সঙ্গে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় যে অরাজকতা চলছে, তা দেশের সামগ্রিক অরাজকতার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষক যদি নিবেদিতপ্রাণ না হন, তবে এসব চলতেই থাকবে।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, এ সরকারের আমলে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ ভালো কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু হাজার হাজার জিপিএ-৫ দিয়ে হাজার হাজার ‘মাকাল ফল’ তৈরি করা হচ্ছে। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ‘বাস্তবসম্মত না কৃত্রিম’ তা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আছে। এ সন্দেহ দূর করা উচিত। 



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আলোচনায় অংশ নেয়া আরও কয়েকজন আলোচক বোর্ডের পরীক্ষার পরিবর্তে বিদ্যালয়ভিত্তিক পরীক্ষা চালু করার পরামর্শ দেন।



বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, শিক্ষা সচিব হিসেবে নন, ব্যক্তিগতভাবে তিনিও মনে করেন ওই পরীক্ষাগুলো বিদ্যালয়ভিত্তিক হওয়া উচিত। পরীক্ষায় যদি পুলিশ লাগে, তাহলে বুঝতে হবে কিছু সমস্যা আছে। শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘যে কোনো বিষয়ে আমাদের দেশে বিদেশিদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে দেশে কেবল জিপিএ প্রাপ্তির হার বাড়েনি, আগের তুলনায় শিক্ষার্থী বেড়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় বিশেষ উদ্দেশ্যে। তা হলো অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বাতিল করে সীমিত শিক্ষার্থী নেয়ার জন্য।

তিনি বলেন, সবকিছুই বেশি খারাপ করে বর্ণনা করলে আমরা হতাশ হব। কারণ এখনকার চেয়ে আগে শিক্ষার মান ভালো ছিল না। অনেকেই আছেন যারা সহজ বানানও পারেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার নানা সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই মুখ্য। তিনি বলেন, বিনামূল্যে বই বিতরণ করায় গত দশ বছরে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী বেড়েছে। আর পরীক্ষায় অতিরিক্ত নম্বর দেয়া হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।



এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ শরীফা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, চিত্রনায়ক ও সুজন সদস্য ইলিয়াস কাঞ্চনসহ অনেকে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!